অযুর নিয়ত | অযুর দোয়া | অযু করার নিয়ম

অযুর নিয়ত | অযুর দোয়া | অযু করার নিয়ম


ওযুর নিয়ত


অযুর নিয়ত যে কোন নিয়তের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, মনের ইচ্ছা। আর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোন কাজ করার সংকল্প করা। নিয়ত মনের কাজ, মুখের কাজ নয়। যে কোন ভাষায়ই নিয়ত করা যায়। আরবীতে নিয়ত করতে চাইলে এভাবে করা যায়। 

نويت أن أتـوضـالـرفـع الـحـدث واستباحة للصلوة وتقرب إلى الله تعالى


উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আতাওয়াদ্দাআ লিরাফয়িল হাদাসি ওয়া ইসতিবাহাতাল লিচ্ছালাতি ওয়া তাকাররুবান ইলাল্লা-হি তাআলা ।


বাংলা অর্থ 

অর্থাৎ, আমি নাপাকী দূর করিবার, শুদ্ধরূপে নামাজ পড়িবার ও আল্লাহ্ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ওজু করিতেছি।

অযুর দোয়া

নিয়তের পর আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ পড়ে নিম্নের দোয়া পাঠ করবে


 بسم الله العلي العظيم والحمد لله على دين الإسلام الإسلام نور والكفر ظلمة الإسلام حي والكفر باطل * *


আঁধার ; অর্থঃ “মহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহর নামে শুরু করছি। সকল প্রশংসাই একমাত্র তাঁরই জন্য যিনি (আমাকে) ইসলামের ওপর রেখেছেন। ইসলাম আলো, কুফর কৃষ্ণর মিথ্যা। ইসলামই সত্য দ্বীন,


মাঝে মাঝে কালেমা শাহাদাত; দুরূদ শরীফ ও নিম্নের দোয়া পাঠ করবে :


اللهم اغفر لي ذنبي ووسع لي في داري وبارك لي في رزقي .

উচ্চারণঃআল্লাহুম্মাগ ফিরলি জাম্বি ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিকলি ফি রিজকি।


অর্থ : 'হে আল্লাহ আমার পাপ মার্জনা করে দাও, আমার বাসস্থান প্রশস্ত ও শান্তিময় করে দাও, এবং আমার রোজগারে বরকত দান কর।

ওযু শেষ করার পর পড়ার দোয়া


হযরত ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করবে, অতঃপর কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য বেহেশতের ৮ (আট)-টি দরজাই খুলে দেয়া হবে, সে তাদের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।

اشهد ان لا إله إلا الله وحده لاشريك له وأشهد ان محمدا عبده

ورسوله ، اللهم اجعلني من التوابين واجعلني من المتطهرين *


উচ্চারণ ঃ আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু- লা-শারীকা লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ'বদুহু ওয়া রাসূলুহু । আল্লা-হুম্মাজ আলনী মিনাত্তাওয়্যাবীনা ওয়াজ আলনী মিনাল মুতাতাহিরীন ।


অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর এবং উত্তম পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর। (মুসলিম, তিরমিযী)

অযু করার নিয়ম

ওজুর সুন্নসমূহ


১। ওজুর নিয়ত করা। নিয়ত এই—

نويت أن أتوضاً لرفع الحدث واستباحة للصلوة وتقرب إلى الله تعالى :



উচ্চারণ— নাওয়াইতু আন্ আতাওয়াদ্দায়া লিরাইল হাদাসি ওয়াইস্তি- বাহাতাল লিছ ছালাতি ওয়া তাকারোবান্ ইলাল্লাহি তায়ালা।

 অর্থাৎ, আমি নাপাকী দূর করিবার, শুদ্ধরূপে নামাজ পড়িবার ও আল্লাহ্ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ওজু করিতেছি। 

২. ওজু আরম্ভ করিবার সময় 'বিসমিল্লাহ' পড়া।

৩. দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।

৪. মেসওয়াক বা দাঁতন দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করা।

৫. প্রত্যেক বারে নূতন পানি লইয়া তিনবার কুলি করা ।

৬. রোজাদার না হলে কুলিতে গড়গড়া করা।

৭. প্রত্যেক বারে নূতন পানি লইয়া তিনবার নাক পরিষ্কার করা ।

অযু করার সুন্নত তরীকা


ওযু করার নিয়ম।ওযূর প্রারম্ভে আল্লাহ্র দিকে মনকে রুজু করবে। চিন্তা করে ঠিক করতে হবে কেন ওযু করা হচ্ছে, যথা- হয়ত নামায় আদায়ের জন্য ওযূ করবে- তখন চিন্তা করবে, নামায আদায় করা হলো। আল্লাহ্র দরবারে হাযির হওয়া। আল্লাহ্র দরবার পবিত্র, সে দরবারে বিনা ওযূতে প্রবেশ করা যায় না। তাই আমি নামায পড়ার অর্থাৎ আল্লাহ পাকের সমীপে উপস্থিত হওয়ার জন্য ওযূ করছি। এভাবে যদি কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের জন্যে ওযূ করা হয়, তখন একাগ্র মনে চিন্তা করবে, আমি আল্লাহর পবিত্র কালাম কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের জন্য ওযূ করছি।


কাবার দিকে মুখ করে একটু উঁচু স্থানে বসবে যেন ওযূর পানির ছিটা নিজের শরীরে আসতে না পারে। (মুনিয়া)


বিসমিল্লাহ্ বলে ওযূ আরম্ভ করবে। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া) সর্বপ্রথমে দু'হাতের কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে। (ফাতাঃ হিন্দিয়া)


এর পর তিনবার কুলি করবে এবং মিসওয়াক করবে, মিসওয়াকের অভাবে মোটা কাপড় অথবা হাতের অঙ্গুলি বা অন্য কিছু দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করবে। রোযা না হলে গরগরা করে ভালরূপে মুখগহ্বরে পানি পৌঁছাবে। রোযা অবস্থায় গরগরা করবে না। কারণ, এতে হয়ত কিছু পানি গলার ভেতর চলে যেতে পারে। (আলমগীরী)


অতঃপর তিন বার নাকে পানি দেবে। বাম হস্ত দ্বারা নাক পরিষ্কার করবে। রোযা অবস্থায় নাকের ভেতরে নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌঁছাবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)


এরপর তিন বার কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনি পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত মুখমণ্ডল ভাল করে দু হাত দ্বারা মলে ধৌত করবে যেন সব স্থানে পানি পৌঁছে। উভয় ভ্রূর গোড়ায়ও খেয়াল করে পানি পৌঁছাবে, যেন কোন স্থান শুষ্ক না থাকে। (মারাকিউল ফালাহ )


তারপর ডান হাতের কনুইসহ ভাল করে তিন বার ধৌত করবে অতঃপর বাম হস্ত ও তদরূপ কনুইসহ ধুৰে । এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলের ভেতর ঢুকিয়ে খেলাল করবে। হাতে আংটি, চুড়ি ইত্যাদি থাকলে নেড়েচেড়ে উত্তমরূপে পানি পৌঁছাবে, যেন একটি পশমও শুকনা না থাকে। (কবীরী, মুনিয়া)


এরপর সমস্ত মাথা একবার মাছহে করবে। শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা কানের ভেতরে ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা বাইরের দিক মাছহে করবে এবং হাতের অঙ্গুলির পিঠ দ্বারা ঘাড় মাছহে করবে, কিন্তু গলা মাছছে করবে না। কারণ, গলা মাছহে করা ভাল নয়; বরং নিষেধ আছে। কান ও মাথা মাছহে করার জন্য নতুন পানি নেয়ার প্রয়োজন নেই, ভেজা হাত দ্বারাই মাছহে করবে। (কবীরী, মুনিয়া)


তারপর তিন বার টাখনুসহ উভয় পা ধৌত করবে। প্রথমে ডান পা এবং পরে বাম পা উত্তমরূপে ডলে মলে ধুবে। পায়ের তলা এবং গোড়ালির দিকে খুব খেয়াল করে ধুবে, যেন কোন অংশ শুষ্ক থেকে না যায়। বাম হস্তের কনিষ্ঠাঙ্গুলি নীচের দিক থেকে প্রবেশ করিয়ে পায়ের আঙ্গুলগুলো খেলাল করবে। ডান পায়ের কনিষ্ঠা অঙ্গুলি হতে আরম্ভ করে বাম পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলে গিয়ে শেষ করবে।


ওযূতে যে চারটি অঙ্গ ধৌত করা ফরয সেগুলো ধৌত হয়ে গেলে ওযূ হয়ে যাবে। ইচ্ছা করে ধৌত করুক বা অনিচ্ছায় ধৌত করুক, নিয়ত করুক বা না করুক। যেমন- গোসলের সময় ওযূ ব্যতীত সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে দিলে বা পুকুরে পড়ে গেলে বা বৃষ্টিতে ভিজলে, এ চারটি অঙ্গ পূর্ণরূপে ধোয়া হয়ে গেলে ওযূ হয়ে যাবে, কিন্তু নিয়ত না করার দরুন ওযূর সওয়াব পাবে না। (মুনিয়া)


ওযূ উল্লিখিত তরতীব অনুসারে করাই সুন্নত, কিন্তু যদি কেউ তার ব্যতিক্রম করে, যেমন, প্রথমে পা ধৌত করলো, এরপর মাথা মাসাহ করল অতঃপর হাত বা অন্য কোন অঙ্গ আগে পরে ধৌত করলো, তবুও ওযূ শুদ্ধ হবে, কিন্তু সুন্নতের খেলাফ হবে। এতে গুনাহর আশঙ্কা আছে ; অর্থাৎ, এ রকম উল্টা ওযূ করলে গুনাহ্ হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)


যদি বাম পা বা বাম হাত আগে ধৌত করে তবুও ওযূ হয়ে যাবে, কিন্তু মুস্তাহাবের খেলাফ হবে। (মারাকী) এক অঙ্গ ধুয়ে অন্য অঙ্গ ধুতে এতটুকু দেরী করা ঠিক নয় যাতে দ্বিতীয় অঙ্গ ধুতে ধুতে প্রথম


অঙ্গ শুকিয়ে যায়। এরূপ দেরী করলে ওযূ হয়ে যাবে, কিন্তু সুন্নতের খেলাফ হবে। (আলমগীরী) প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় হাত দ্বারা ঘষে মেজে ধৌত করাও সুন্নত, যেন কোন স্থান শুষ্ক না থাকে (শীতকালে ডলে ধোয়ার বেশি প্রয়োজন; কারণ, তখন ওযূর অঙ্গগুলোর কোন স্থান শুকনা থাকার বেশি আশঙ্কা থাকে।) (মারাকী)


নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই ওযূ করে নামাযের আয়োজন করা এবং নামাযের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা ভাল এবং মুস্তাহাব। (মারাকী)


বিশেষ কোন কারণ ব্যতীত নিজের হাতেই ওযূ করবে, অন্যকে দিয়ে পানি ঢালবে না। ওযূর সময় অনাবশ্যক দুনিয়াবী কথা বলবে না ; বরং প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় বিসমিল্লাহ্ এবং কলেমা পড়বে। পানি যত বেশিই থাকুক না কেন, এমন কি নদীতে ওযূ করলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ করবে না : আবার এত কমও খরচ করবে না যাতে অঙ্গগুলো উত্তমরূপে ধুতে কষ্ট হয় । কোন অঙ্গ তিন বারের অধিক ধুবে না। মুখ ধোয়ার সময় বেশি জোরে মুখে পানির ঝাপটা মারবে না, ফুঁক দিয়ে পানি উড়াবে না, মুখ এবং চোখ অতি জোরে বন্ধ করবে না। কেননা, তাতে ওযূই হবে না। (কবীরী)


আংটি, চুড়ি, বালা যদি এমন ঢিলা হয় যে, সহজেই ওর নীচে পানি পৌঁছতে পারে, তবুও সেগুলো নাড়িয়ে উত্তমরূপে খেলাল করে নীচে পানি প্রবেশ করানো মুস্তাহাব। কিন্তু যদি ঢিলা না হয় এবং পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থাকে, তবে সেগুলো উত্তমরূপে নেড়েচেড়ে নীচে পানি প্রবেশ করানো ওয়াজিব। নাকের নথ চুঙ্গির জন্যও এ হুকুম। যদি ছিদ্র ঢিলা হয় তবে নেড়ে পানি প্রবেশ করানো মুস্তাহাব ; আর যদি ছিদ্র আঁটা হয়, তবে মুখ ধোয়ার সময় নথ, বালি ভালভাবে ঘুরিয়ে পানি প্রবেশ করানো ওয়াজিব।


নখের ভেতরে আটা জমে (অথবা কোন জায়গায় চুন ইত্যাদি) শুকিয়ে থাকলে ওযূর সময় তার নীচে পানি না প্রবেশ করলে ওযূ হবে না, যখন মনে আসে এবং আটা দেখে, তখন আটা (চুন ইত্যাদি) ছাড়িয়ে সেখানে পানি ঢেলে দেবে (সম্পূর্ণ ওযূ পুনরায় করতে হবে না। পানি ঢালার পূর্বে নামায পড়ে থাকলে সে নামায পুনরায় পড়তে হবে। - (গুন্‌ইয়া)


কপালে ও মাথায় আফশান (নখে নখ-পালিশ) ব্যবহার করলে তা উঠিয়ে ধৌত করতে হবে, অন্যথায় ওযূ গোসল কিছুই হবে না।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন