রুহ বা আত্মা কিঃ
আত্মা হলাে একটি সূক্ষ্ম জিনিস যা দেহ পিঞ্জরে অবস্থান করে। কোনাে কোনাে বিশেষজ্ঞ এর উদাহরণ দিয়েছেন এভাবে যে, রুহ বা আত্মা হলাে আরােহী আর দেহ হলাে তার বাহন।
আল-কোরআনে রুহ প্রসঙ্গ :
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ।
আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন আপনারা।
রুহ বা আত্মার সংজ্ঞা । ইয়াহুদিদের প্ররােচনায় মক্কার কুরায়েশরা যখন রূহের
হাকীকত সম্পর্কে মহানবী (সঃ)কে প্রশ্ন করল, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে রূহ সম্পর্কে জাৰ
দেওয়া হল। আল্লাহ অহীর মাধ্যমে মহানবী (সঃ)কে জানিয়ে দিলেন,
হে মুহাম্মদ (স.)! আপনাকে তারা রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। আপনি তাদেরকে বলে দিন-রূহ
হচ্ছে আমার প্রতিপালকের আদেশ। এ বিষয়ে তোমাদের সামান্যই জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। (আল-
ইসরা)
উপরিউক্ত আয়াত থেকে বােঝা যায় যে, আত্মার স্বরূপ সম্পর্কে কেউ পুরােপুরি অবহিত
নয়। কেননা, আল-কুরআনে রূহ সম্পর্কে যে জ্ঞান দান করা হয়েছে তার চাইতে অধিক জ্ঞান
আল্লাহ তাআলা কাউকে দান করেননি। তা সত্বেও উলামাগণ রূহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা
দিয়েছেন। তবে রূহ বা আত্মা একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে রয়েছে।
আত্মা-সম্পর্কে দার্শনিক ও চিকিৎসাবিদগণের মতামত :
প্রাণীদের খাদ্য গ্রহণের পর বিভিন্ন পর্যায়ে পরিপাক ও হজম হওয়ার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডে
এক প্রকার সূক্ষ্ম তাপের সঞ্চার হয়। বস্তুত এটিই প্রাণের উৎস হয়ে প্রাণিদেহকে জীবন্ত
রাখে। আর এটিই হচ্ছে রূহ বা আত্মা।
এ ছাড়া অন্য কোনাে বস্তু নেই যাকে রূহ বা আত্মা
নামে আখ্যায়িত করা যায় । প্রাণীদের এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন তার
মৃত্যু হয়। আর তখনই বলা হয় 'অমুক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে অমুকের দেহে আর রূহ
অবশিষ্ট নেই'।
পিথাগােরাসের অনুসারীদের মতে, দেহের মৌলিক উপাদানসমূহের
সংমিশ্রণের ফলে সৃষ্ট অবস্থাকে আত্মা বলা হয়, যেমন-
গিটার বলা হয় কতকগুলাে তারের
সংযােজিত বিশেষ অবস্থাকে। উল্লেখ্য যে, প্রাচীন দার্শনিক ও বর্তমান যুগের আত্মা।
বিশেষজ্ঞরা আত্মা সম্পর্কে চিকিৎসকদের থেকে ভিন্নমত পােষণ করেন। তাদের মতে,
জীবাত্মা ছাড়াও নফস বা রূহ নামে আরেকটি পৃথক
জিনিস আছে। তাদের ভাষায়
মানবদেহে বস্তুগত ও অনুভূত অংশ ছাড়া আরেকটি পৃথক উপাদান বা শক্তি রয়েছে যা
বস্তুগত উপাদানের চাপে মৃয়মান হয়ে পড়ে বটে, তবে রিযাজাত, মুজাহাদা বা অন্য কোনাে পন্থায় কিংবা নিন্দ্রার অবস্থায় যখন ইন্দ্রিয় শক্তি নিক্রিয় হয়ে পড়ে
তখন তা সজীব হয়ে উঠে এবং
মানুষ তখন উর্ধ জগতের রহস্যাবলি সম্পর্কে অবগত হয় এবং অন্যের কাছে তা প্রকাশ করে।
ইসলামী চিন্তাবিদদের দৃষ্টিতে রূহ বা আত্মা ইসলামী চিন্তাবিদ্ ও গবেষকরা রূহ বা
আত্মা সম্পর্কে যে মতামত ব্যক্ত করেছেন তা হলাে-
প্রকৃতপক্ষে আত্মা হলাে একটি সূক্ষ্ম উপাদান যা প্রাণীদেহে ছড়িয়ে আছে, দেহ হলাে তার
কাঠামাে।
এটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং দেহকে সম্বল করেই সকল কাজ সমাধা
করে। বস্তুত এটাই হলাে আত্মার বৈশিষ্ট্য। অন্যভাবে বললে কথাটি এভাবে বলা যায়- রূহ বা
আত্মা হলাে একটি সূক্ষ্ম জিনিস যা দেহ পিঞ্জরে অবস্থান করে। কোনাে কোনাে বিশেষজ্ঞ এর
উদাহরণ দিয়েছেন এভাবে যে, রুহ বা আত্মা হলাে আরােহী আর দেহ হলাে তার বাহন।
সারকথা, উপরােক্ত মনীষীদের মতে, আত্মা হলাে একটা পৃথক দেহ যার অবস্থানস্থল
হলাে স্থূল দেহ। তাদের মতে, আমরা একটি মানুষকে কখনাে শিশু, কখনাে যুবক, আবার
কখনাে বৃদ্ধ হিসেবে দেখি। কিন্তু অবস্থার এই পরিবর্তন সত্ত্বেও সে পূর্বে যে মানুষ ছিল পরেও
সে একই মানুষই থেকে যায় ।
অতএব, রূহ বা আত্মা যদি কেবল সেই জীবন উৎসের নাম হত, যা হৃদপিণ্ডে সূক্ষ্ম তাপ
সঞ্চারের ফলে অস্তিত্বে আসে কিংবা সেই অবস্থার নাম হত যা উপাদানসমূহের সংমিশ্রণের
ফলে সৃষ্টি তা হলে কর্ম ও অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রত্যেকটি মানুষ এক একটি নতুন
মানুষে পরিণত হত।
কেননা, মানুষ যেহেতু খাদ্যের রূপান্তর ছাড়া ভিন্ন কোনাে বস্তুর নাম নয়,
তাই প্রত্যেক মুহূর্তের পরিবর্তনশীল অবস্থা ও গুণাবলির প্রেক্ষিতে তার হাকীকতের ও পরিবর্তন
ঘটত। কিন্তু যেহেতু এরূপ হয় না বরং কর্ম, অবস্থা ও গুণাবলির পরিবর্তন সত্বেও মানুষ মানুষই
থাকে, তাই একথা অবশ্যই বলা যায় যে, প্রকৃতপক্ষে
মানুষ এ সকল ক্ষণস্থায়ী পরিবর্তনের নাম নয়, বরং সে হলাে এমন একটি পৃথক সূক্ষ্মদেহ যা বাল্য, যৌবন ও বার্ধক্য তথা সকল অবস্থায়ই অপরিবর্তনীয় থাকে এবং দেহের যাবতীয় পরিবর্তনের প্রভাবকে গ্রহণ করার পূর্ণ
যােগ্যতা রাখে। এই সূক্ষ্ম দেহই আত্মা বা রূহ। দেহের মৃত্যু ঘটলেও এর মৃত্যু হয় না। বরং নিজের কর্ম ও বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে হয় উর্ধ্বজগতের সাথে নতুবা পঙ্ককিলময় জিগতের সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়ে।
আল্লামা রুমী (রহ.) আত্মা সম্পর্কে বলেছেন, প্রাণ বা আত্মা তারই নাম যা ভাল মন্দ
সম্পর্কে অবহিত থাকে। কল্যাণে প্রফুল্ল হয় আর
অকল্যাণে বিমর্ষ হয়। আত্মায় অনুভূতির প্রভাব
রয়েছে। যার আত্মা অধিক উন্নত হবে সেই হবে আল্লাহ ওয়ালাদের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লামা আবুল বাকার (রহ.) এর মতে, ইসলামী চিন্তাবিদ দার্শনিক ও সূফিগণের মধ্যে
বিরাজমান মত পার্থক্যের ব্যাখ্যা এই যে, যখন রুহ বা
আত্মা বলে কোনাে জিনিসকে আমরা খোঁজ করি তখন তিনটি জিনিস আমাদের কাছে ধরা পড়ে। যথা- জীবাত্মা, স্বভাবাত্মা ও মানবাত্মা।
চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা আত্মার যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, তা হলাে সেই সূক্ষ্মতাপ মৌলিক উপাদানসমূহের
উত্তপ্ততা ও নমনীয়তার ফলে অস্তিত্ব লাভ করে। এটা
আসলে জীবাত্মারই অপর নাম।
পিথাগােরাস এবং তার অনুসারীরা যে আত্মার কথা বলেছেন, সেটা হলাে স্বভাবাত্মা।
আর মানবাত্ম হলাে সকল কর্ম ও গুণের অধিকারী বা জিম্মাদার। বিচার দিনের পাপ-পূণ্য এর সাথেই
সম্পর্কিত। আল-কুরআনে এই আত্মাকেই সম্বােধন
প্রচলিত নাম রূহ বা মানবাত্মা।
হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটাই মানুষ যার প্রচলিত নাম রুহ বা মানবাতমানবাত্মা।
পরিশেষে বলা যায়, রূহ বা আত্মা হলাে একটি সূক্ষ্ম জিনিস যা দেই,
পিঞ্জরে অবস্থান করে। কোনাে কোনাে বিশেষজ্ঞ এর উদাহরণ দিয়েছেন এভাবে যে, রূহ বা
আত্ম হলাে আরােহী আর দেহ হলাে তার বাহন।
লেখকঃA.K
Good.and carry on bro
উত্তরমুছুনThanks for the comment
মুছুনNice
উত্তরমুছুনWow
উত্তরমুছুনnice
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর ও দরকারি একটি পোস্ট
উত্তরমুছুনপাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ
মুছুন