শবে কদরের ফজিলত ও আমল

শবে কদরের ফজিলত ও আমল | শবে কদরের ফজিলত


শবে কদর অর্থ 


কদর' শব্দের অর্থ পরিমাণ নির্ধারণ ও হুকুম। যেহেতু এ রাতে সৃষ্টিকুলের ভাগ্যলিপিতে নির্ধারিত অংশের যেটুকু এ রমজান থেকে পরবর্তী রমজান পর্যন্ত বাস্তবায়নযোগ্য, তা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আদিষ্ট ফেরেশতাদের কাছে স্থানান্তর করা হয়। তাই এই রাতের নামকরণ করা হয় 'লাইলাতুল কদর'। আবার কদর শব্দের আরেকটি অর্থ হলো- সম্মান, মাহাত্ম্য। 


আবু বকর ওয়াররাক (রহ.) বলেন, এই রাতের নাম 'কদরের রাত' এ জন্য বলা হয়েছে যে এ রাতের মর্যাদা ও মাহাত্ম্যপূর্ণ কিতাব আল কোরআন মর্যাদাবান ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) নিয়ে আসেন সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে।

• শবে কদর :

 ১) শবে কদরে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে:


আল্লাহ তায়ালা বলেন:

إنا أنزلناه في ليلة القدر

“আমি একে (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি শবে কদরে।” (সূরা কাদর: ১)


২) শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম: আল্লাহ বলেন :

শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সূরা কাদর: ৩)


৩) আল্লাহ তায়ালা শবে কদরকে বরকতময় রাত বলে উল্লেখ করেছেন:


আল্লাহ তায়ালা বলেন:

إنا أنزلناه في ليلة مباركة


“নিশ্চয় আমি ইহা (কুরআন)কে অবর্তীর্ণ করেছি একটি বরকতময় রাতে।” (সূরা দুখান: ৩) (আর এ রাত হল শবে কদর।)



৪) শবে কদরে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করলে পূর্বের সকল ছোট গুনাহ মোচন হয়ে যায়:


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:


من قام ليلة القدر إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه


“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোয়াবের আশায় শবে কদরে রাত জাগরণ করে নফল নামায ও ইবাদত বন্দেগী করবে তার পূর্বের সকল (ছোট) গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে ।


শবে কদর  আরবিতে লাইলাতুল কদর।এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। | আরবি ভাষায় 'লাইলাতুল' অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং 'কদর' শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো – ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা।


[১] ইসলাম ধর্ম অনুসারে, এ রাতে ইসলামের মহানবী, মুহাম্মদের অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত হিসেবে পরিগণিত। কুরানের বর্ননা অনুসারে, আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর উপাসনা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।


এই রমজান মাসের একটি রাত্র হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর।


যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। ক্বদরের রাত্রের ফযিলত ও মহাত্ম সম্পর্কে কুরআনুল করিমে সূরাতুল ক্বদর নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়েছে। অর্থঃ


(১) নিশ্চয়ই আমি একে (পবিত্র কুরআনকে) নাযিল করেছি শবে ক্বদরে।


(২) শবে ক্বদর সম্বন্ধে আপনি কী জানেন?


(৩) শবে ক্বদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।


(৪) এই রাত্রিতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।


(৫) এটা নিরাপত্তা যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সুরা | ক্বদর)


লাইলাতুল কদরের ফজিলত :

এ রাত হাজার মাস থেকে উত্তম ও কল্যাণময় (কুরআন)। এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে (কুরআন)। এ রাতে ফেরেশতা নাজিল হয় এবং আবেদ বান্দাহদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। ফজর পর্যন্ত এ রাতে পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার (কুরআন)। এ রাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফায়সালা জারি করা হয় (কুরাআন)। এ রাতে ইবাদতে | মশগুল বান্দাহদের জন্য অবতরণকৃত ফেরেশতারা দোয়া করেন (হাদিস)।


গুনাহ মাফ:

যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে' (বুখারি ও মুসলিম)। এ রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)।


কিয়ামুল লাইল :

কিয়ামুল লাইল' অর্থ হলো রাত্রি জাগরণ। মহান আল্লাহর জন্য আরামের ঘুম স্বেচ্ছায় হারাম করে রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের একটি গুণ। মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- 'তারা রাত্রি যাপন করে রবের উদ্দেশে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে থেকে' (সূরা ফুরকান : ৬৪)।


‘তাদের পার্শ দেশ বিছানা থেকে পৃথক থাকে (অর্থাৎ তারা শয্যা [ গ্রহণ করে না ; বরং এবাদতে মশগুল থাকে)। তারা গজবের ভয়ে | এবং রহমতের আশায় তাদের রবকে ডাকতে থাকে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করে থাকে। কেউ জানে না। তাদের আমালের পুরস্কারস্বরূপ (আখিরাতে) তাদের জন্য কী জিনিস | গোপনে রাখা হয়েছে' (সূরা সিজদা : ১৬-১৭)।


আল্লাহর প্রিয় বান্দাহরা গোটা জীবনই এভাবে কাটান। আমাদের সে জীবনে প্রবেশ করতে হলে দরকার অধ্যবসায়। পবিত্ৰ রমজান, বিশেষ করে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা | আমাদের ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে। মুসনাদে | আহমেদ গ্রন্থে হজরত ওবায়দা ইবনে সামেত বর্ণিত হাসিসে | উদ্ধৃত হয়েছে- 'নবী করিম সা: বলেছেন- ‘কদরের রাত রমজান মাসের শেষ দশ রাতে রয়েছে। যে ব্যক্তি এর শুভফল লাভের | উদ্দেশ্যে ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, আল্লাহ তার আগের ও পেছনের গুনাহ মাফ করে দেবেন।'


রাসূল সা: রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে ইতেকাফে থাকতেন এবং ইবাদতে গভীর মনোনিবেশ করতেন।


কাজেই আমরা কোনো একটা বিশেষ রাতকে নির্দিষ্ট না করে হাদিস অনুযায়ী অন্তত রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য লাভের আশায় ইবাদতে মশগুল হই। আমরা এতে অবহেলা করলে হাদিসের ভাষায় হতভাগ্য হিসেবে চিহ্নিত হবো। রাসূল সা: বলেন- ‘যে ব্যক্তি এ রাত থেকে বঞ্চিত হবে সে সমগ্র কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত হবে। এর কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না' (মিশকাত)।


শবে কদরের আমল

ক. নফল নামাজ

  • [১] তাহিয়্যাতুল অজু,
  • [২] দুখুলিল মাসজিদ,
  • [৩] আউওয়াবিন,
  • [৪] তাহাজ্জুদ,
  • [৫] সালাতুত তাসবিহ
  • [৬] তাওবার নামাজ,
  • [৭] সালাতুল হাজাত,
  • [৮] সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া।


খ. নামাজে কিরাত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা।


গ. কোরআন শরিফ

  • [১] সুরা কদর,
  • [২] সুরা দুখান,
  • [৩] সুরা মুয্যাম্মিল,
  • [৪] সুরা মুদ্দাচ্ছির, 
  • [৫] ইয়া-সিন,
  • [৬] সুরা ত-হা,
  • [৭] সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা;


ঘ. দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া;

ঙ. তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা;

চ. দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করা;

ছ. কবর জিয়ারত করা;

জ. নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা।


আরও পড়ুন, 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন