শবে কদরের ফজিলত ও এর তাৎপর্য

 শবে কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত 

শবে কদরের ফজিলত ও এর তাৎপর্য
লাইলাতুল কদর 



বছরের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদর। হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত। এ রাতের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ আল কোরআনে 'কদর' নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল করেছেন। ফলে এ রাত গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিক থেকে বছরের অন্যান্য রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। 


লাইলাতুল কদর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ করুণা। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতকে লাইলাতুল কদর দিয়েছেন। যা আগেকার কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি।' কানজুল উম্মাল।


আল কোরআনে আল্লাহ নিজেই লাইলাতুল কদরের শ্রেষ্ঠত্ব ও এর কারণ বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, 'লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।' সুরা কদর, আয়াত ৩। 


লাইলাতুল কদরের বিশেষ মর্যাদার কোরআন বর্ণিত কারণগুলো হলো-

 ১. এ রাতে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। 

২. এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। 

৩. এ রাতে হজরত জিবরাইল (আ.) একদল ফেরেশতাসহ জমিনে অবতরণ করেন। তারা ওইসব লোকের জন্য দোয়া করতে থাকেন যারা রাত জেগে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে।


লাইলাতুল কদর কোরআন নাজিলের রাত। কোরআন নাজিলের কারণেই এ রাতের মর্যাদা এত বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, 'আল্লাহ প্রথম আসমানের বায়তুল ইজ্জাহ বা বায়তুল ইজ্জতে (প্রথম আকাশে ফেরেশতাদের ইবাদতের ঘর) পুরো


 কোরআন মজিদ একসঙ্গে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেন। তারপর সেখান থেকে সময় ও প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে অল্প অল্প করে ২৩ বছরে তা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ করা হয়।' তাফসিরে ইবনে কাসির।


লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। লাইলাতুল কদরের মাধ্যমে কম হায়াত পেয়েও বেশি হায়াত পাওয়া আগেকার উম্মতের চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী হবে এ উম্মত।মুজাহিদ (র) থেকে বর্নিত,


‘রসুলুল্লাহ (সা.) বনি ইসরাইলের এক আবেদের (ইবাদতকারী) কথা বর্ণনা করলেন। যে সারা রাত ইবাদতে লিপ্ত থাকত। সকাল হলেই আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হতো। এভাবে ১ হাজার মাস ইবাদতে কাটিয়ে দিল। নবীজির এ কথা শুনে উপস্থিত সবাই বিস্মিত হলো।


 আল্লাহ সুরা কদর নাজিল করে জানিয়ে দিলেন, লাইলাতুল কদরের ইবাদত সওয়াবের দিক থেকে বনি ইসরাইলের ওই ব্যক্তির হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।' তাফসিরে ইবনে কাসির।


 হাজার মাস হলো ৮৩ বছর চার মাস। সুতরাং যে ব্যক্তি একটি লাইলাতুর কদর পেল এবং এ রাতে ইবাদত করতে পারল সে অন্য উম্মতদের ৮৩ বছরের বেশি সময়ের ইবাদতের চেয়ে বেশি সওয়াব লাভ করল। এ তো একটি লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির সওয়াব।


 কেউ যদি জীবনে ৫০ বার লাইলাতুল কদর পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে তাহলে সে অন্য উম্মতদের ৪ হাজার ১৬৬ বছর ইবাদতের সমান সওয়াব লাভ করবে। এ রাতে হজরত জিবরাইল (আ.) একদল ফেরেশতাসহ জমিনে নেমে আসেন।


 রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যখন লাইলাতুল কদর উপস্থিত হয় তখন হজরত জিবরাইল একদল ফেরেশতাসহ পৃথিবীতে নেমে আসেন। তাদের সঙ্গে সবুজ রঙের একটা ঝান্ডা থাকে যা কাবার ওপর উড্ডীন করে দিয়ে ফেরেশতারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েন এবং


 আল্লাহর বান্দারা যে যেখানে যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে, বসে, আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে, দোয়া করে তাদের সালাম করে, তাদের সঙ্গে মুসাফাহা করে এবং তাদের দোয়ায় আমিন আমিন বলতে থাকে। (বায়হাকি)। 


আল্লাহর দরবার থেকে গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার এক অবারিত সুযোগ লাইলাতুল কদর। যে ব্যক্তি এ রাতে ইবাদত করবে আল্লাহ তার অতীতের সব (সগিরা) গুনাহ মাফ করে দেবেন। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াব লাভের আশায়


 লাইলাতুল কদর ইবাদতে কাটায় আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।' (বুখারি, মুসলিম)। তওবার মাধ্যমে কবিরা গুনাহও মাফ করিয়ে নেওয়ার অনন্য সুযোগ লাইলাতুল কদর


শবে কদরের দোয়া 


শবে কদরের দোয়া হজরত আম্মাজান আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া ) পড়বো? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে


: اَللهم إنَّكَ عَفُوٌ تُحِبُّ العَفْوَ فَاعْفُ عَنّي


আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।


অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালো বাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।


শবে কদরের নামাজের নিয়ম


রমযানের শেষ দশকের বেজোড় ৫ টি রাত অর্থাৎ ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ রমজানের রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে। মাগরিব নামাযের ফরজ নামায জামাতের সাথে আদায় করতে হবে। তারপর এশার নামাযের আগ পর্যন্ত নফল নামাজ দুই রাকাত করে পড়তে হবে।


এশার সময় হলে এশার নামায জামাতের সাথে আদায় করে, আবার নফল নামায দুই রাকাত করে ফজরের আগ পর্যন্ত পড়া যাবে।শবে কদরের নামাজের কোন নির্দিষ্ট আয়াত সংখ্যা নেই।যার যত ইচ্ছা সে তত রাকাত পড়তে পারবে।


যে যত রাকাত বেশি নামায পড়বে তার তত বেশি সওয়াব লাভ করবে ইনশা আল্লাহ।শবে কদরের রাতে নফল ইবাদতের ফলে তার পূর্ববর্তী জীবনের সমস্ত পাপ মাফ করে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। 


শবে কদর সম্পর্কে হাদিস


শবে কদরের রাতে আমল করা সম্পর্কে হাদিস 

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সাওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল ক্বদ্‌রে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইব্‌নু কাসীর (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

  

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৪

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস



শবে কদর রাত অনুসন্ধান সম্পর্কে হাদিস


‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদ্‌রের অনুসন্ধান কর।

  

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৭

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


শবে কদরের রাত বোঝার সম্পর্কে হাদিস 

আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সঙ্গে রমযানের মধ্যম দশকে ই’তিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমাকে লাইলাতুল কদর (-এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সঙ্গে ই’তিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ হতে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হাল্কা মেঘ খন্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরী মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই।

  

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৬

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

সংগৃহীত


অবশ্যই পড়ুন 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন