তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম আমরা অনেকেই জানি না।আবার অনেকেও জেনেও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে না।আজকে আমরা আলোচনা করবো তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মতাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে। 


তাহাজ্জুদ নামাজ |তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত


তাহাজ্জুদ নামাযের বিবরণ

তাহাজ্জুদ নামাজ প্রকাশ্যে না পড়ে নির্জনে আদায় করলে অধিক সওয়ার হয়। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নামাযকে ফরয নামাযের মত গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। কোন দিন তরক করেন নি। ওখরবশতঃ কোন দিন পড়া না হলে ফরয নামাযের মত তিনি তার কাযা আদায় করতেন।


তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল

ওলামায়ে কেরামের মতে, তাহাজ্জুদ নামাজ নামায হলো নফল ইবাদত।তাহাজ্জুদ নামাজ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর একটি ব্যক্তিগত খাস ফরয ছিল। কাজেই তিনি এই নামাযের প্রতি এ রকম গুরুত্ব দিতেন। অবশ্য রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতগণের প্রতি তা ফরজ ছিল ওয়াজিব নয়। এই কথার দলীলস্বরূপ কোরআন পাকের নিম্নোক্ত আয়াত উল্লেখ করা যায়। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে এরশাদ করেছেন :


لتهجد به نافلة لك


উচ্চারণ : ফাতাহাজ্জাদ বিহী নাফিলাতাল লাকা।


অর্থ : হে নবী (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি রাত থাকতে উঠে তেলাওয়াতের দ্বারা তাহাজ্জুদ আদায় করুন । ইহা আপনার জন্যই অতিরিক্ত করা হয়েছে।

তাহাজ্জুদ নামাযের ফযীলত


তাহাজ্জুদ নামাযকে সিরাজুল কুবুর নামেও আখ্যায়িত করা হয়। সিরাজুল কুবুর অর্থ কবরের বাতি। এই নামকরণের কারণ, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, তাহাজ্জুদ নামায আদায়কারীদের কবর ৭০ গজ প্রশস্ত এবং সর্বদা আলোকিত থাকে।


রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা রাতের নামায অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামায আদায় কর। কেননা, ইহা নেককার বান্দার তরীকা । রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ফরয নামাযের পর রাতের


মধ্যভাগে তাহাজ্জুদ নামাযই হল ফযীলতের নামায । অর্থাৎ, রাতে ফরয নামাযের পরে অন্যান্য যাবতীয় নামাযের মধ্যে ফযীলতের দিক হতে তাহাজ্জুদ নামাযই শ্রেষ্ঠ।


তাহাজ্জুদ নামাযের সময়

তাহাজ্জুদ নামাযের ওয়াক্ত রাত দ্বিপ্রহরের পর হতেই শুরু হয় এবং সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত স্থায়ী থাকে ।


তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত

ওলামায়ে কেরামগণ এ নামাযের রাকআতের ব্যাপারে একমত নন। এর কারণ রেওয়ায়েতের বিভিন্নতা। কোন কোন রেওয়ায়েতে এ নামায় চার রাকআত, কোন কোন রেওয়ায়েতে আট রাকআত, কোন কোন রেওয়ায়েতে বার রাকআত পর্যন্ত দেখা যায়।


তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ


ول الله تعالى رسون تولت أن أصلي لله تعالى ركعتي صلوة التهجد منه متوجها إلى جهة الكعبة الشريعة الله اكبر *


বাংলা নিয়ত : আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলামূখী হইয়া দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের সুন্নাত নামায আদায়ের নিয়ত করিলাম আল্লাহু আকবার।


তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম 

দুই দুই রাকআতে নিয়ত করাই উত্তম। ইহাতে সূরা কেরাআত পড়া সম্পর্কে কয়েক রকম অভিমত আছে । কোন কোন বুযুর্গ এর প্রথম রাকআতে সূরা ফাতেহার পর সূরা এখলাস ১২ বার, পরবর্তীতে প্রতি রাকআতে ঐ সংখ্যা কমাতে কমাতে একেবারে শেষ রাকআতে মাত্র একবার পাঠ করতেন । 


তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয় কারও কারও মতে এ নামাযের প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে তিনবার সূরা এখলাস পড়ে আলাম নাশরাহলাকা, কেউ কেউ একবার করে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা উত্তম মনে করেন। আবার কেউ কেউ এ নামাযের প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত অর্থাৎ আমানার রাসূলু হতে আ'লাল কাওমিল কাফিরীন পর্যন্ত পড়ে থাকেন ।


বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত আছে যে, পূর্ববর্তী বুযুর্গ ও মাশায়েখগণ এই নামাযের প্রতি রাকআতে সূরা মুযযাম্মিল পাঠ করতেন। ওলামায়ে কেরামের কেউ কেউ এরূপ মত প্রকাশ করেন যে, তাহাজ্জুদের বার রাকআত নামাযে অন্যূন একশত হতে দুই শত আয়াত কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত।


উপরোক্ত নিয়মসমূহ যেহেতু সাধারণ লোকের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়, সুতরাং যে সব সূরা তাদের পক্ষে সহজ তারা সে সব সূরা দ্বারাই এ নামায আদায় করবেন। যারা এই নামায নিয়মিত আদায় করেন তারা এশার নামাযের সাথে বিতর নামায আদায় না করে তাহাজ্জুদ নামাযের পরে তা আদায় করে নিবেন। কারণ, রাতের যে কোন নামাযের মধ্যে বিতর নামায হল সর্বশেষ নামায। এর পরে আর কোন নামায নেই। সুতরাং যত ধরনের সুন্নত ও নফল নামায আছে তা বিতর নামাযের পূর্বেই পড়া উত্তম।


অবশ্য রমযান মাসে এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়। কারণ, তখন তারাবীর নামাযের সাথে বিতর নামায ও জামাআতের সাথে আদায় করতে হয়।


যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামায আদায় করেন না, তারা এশার সাথে সাথে বিতর আদায় করবেন। কারণ, তাহাজ্জুদ নামায পরে আদায় করবে বলে নিদ্রা গেলে হয়ত নিদ্রা ভঙ্গ হল না, তখন তাহাজ্জুদ নামায তরক হলেও তেমন ক্ষতি হয় না, কিন্তু সে সাথে বিতরের ওয়াজিব তরক হয়ে গেলে ভয়ানক গোনাহের কারণ হয়ে দাড়ায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন