আদর্শ স্ত্রীর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য | একজন আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য

একজন আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য

আদর্শ স্ত্রীর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য !  আদর্শ স্ত্রীর কতিপয় গুনাবলী

আদর্শ স্ত্রীর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য |একজন আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য
আদর্শ স্ত্রীর গুণাবলী

একজন আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য


বেহেশতে হযরত আদম (আঃ)-কে আল্লাহপাক সৃষ্টি করে অসংখ্য নেয়ামত রাজি দানে। ধন্য করলেন। তিনি অত্যন্ত সুখে-শান্তিতে আল্লাহ প্রদত্ত্ব নেয়ামত ভোগ করতঃ তাঁর শুকুরয়া আদায় করতে থাকলেন। (উত্তম স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য)

কোন অভাব নেই, নেই কোন সমস্যা, তবুও কি যেন একটা অপূর্ণতা তাঁর কাছে অনুভূত হতে লাগল। কিন্তু অভাবটা কিসের তিনি তা স্পষ্টতঃ বুঝতে পারলেন না।

আল্লাহপাক যেহেতু তাঁর স্রষ্টা এবং সর্বজ্ঞাতা, তাই তিনি তাঁর রোগ কোথায় এবং উক্ত রোগের চিকিৎসাই বা কি? সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত ছিলেন। সুতরাং এর চিকিৎসা স্বরূপ আল্লাহ তা'আলা ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর বা পাঁজরের একটি বক্র হাড় দ্বারা একজন পরমা সুন্দরী রমণী সৃষ্টি করলেন।(ইসলামিক দৃষ্টিতে বিয়ের ফযীলত)

 জাগরিত হয়ে যাকে দেখে আদম (আঃ)-এর অপ্রকাশিত অভাব দূর হয়ে তাঁর মন আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে গেল। আল্লাহপাক তাঁর নাম রাখলেন হাওয়া। আর এ জোড়া থেকে যৌন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা মানুষের বংশদারা জারী করলেন।


একজন আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য


মহান আল্লাহ তা'আলার ভাষায়-“হে মানবজাতি! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের দু'জন থেকে অসংখ্য পুরুষ-নারীর বিস্তার ঘটিয়েছেন। (সূরাহ নিসা : ১) মানব জীবনকে আল্লাহ পাক পূর্ণতা দান করেন। স্ত্রী-পুরুষের বৈধ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে।(ইসলামে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা )

 কোন পিতা-মাতার একজন প্রাপ্ত বয়স্কা কন্যা সন্তানের সাথে বিয়ের মাধ্যমে বৈধ যৌন সম্পর্ক গড়ার মাধ্যমে একটি নারী জীবনের সূচনা হয়। এদের একজন হয় স্বামী এবং অপরজন হয় স্ত্রী। দু'জন অপরিচিত ব্যক্তির মিলনে গড়ে উঠে একটি নতুন সংসার।

 এ নতুন সংসার সুখময় করতে হলে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই আল্লাহ প্রদত্ত্ব কিছু নীতিমালা ও দায়িত্ব কর্তব্য মেনে চলতে হয়। পরস্পরের প্রেম-প্রীতির মাধ্যমেই শান্তির নীড় নির্মিত হয়। তাই একটি সুখী সংসার গঠনে স্বামীর যথাযথ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্ত্রীকেও বিরাট ভূমিকা রাখতে হয়।(ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও ফজিলত )

 বলতে গেলে সুন্দর ও সুখী সংসার গঠনে স্ত্রীর ভূমিকাই প্রধান। একজন আদর্শ স্ত্রীই পারে একটি সুন্দর সংসার উপহার দিতে। যদিও স্বামীই সংসারের আয় উপার্জনের প্রধান কর্তা। কিন্তু একজন মিতব্যয়ী, সুন্দরমনা আদর্শ স্ত্রী ছাড়া সেই উপার্জিত অর্থ সঠিক পন্থায় ও উপযুক্ত মাত্রায় ব্যবহৃত হতে পারে না।


একজন আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য


একজন সতী ও আদর্শ স্ত্রী পরিমিত, নিয়ন্ত্রিত ও অনাম্বর জীবন-যাপনের মাধ্যমে স্বামীকে অবৈধ রোজগারের পথ থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে। পক্ষান্তরে একজন বিলাসী, অপরিকল্পিত জীবন যাপনকারিণী স্ত্রী স্বামীকে অবৈধ রোজগারের পন্থায় ধাবিত করতে পারে। 

এজন্যই রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, দুনিয়ার সবকিছুই সম্পদ, তন্মধ্যে একজন উত্তম ও সৎ স্ত্রী হল দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ।” বলতে গেলে সৎ চরিত্রবান স্ত্রী হল আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। একজন ধৈর্যশীলা, সৎ ও নেক্নার স্ত্রই গোটা সংসারকে শান্তির নীড়ে পরিবর্তন করতে পারে।


আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য সমুহঃ

কোন মহিলা যদি তার চরিত্রে নিম্নোক্ত গুণাবলীর সমাবেশ ঘটাতে পারে তাহলে সে একজন আদর্শ ও কল্যাণকামী স্ত্রী হিসাবে সুখময় সংসার জীবন-যাপন করত।পরকালীন মুক্তি ও পুরষ্কার লাভে ধন্য হতে পারে।


একজন আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য


ধৈর্যলীলতা ঃ 

ধৈর্য একটি মহৎ গুণ। ধৈর্য সাফল্যের সোপান। একজন ধৈর্যশীলা স্ত্রীই পরিবারের সকলকে যেকোন ধরনের মারাত্মক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে এবং নিজেও বিভিন্ন সমস্যা রক্ষা করতে পারে এবং নিজেও বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পেয়ে আত্মমর্যদা লাভ করতে পারে।

 প্রবাদে বরে, “যে সহে সে রহে।" উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, স্বামী যদি কোন কারণে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে স্ত্রীকে কোন কটু কথা বলে ফেলে এবং স্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে উত্তপ্ত জবাব না দিয়ে একটু ধৈর্যধারণ করে এবং স্বামীর ক্রোধ প্রশমিত হলে মিষ্টি স্বরে প্রতিবাদ জানায়, তাহলে স্বামী তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হবে।

 এতে স্ত্রী নিজে যেভাবে একটি আসন্ন অঘটন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, তেমনি পরিবারকে একটা ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে বাঁচাতে পারে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-“নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।" (সূরাহ বাকারা)


সত্যবাদীতা ও কোমলতাঃ

 ও সত্যবাদী ও মিষ্টভাষী মানুষ সর্বত্রই সমাদৃত। একজন সত্যবাদী ও মিষ্টভাষী স্ত্রী পরিবারের জন্য নেয়ামত স্বরূপ। পক্ষান্তরে কর্কভাষী স্ত্রী দ্বারা কেউই শান্তি পায় না, তাই সে সকলের কাছেই অসহনীয় ও ঘূর্ণিত।

 হাদীস অনুসারে সত্যবাদী ও উত্তম আচরণকারী আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট খুবই প্রিয়। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-"নিশ্চয়ই অহংকারী ও ককর্ষভাষী কখনো বেহেশতে প্রবেশাধিকার লাভে সক্ষম হবে না।” 

(আবু দাউদ) রাসূল (সাঃ) মি'রাজের রাত্রে কিছু সংখ্যক মহিলাকে জিহ্বার সাথে লটকানো দেখতে পেয়ে হযরত জিব্রাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে জানতে পারলেন এরা ঐ সকল মহিলা যারা কথাবার্তায় সংযত ছিল না। এরা কথাবার্তায় স্বামীসহ আশে-পাশের লোকদেরকে কষ্ট দিত।


পর্দাশীলতা ও লজ্জাশীলতা :

 আল্লাহ পাক মুমিন নারী-পুরুষের প্রতি পর্দা ফরজ করেছেন। পর্দা হল একজন আদর্শ ও সম্ভ্রান্ত মহিলার প্রতীক। মহান আল্লাহ মহিলাদের আপদ মস্তক ঢেকে রাখাকে ফরজ করেছেন। পর্দা মানুষের মধ্যে লজ্জা সৃষ্টি করে এবং যৌন অপকর্ম থেকে দূরে রাখে। 

রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-লজ্জা হল ঈমানের অঙ্গ। একজন পর্দানশীল নারী যার তার সাথে মেলামেশা করতে পারে না, তার পর্দা ও লজ্জা তাকে হেফাজত করে। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-মিরাজের রাত্রে পর্দাহীনতার কারণে কিছু মহিলাকে মাথার চুল দ্বারা লটকানো দেখা গেছে।

 হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন প্রত্যেক ধর্মেরই একটি বৈশিষ্ট রয়েছে, ইসলামের বৈশিষ্ট্য হল শালীনতা। অন্যত্র রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-লজ্জা দ্বারাই সফলতা লাভ করা যায়। যাবতীয় সদগুণের মধ্যে শালীনতাই মহৎ গুণ।" (বুখারী ও মুসলিম)


চোগলখোরী পরিহার করা ঃ

 চোগলখোরী একটি মারাত্মক ব্যাধি। এর জন্য কেয়ামতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। চোগলখোর সমাজের পরম শত্রু। এদের কারণে সমাজে বিশৃংখলা ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে স্ত্রীর যদি এ দোষ থাকে, তাহলে উক্ত পরিবারে কোন শান্তি থাকে না।


অল্পেতুষ্টি ঃ 

যদিও ইসলামী বিধান মোতাবেক স্ত্রীর যাবতীয় ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপর অর্পিত, তথাপিও স্ত্রীকে স্বামীর সমার্থের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা তার দায়িত্ব। স্বামীর নিকট কোন কিছুর দাবী করতে হলে স্বামীর সামর্থ বিচেনা করতে হবে। 

স্বামীর পক্ষে প্রদান করা অসম্ভব এমন কিছু দাবী করা আদর্শ স্ত্রীর গুণ নয়। স্বামী সামর্থানুযায়ী কম-বেশী এবং ভাল-মন্দ যাই প্রদান করবে, একজন আদর্শ স্ত্রী সন্তুষ্টিচিত্তে তাই গ্রহণ করবে। মোটকথা, অল্পে তুষ্টি একজন আদর্শ স্ত্রীর অন্যতম গুণ।


উত্তম ব্যবহার : 

উত্তম ব্যবহার উত্তর চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। যে স্ত্রী তার স্বামী ও স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের সাথে উত্তম ব্যবহার করে সে উত্তর নারী হিসেবে পরিগণিত, দুনিয়াতে সে সকলের আদরের পাত্র ও শান্তির প্রতীক এবং কেয়ামতে আল্লাহপাকের করুণার দৃষ্টি পাওয়ার উপযোগী।


স্বামীর আনুগত্য ঃ

 স্বামী-স্ত্রী একই দেহের দু'টি অঙ্গ। দু'জনের সমন্বয়ে একটি নতুন সংসারের সূত্রপাত হয়। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের নিকট অধিকার প্রাপ্য। তবুও স্বামী স্ত্রীর উপর কর্তৃত্বশীল। কুরআনের ভাষায় ঃ “পুরুষ নারীর উপর কর্তৃত্বশীল।” (সূরাহ নিসা-৩৪)

 আল্লাহপাকের এ নির্দেশ স্ত্রীর নতশীরে মেনে নিতে হবে। তার বিপরীত কাজ করলে পারিবারিক শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। যদি কোন মহিরা অহংকার বশতঃ স্বামীর কর্তৃত্ব

মেনে নিতে অস্বীকার করে তাহলে এই পরিবারে কোন দিন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। স্বামীর কর্তৃত্বের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-“যদি নির্দেশ দিতাম তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম স্বামীকে সিজদা করতে।"

 (তিরমিযী) রাসূল (সাঃ) অন্যত্র ইরশাদ করেন-"কোন মহিলা যেন তার স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত ফরজ রোযা ছাড়া অন্য কোন রোয়া না রাখে। (তিরমিযী)


স্বামীর সম্পদের হেফাজত করা ও স্ত্রীর নিকট স্বামীর সম্পদ আমানত স্বরূপ। স্ত্রীর উচিত স্বামীর এই সম্পদের রক্ষণা-বেক্ষণ করা এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতীত খরচ না করা বা অপব্যয় না করা। আর একজন আদর্শ স্ত্রী অবশ্যই স্বামীর সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করে রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। 

রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-“যে ব্যক্তিকে চারটি নেয়ামত দেয়া হয়েছে সে ইহকাল ও পরকালের মঙ্গলেল অধিকারী হয়েছে। যথা- 

(১) কৃতজ্ঞ হৃদয়, 

(২) আল্লাহকে স্মরণকারী জিহ্বা, 

(৩) বিপদে ধৈর্যধারণকারী শরীর ও মন, 

(৪) বাধ্যগত স্ত্রী যে তার স্বামীর দেহ ও সম্পদের ব্যাপারে বিশ্বাস ঘাতকতা না করে।" (বায়হাকী)


সন্তানদের উত্তম শিক্ষাদান : 

শিশুর প্রথম শিক্ষকই হল তার মাতা। শিশু যেহেতু মায়ের তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হয়, তাই মায়ের শিখানো বিষয়ই জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে আয়ত্ব করে থাকে। তাই একজন মহিলার উচিত তার সন্তানকে ভাল জিনিস শিক্ষা দেয়া এবং খারাপ বিষয় থেকে দূরে রাখা। একজন আদর্শ মাতা অবশ্যই তার সন্তানকে উত্তম শিক্ষায়


শিক্ষিত করে তুলবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ঈমানের অঙ্গ। শরীর, পোষাক, বিছানাপত্র, আসবাবপত্র, বাড়ী-ঘর ইত্যাদি পরিষ্কার থাকলে মনও পরিষ্কার থাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মানুষ সকলের নিকটই প্রিয়। তাই স্ত্রীর উচিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং স্বামীর সম্মুখে সাজগোছ করে নিজেকে


উপস্থাপন করা, যাতে স্ত্রীর প্রতি স্বামী সর্বদাই আকৃষ্ট থাকে। পরনিন্দা ও গীবত থেকে দূরে থাকা পরনিন্দা ও পরচর্চা মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এ দু'টো কাজ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

 উল্লেখ্য এ প্রবণতাটি পুরুষের চেয়ে মহিলাদের মাঝে বেশী পরিলক্ষিত হয়। পরনিন্দা ও পরচর্চাকারীদের দ্বারা সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। একজন আদর্শ মহিলা অবশ্যই এ থেকে বেঁচে থাকবে।


উপরোক্ত গুণাবলী যে নারীর মধ্যে থাকে, সেই একজন উত্তম ও আদর্শ স্ত্রী বা মা হিসেবে মর্যাদার আসন অলংকৃত করতে পারে এবং বয়ে আনতে পারে যে কোন সংসারে বেহেশতের শান্তি।

আরও পড়ুন, 







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন