ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও ফজিলত

 

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও ফজিলত
ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও ফজিলত 

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও ফজিলত  ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের গুরুত্ব  

বিয়ে করতে উৎসাহিত করে ইসলাম ঘোষণা করেছে বিয়ে না করে বৈরাগী সাজার মধ্যে শান্তি নেই। যার ভরণ-পোষণ দেয়ার সামর্থ আছে, তার জন্য বিয়ে করা ইসলাম বাধ্যতামূলক করেছে। 

বিয়ে করা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য কল্যাণকর। ইসলাম বাস্তববাদী একটি জীবন আদর্শ, বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তিসঙ্গত ধর্ম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাই বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছেন।


আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-"তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্ম পরায়ণ, তাদেরও। 

আর যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দিবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরাহ নূর : ৩২) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাজিঃ) বর্ণনা করেছেন- একদা আমরা রাসূলুল্লাহ


(সাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্যে যার বিয়ে করার সঙ্গতি আছে, তার বিয়ে করা কর্তব্য। কারণ, বিয়ে চক্ষুর দৃষ্টিকে সংযত রাখতে এবং যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত রাখতে বিশেষ সহায়ক হয়। 

 আর যার বিয়ের খরচ ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণের সামর্থ্য নেই, তার কর্তব্য হবে রোযা রেখে যাওয়া। ধারাবাহিক রোযা রাখার দ্বারা তার কাম-রিপুর দমন সাধিত হবে, যৌন উত্তেজনার উপশম হবে।" (সহীহ বুখারী)


হযরত আনাছ (রাজিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-"যে বিয়ে করে, সে তার অর্ধেক ধর্ম বাঁচিয়ে নেয়।" রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-“যে ব্যক্তি সন্তান-সন্ততির ভয়ে বিয়ে করা বর্জন করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।"


বিয়ে করা দ্বারা যিনা-ব্যভিচার প্রভৃতি গুনাহের কাজ থেকে বাঁচা যায়। বিয়ে চক্ষুর দৃষ্টিকে সংযত রাখতে এবং যৌন উত্তেজনা প্রশমিত করতে সহায়ক হয়ে। তাছাড়া বিয়ে করার দ্বারাই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিয়ে করার দ্বারাই পিতা-মাতা হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। পিতা-মাতার দায়িত্ব সম্পাদন, স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য পালন ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


দু'টি বস্তু মানুষের ধর্মকে নষ্ট করে লজ্জাস্থান ও পেট। বিয়ে করলে অর্ধেক ধর্ম রক্ষা হয়। বিয়ের দ্বারা লজ্জাস্থানের হিফাজত হয়। বাকী অর্ধেকপূর্ণ করার জন্য আল্লাহকে ভয় করা উচিত। আল্লাহকে ভয় করে তাঁর দেয়া কামস্পৃহা তার নির্দেশে বৈধ উপায়ে ব্যবহার করলে এর চেয়ে বহুগুণ বেশী কামস্পৃহা বেহেশতে উপভোগ করা যাবে।


বিয়ে না করলে কামস্পৃহা প্রবল হয়। আর এই কামস্পৃহা দমন করার মত শক্তি না থাকলে মানুষ কুকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। যদিও পরহেযগার ব্যক্তি পরহেযগারীর জোরে বাহ্যিক অঙ্গকে কুকর্ম থেকে বিরত রাখতে পারে, যেমন-লজ্জাস্থানকে সংরক্ষিত রাখা, দৃষ্টি অবনত করা ইত্যাদি। তবু অন্তরকে কুমন্ত্রণা ও কুচিন্তা থেকে বাঁচানো তার ক্ষমতার বাইরে থাকে। এমনকি এ অবস্থায় অনেকের ইবাদতেরও একাগ্রতা আসে না। কাজেই মনে কুচিন্তা থাকা খুবই খারাপ। কামস্পৃহার প্রাধান্য একটা ব্যাপক মুসিবত। এসব কারণেই হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাহবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাজিঃ) ইরশাদ করেন-“আবিদের ইবাদত বিয়ে দ্বারাই পূর্ণতা লাভ করে।"


অতএব, একমাত্র বিয়ে করার দ্বারাই এতগুলো ধর্মীয় কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। সুতরাং এক বিয়ে, দুই বিয়ে বা তিন বিয়ে যত বিয়েই করুক না কেন, এতে তার অর্ধেক ধর্মই বাঁচিয়ে নেয়া হবে।


রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন-“তোমরা বিয়ে কর প্রেমময়ী ও অধিক সন্তান প্রসবকারীণী নারীকে, যাতে আমি অন্যান্য উম্মতদের মুকাবিলায় গৌরব করতে পারি।"


যে বিয়ে করতে অস্বীকার করে রাসূলূল্লাহ (সাঃ) তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন-"বিয়ে করা আমার সুন্নত, তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, যে আমার সুন্নতকে প্রত্যাখ্যান করবে সে আমার উম্মত নয়।"


ইসলামী শরী'আত মুতাবেক বিয়ে করাও ইবাদত। বিয়ে করা ও এক আল্লাহর উপর ঈমান আনা ব্যতীত এমন কোন ইবাদত নেই, যা আদম (আঃ) হতে শুরু হয়েছে এবং যা বেহেশত পর্যন্ত থাকবে।

 ইসলাম বিয়ে-শাদীর ব্যাপারেও নারীকে অধিকার দিয়েছে। ইসলামের বিধান অনুসারে বিয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে বালিগা মেয়েকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। তার মতামত দেয়ার অধিকার আছে। তার মতামত ছাড়া বলপূর্বক তাকে কারো সাথে বিয়ে দেয়া যাবে না।

 যেমন, আমাদের রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, পূর্ব বিবাহিতা নারীর বিয়ে তার মতামত ছাড়া হতে পারে না এবং কুমারী বালিকার বিয়েও তার অনুমতি ছাড়া করা যাবে না। প্রশ্ন করা হল- ইয়া রাসূলাল্লাহ! কুমারী বালিকার অনুমতি কি হবে? উত্তর হলো- "চুপ থাকাও তার অনুমতি।” (যাদুল আ'আদ)


নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করা নিষেধ। যেমন আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য এটা বৈধ নয় যে, তোমরা বলপূর্বক নারীদের মালিক মালিক হয়ে যাও।" (সূরাহ নিসা, ১৯)


বিয়েতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই সম্মতি থাকা প্রয়োজন, ইসলামী শরী'আত অনুসারে বিয়েতে সম্মতি দেয়ার ব্যাপারে নারীর অধিকার বেশী। কেননা, ইসলামী বিধান অনুযায়ী বিয়ে পড়ানোর সময় আগে নারীর অনুমতি নিতে হয়। 

উকিল ও সাক্ষী নিযুক্ত করে এই বলে কন্যার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয় যে, তোমরা মেয়ের কাছে যাও, মেয়ে জিজ্ঞাসা কর, সে এ বিয়েতে রাজী আছে কি না। কনে তার সম্মতি প্রকাশ করলে তারপর পুরুষের মতামত জিজ্ঞাসা করা হয়।


নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে দিলে, তার ক্ষমতা আছে সে বিয়েকে বাতিল করে দেয়ার। কোন তত্ত্বাবধায়কই, এমনকি পিতাও পাপ্তবয়স্কা কোন মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়েতে বাধ্য করতে পারে না। 

তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিলেও তা তার অনুমতির উপর স্থগিত থাকে। সে অস্বীকৃতি জানালে তা বাতিল হয়ে যায়। যেমন, এক পিতা তার কন্যাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়েছিল। মহিলাটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এসে অভিযোগ করলেন। হাদীসটি নিম্নরূপ


খানছা বিনতে খিদাম আল আনছারী (রাজিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বিবাহিতা ছিলেন। পরবর্তী বিয়েকালে তার পিতা তাঁকে বিয়ে দিলেন, অথচ তিনি সেই বিয়েতে রাজী ছিলেন না। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে ঘটনা জ্ঞাত করালেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর এ বিয়েকে বাতিল সাব্যস্ত করলেন। (সহীহ বুখারী)


একই রকম হাদীস ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বর্ণনা করেছেন। এক ব্যক্তি তার কন্যাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিলেন। মেয়েটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকটে গিয়ে এ বিষয়টি বললেন। 

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বললেনঃ তুমি ইচ্ছা করলে এ বিয়ে বন্ধন বহাল রাখতে পার, অথবা ইচ্ছা করলে তা বাতিল করে দিতে পার। সে আল্লাহ তা'আলা তত নিকটে অবস্থান করবে। প্রত্যেক রাসূলুল্লাহর পিছনে তাঁর উম্মতগণ সমাসীন হবেন।।


আরও পড়ুন, 




ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও ফজিলত
ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও ফজিলত 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন