মানব সৃষ্টির সূচনা


মানব সৃষ্টির সূচনা
মানব সৃষ্টির  সূচনা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ।

মানব জীবনের যাত্রা থেকেই এই পরিবার-সূত্রের শুভ সূচনা। আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও আদি মাতা।



পরিবার কি:

স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, পিতামাতা, ভাইবােন ও রক্ত সম্পর্কিত নিকট আত্মীয়দের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সংক্ষিপ্ত মানব পরিমণ্ডলকে পরিবার বলে। সমাজ জীবনের প্রথম ভিত্তি ও বুনিয়াদ হলাে পরিবার।

 মানব জীবনের যাত্রা থেকেই এই পরিবার-সূত্রের শুভ সূচনা। আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও আদি মাতা।

হযরত হাওয়া (আ.) এর মাধ্যমেই এর প্রথম বিকাশ। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,


“হে আদম! তুমি ও তােমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যা ইচ্ছা আহার কর।কিন্তু এই গাছের কাছেও যেওনা। তাহলে তােমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে। (আল- আরাফ, ১৯) এতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়


আরও পড়ুন, 

অন্যান্য সৃষ্টির মাঝে মানুষের মর্যাদা শেষ্ঠ কেন? 

মানুষ কি বানরের বিবর্তনবাদের মাধ্যমে সৃষ্টি? 

সামাজিক অন্যায় অনাচার প্রতিরোধের জন্য ইসলামের বিধান কি? 

 

মানব জীবনের সূচনা :

যে,মানবজীবনের যাত্রা শুরু হয়েছিল পারিবারিক সূত্রের পথ ধরেই। যে পরিবারের পথ বিন্যাস ছিল স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে - উৎসারিত হয়েছে অগণিত বনি আদমের বিন্যস্ত সংসার। 

তাই প্রত্যয়ের সাথেই বলা যায়, যে তারপর তা ধীরে ধীরে বিস্তৃতি লাভ করেছে। এক আদম (আ.) এর পরিবার থেকে। 

পরিবারই সমাজ জীবনের ভিত্তি প্রস্তর। পারিবারিক পবিত্রতা ও সুস্থতার উপরই নিজ করে সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্বময় মানব জাতির পবিত্রতা ও সুস্থতা।



পরিবারের উৎপত্তি : 

পরিবার হচ্ছে মাতা-পিতা, সন্তান, নিকট রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়-স্বজন এবং দাস-দাসী বা চাকর-বাকর নিয়ে একত্রে বসবাসকারী বৈধ সামাজিক সংগঠন।

 ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার ব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) হতে শুরু হয়েছে। কারণ আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করে তার থেকে তাঁর স্ত্রী হযরত হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন। 

পরে তাঁদের দুজন থেকে জন্ম হয় তাদের অনেক সন্তান-সন্তুতি। পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে আমরা তাদের দুজনকেই জানি। 

সৃষ্টির পর আল্লাহ তা'আলা পৃথিবীর এ প্রথম পরিবারটিকে জান্নাতে বসবাস করতে দেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,

 و قلنا يا أم اسكن أنت وزوجك الجنة و لا منها رغدا حيث ما ولا تقربا هذه الشجرة فتكونا من الظالمين .



“আর আমি আদমকে বললাম, তুমি ও তােমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও যেখান থেকে চাও পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ে, অন্যথায় তােমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে।” (আল্ বাকারা-৩৫)


কিন্তু শয়তান কল্যাণকামীর বেশে এসে তাঁদের ধোঁকায় ফেলে এবং প্রতারণার জালে আবদ্ধ করে এ গাছের ফল আস্বাদন করতে বাধ্য করে। অবশ্য তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। 

এবং বিনয়াবনত হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন বসবাস করতে।

 হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ)-এর পৃথিবীতে আগমন করার পর তাঁরা দুজনেই প্রথম পরিবার ভুক্ত হয়ে জীবন যাপন করতে থাকেন। 

তাদের দু'জনের মাধ্যমেই এ পৃথিবীতে মানব ধারার বিস্তার লাভ করে আসছে। আর পারিবারিক জীবন ব্যবস্থার ক্রমধারা তাদের দুজন থেকেই উৎসারিত।

 আল্লাহ তা'আলা বলেন, “হে মানব মন্ডলী ! তােমরা তোমারে পালন কর্তাকে ভয় কর, যিনি তােমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন। 

এবং যিনি তার থেকে তাঁর সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার লাভ করিয়েছেন। তাঁদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।" (আন্‌-নিসা-১)


উপরােক্ত আয়াত ও আলােচনা হতে, আমরা এ কথা দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে পারি যে, পারিবারিক নামক সংগঠনটি হযরত আদম (আ.) হতে শুরু হয়েছিল।

 আর এখনও তা বর্তমান অবস্থায় আমরা দেখতে পাচ্ছি। কালের প্রবাহে পরিবার নামক সংগঠনটির মধ্যেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে বলে সমাজবিজ্ঞানীদের ধারণা। তাই তারা পরিবারের বিভিন্ন শ্রেণি বিভাগ করেছে।



পরিবারের ক্রমবিকাশ :

 আল-কুরআনের ধরণ অনুযায়ী যেমন প্রথম মানব আদম (আঃ) তেমনি মানব জাতির প্রথম পরিবার গড়ে উঠেছিল আদম ও হাওয়াকে কেন্দ্র করে।

 উত্তরকালে তাদের সন্তানদের মধ্যেও এ পারিবারিক জীবন পূর্ণ মাত্রায় ও পূর্ণ ঘরে মর্যাদা সহকারেই প্রচলিত ছিল। 

এই প্রথম পরিবারের সদস্যদ্বয়-আদম ও তাঁর স্ত্রীকে লক্ষ করেই আল্লাহ তা'আলা বলেছিলেন, “হে আদম! তুমি ও তােমার স্ত্রী জান্নাতেএকত্রে বসবাস গ্রহণ কর এবং যেখান থেকে মন চায় তােমরা দু'জনে অবাধে পানাহার কর।” (আল আরাফ-১৯) 

প্রকৃতপক্ষে মানব ইতিহাসের সর্ব প্রথম পরিবার যেমন সর্বত্রভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবার ছিল, তেমনি তাতে ছিল পারিবারিক জীবনের প্রয়ােজনীয় যাবতীয় উপকরণ এবং তার ফলে সেখানে বিরাজিত ছিল পরিপূর্ণ তৃপ্তি,শান্তি, স্বস্তি ও আনন্দ। 

এ সূচনাকালের পরও দির্ঘকাল ধরে এ পারিবারিক জীবন-পদ্ধতি ও ধারা মানব সমাজে অব্যাহত থাকে। অবশ্য ক্রমবিবর্তনের কোনাে স্তরে মানব-সমাজের

 কোনাে শাখায় এর ব্যতিক্রম ঘটেনি, তেমন কথা বলা যায় না। বরং ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কোনাে কোনাে স্তরে মানব জাতির কোনাে কোনাে শাখায়

 পতনযুগের অমানিশা ঘনীভূত হয়ে এসেছে এবং সেখানকার মানুষ নানাদিক দিয়ে নিতান্ত পশুর ন্যায় জীবন যাপন করতে শুরু করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। 

এ পর্যায়ে এসে তারা ভুলেছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি মানবীয় কর্তব্য। নবীগণের উপস্থাপিত জীবন-আদর্শকে অস্বীকার করে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে ধাবিত

 হয়েছে এবং একান্তভাবে নফসের দাস ও জৈব লালসার গােলাম হয়ে জীবন যাপন করেছে। 

তখন সব রকমের ন্যায়নীতি ও মানবীক আদর্শকে যেমন পরিহার করা হয়েছে, তেমনি পরিত্যাগ করেছে পারিবারিক জীবনের বন্ধনকেও। 

এই সময় কেবলমাত্র যৌন লালসার পরিতৃপ্তিই নারী-পুরুষের সম্পর্কের একমাত্র বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ অবস্থা ছিল সাময়িক। 

বর্তমান সময়েও এরূপ অবস্থা কোথাও বিরাজিত দেখতে পাওয়া যায়। তাই মানব সমাজের সমগ্র ইতিহাস যে তা নয় তা স্বীকার করতে কোনাে দ্বিধা নেই। 

বর্ণিত অবস্থাকে বড় জোর সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রমই বলা যেতে পারে। অথচ এই ব্যতিক্রমের কাহিনিকেই ইউরােপীয় ইতিহাসে গােটা মানব সমাজ ও সভ্যতার ইতিহাস ২ ধরে নিয়েছে। 

অতএব বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলা যায়, সেটা মানব সমাজের ইতিহাস নয়, তা হল ইতিহাসে বিকৃতি, মানবতার বিজয় দৃপ্ত অগ্রগতির নিরবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতায় নগণ্য ব্যতিক্রম মাত্র। 

 বস্তুত ইসলামী সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পরিবার এবং পারিবারিক জীবন হচ্ছে সমাজ জীবনের ভিত্তিপ্রস্তর । 

এখানেই সর্বপ্রথম ব্যষ্টি ও সমষ্টির সম্মিলন ঘটে এবং এখানেই হয় অবচেতনভাবে মানুষের সামাজিক জীবন যাপনের হাতে খড়ি। ইসলামের শারীর-

বিজ্ঞানের ব্যক্তি দেহে 'কলব' এর যে গুরুত্ব, ইসলামী সমাজ জীবনে ঠিক সেই গুরুত্ব পরিবারের, পারিবারিক জীবনের। 

তা সত্ত্বেও আধুনিক ইউরােপীয় ঐতিহাসিক ও নৃবিজ্ঞানীরা মানব সভ্যতার ইসলামী ক্রমধারাকে অস্বীকার করে সভ্যতার ক্রম বিবর্তনের কথা চাপিয়ে দিতে চায়। 

তাদের ইতিহাস ও সভ্যতা প্রাচীন হওয়া সত্ত্বেও মধ্যযুগে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সাথে সংঘর্ষ হওয়ায় তারা ধর্মীয় সভ্যতার ইতিহাসকে গ্রহণ করতে চায় না। 

এবং ধর্মীয় সভ্যতার বিপরীতে তারা সেই সভ্যতার যুগকে অন্ধকারাচ্ছন্ন গুহাবাসীর যুগ হিসেবে উপস্থাপন করে। 

তারা পারিবারিক জীবন যাপনকে গুরুত্ব না দিয়ে, পরিবার প্রথা ভেঙে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সমাজে পরিবার বিরােধী মতবাদ প্রচার করে

 মানুষকে উৎসাহিত করছে। তারা পরিবার প্রথাকে বিলুপ্ত ব্রার জন্য যে সকল যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করছে তারই কতিপয় জবাব নিয়ে উপস্থাপন করা হয়।




লেখকঃA.K



1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন