অন্যান্য সৃষ্টির মাঝে মানুষের মর্যাদা শেষ্ঠ কেন?


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমতুল্লাহ
মানুষের মর্যাদা সব প্রানির চাইতে শ্রেষ্ঠ 

মানুষের মর্যাদাঃ-

 ইসলাম মানুষকে তার সঠিক মর্যাদা ও উপযুক্ত সম্মান দিয়েছে। মানুষকে আল্লাহ তাআলা এই পৃথিবীতে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন। মানুষকে সকল সৃষ্টির সেরা করে সৃষ্টি করেছেন। সকল সৃষ্ট জীবের মধ্যে মানুষকে আশরাফুল।মাখলুকাত' হিসেবে সম্মান দিয়েছেন। পৃথিবীর সবকিছু মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। 

আর মানুষকে নিজের বান্দা ও খলিফা হিসেবে ঘােষণা দিয়ে নিজের সাথে সম্পর্কিত করেছেন।সৃষ্টিলােকে মানুষের মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব এবং বিশিষ্টতা এখানেই। কুরআন ও হাদিস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, ইসলাম মানুষকে যতখানি মর্যাদা,গুরুত্ব এবং সম্মান দান করেছে অন্যকোনাে ধর্ম বা মতবাদে তা দেয়নি।


মানব মর্যাদা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সবিস্তারে নিমে আলােচনা করা হলাে-

১) মানুষ এক মহা মর্যাদাসম্পন্ন সৃষ্টি : 

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ এক মহামর্যাদাসম্পন্ন
সৃষ্টি। মানুষের এ মর্যাদা ও সম্মান যেমন আল্লাহর নিকট, তেমনি বিশ্ব লােকের সবকিছুর ওপর। আল্লাহ তাআলা এক বিশেষ উন্নতমানে তা মহান উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে রূপ, আকার-আকৃতি ও গঠন-প্রকৃতি দিয়েছেন সবকিছু থেকে ভিন্নতর, সবকিছুর তুলনায়
উত্তম করে। আল্লাহ নিজে রূহ মানুষের দেহ সত্তায় ফুকে দিয়েছেন। আল্লাহর ফেরেশতা বাহিনী দ্বারা মানুষকে সিজদাও করিয়েছেন।

২) বিশ্ব প্রকৃতিতে মানুষের মর্যাদা :

 এ বিশ্ব চরাচরে মানুষ তুচ্ছ নয় । বিশ্ব প্রকৃতির
মাঝে এক ছােট্ট প্রাণী হয়েও বিশেষ স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষ শ্রেষ্ঠ আশরাফুল
মাখলুকাত। মল্লাহ তাআলা বলেন,

في

البر والبحر ورزقهم من الطيبات

و لقد کرمنا بني أدم ومثلهم

و فضلنهم على كثير ممن خلقنا تفضيلا

“আমি আদম সন্তানকে অতীব সম্মান দান করেছি আমি তাদেরকে জলে-স্থলে চলাচলের জন্য বাহন দান করেছি, তাদেরকে উতনা জবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং বহু জিনিসের ওপর যা আমি সৃষ্টি করেছি তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান কবেছি।” (বাণী ইসরাঈল :৭০)

৩) মানুষের অধীন সবকিছু :

 এ দুনিয়াস সবকিছু যা আছে উর্ধ্বলােকে, যা আছে ভূতলে,ধরিত্রীতে সেই সবকিছুই মানুষের অধীন, মানুষের একান্ত অনুগত, মানুষের কল্যাণে নিয়ােজিত। আর
দৃশ্য-অদৃশ্য যত নিয়ামত ও কল্যাণকর যা কিছু আছে সবই বিপুলভাবে আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য
| দান করেছেন। এক কথায় সবকিছু মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। আর মানুষকে
আল্লাহর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, “হে আদম সন্তান! আমি
তাে তােমাকে কেবল আমার জন্য সৃষ্টি করেছি। আর অন্যান্য সবকিছু সৃষ্টি করেছি তােমার জন্য।”

৪) মানুষ ইচ্ছা শক্তিসম্পন্ন বিবেকবান সত্ত্বা : 

মানুষ কেবল জীব দেহের অধিকারী সত্তা।
নয়। বরং মানুষ স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি, বিবেকবান, বিদ্যা-বুদ্ধি ও চিন্তা-গবেষণা শক্তি সম্পন্ন।
সড়া। আসলে এই মানুষ হল সমস্ত সৃষ্টির নির্যাস, সৃষ্টিকুলের গৌরবের অমূল্য অতুলনীয়।
একমাত্র ধন। পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে তার কোনােটিই মানুষের ন্যায় ইচ্ছা শক্তি রাখেনা,তারা বিবেকবান,বিদ্যাবুদ্ধি ও চিন্তা -গবেষণার অধিকারী নয়।

৫) মানুষ আল্লাহর সুন্দরতম সৃষ্টি : 

নিখিল সৃষ্টিলােকের মধ্যে মানুষের অবয়ব,
আকৃতি, গঠন অবকাঠামাে অত্যন্ত সুন্দর। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, -

لقد خلقنا الإنسان في أحسن تقويم.


“আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে।” (আততীন : ৪) এর দ্বারা মানুষের
বাহ্যিক আকৃতি এবং সুষম অঙ্গ সমাবেশ বুঝানাে হয়েছে।

৬) অন্যান্য সৃষ্টির মাঝে মানুষের মর্যাদা : 

মানুষ ছাড়া বিশ্বের আর যত সৃষ্টি আছে
সবকিছুই আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত নিয়মের অধীনেই চলছে। কেবলমাত্র
মানুষের জন্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবন পথে চলার নির্দেশনা দিয়ে আসমানী কিতাব ও
নবী-রাসূল পাঠানাে হয়েছে। এটা মহান আল্লাহর বিশেষ দয়া হিসেবেই মানুষ পেয়েছে।
আল্লাহর দৃষ্টিতে মানুষের মর্যাদা : কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহর কাছে মানুষের
নৈকট্য ও মানুষের কাছে আল্লাহর নৈকট্যের কথা বলা হয়েছে। মানুষ ও আল্লাহর মাঝে
কোনাে দেয়াল বা মাধ্যম নেই। মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করলে আল্লাহ কোনাে মাধ্যম ছাড়াই
তার জবাব দেন। আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ সাথে সাথে তার ডাকে সাড়া দেন। এ থেকেই
বুঝা যায় আল্লাহর কাছে মানুষের স্থান ও মর্যাদা কত ঊর্ধে।

৭) উর্ধ্বলােকের মানুষের স্থান : 

উচ্চতর জগতে বা আত্মার জগতে মানুষের যে স্থান,
তা এতই উচ্চ ও মহান যে, আল্লাহর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের মাথা তাদের সামনে অবনমিত
হয়। উচ্চতর জগতে মানুষের মর্যাদার কোনাে তুলনা নেই। এজন্যই আল্লাহ তাআলা তাঁর
মহান সৃষ্টি ফেরেশতাদেরকে আদেশ দিয়েছিলেন মানুষকে সিজদা করতে।

৮) বস্তু জগতে মানুষের মর্যাদা : 

এ বস্তু জগতে মানুষের মর্যাদা হচ্ছে মানুষ পৃথিবীর সকল
সৃষ্টির নির্যাস। মানুষকে কেন্দ্র করেই এ বিশ্বলােকে সৃষ্টি। মানুষ প্রধান বা শ্রেষ্ঠ সকল সৃষ্টির ।
মানুষের কর্মক্ষেত্র হচ্ছে বিশাল বিশ্বলােক। এখানে যা কিছু আছে সবই মানুষের জন্য। মানুষ তার
ওপর নিজের ইচ্ছা প্রয়ােগ করে। এসব কিছুই মানুষের কল্যাণে নিয়ােজিত। এখানে কোনাে
সৃষ্টিই মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে টিকে থাকতে পারে না।

৯) খিলাফতের দায়িত্বের কারণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ : 

এ দুনিয়ায় মানুষের মর্যাদা হচেছ-
সে আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। মানুষের সৃষ্টিতত্ত্ব থেকে দেখা যায় মানুষ নিকৃষ্ট সারবস্তু
থেকে সৃষ্ট। কিন্তু তার মধ্যে আল্লাহ অধিকারী। মানুষের এ মর্যাদা কেবলমাত্র আল্লাহর দ্বীন
প্রতিষ্ঠার ওপরই নির্ভরশীল।

১০) মানুষ আল্লাহর শরীআতের ধারক বাহক : 

এই বিশ্বলােকে মানুষ মহান আল্লাহর
খিলাফতের সুকঠিন দায়িত্ব পালন করে।
 খিলাফতের দায়িত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ আমানত। আর
তা হলো আল্লাহর শরীআত বহন, পালন, আল্লাহর নিকট জবাবদিহির যােগ্যতা অর্জন।বিশ্বলোকে মানুষ ছাড়া  এ কঠিন দায়িত্ব আর কারও বহন করার যোগ্যতা নেই, এজন্য ।

১১) মানুষ দায়িত্বশীল সত্ত্বা : 

সৃষ্টিলােকের মধ্যে মানুষই একমাত্র দায়িত্বশীল সঞ্জী।
মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করবে। অন্যান্য সৃষ্টি লােকের প্রতি তার দায়িত্ব-কর্তব্য।
| তা তাকে যথাযথভাবে পালন করে সৃষ্টিলােকের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
মায়ের দিন তার সব কাজের হিসাব নেয়া হবে। ভালর জন্য দেওয়া হবে পুরস্কার আর।
লােকে মানুষের এত মর্যাদা
পের জনা দেয়া হবে শক্তি।

১২) আল্লাহর দাসত্বঃ-

সৃষ্টি লােকের সেরা সৃষ্টি মানুষ কেবলমাত্র আল্লাহরই ইবাদত
| বন্দেগী ও দসি স্বীকার করবে পার্থিব জীবনের সকল ক্ষেত্রে। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্য ।
| যাহর আনুগত্য ও ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে একনিষ্ঠভাবে। আল্লাহর ঘোষণা এ রকমই।
| মানুষ ও জ্বিন জাতিকে একমাত্র আমার দাসত্ব করার জন্য সৃষ্টি করেছি।” (আল-কুর'আন)

১৩) নবী-রাসূলের আগমন : 

মানুষ শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী বলেই মানুষের মাঝে
| আর পথ দেখানাের জন্য নবী-রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যকোনাে প্রাণীর জন্য নবী-
| বগল প্রেরিত হয়নি। মানুষ যাতে
পথ অবলম্বন করে গোমরাহ ও বিপথগামী না হয়
| এল এ ব্যবস্থা এর মধ্যেই তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় ।

১৪) আল্লাহ্র বাণীর ধারক ও বাহক মানুষঃ-

 মানুষ শ্রেষ্ঠ বলেই মানুষের কাছে মানুষের মধ্য
| কাকে মানব শ্রেষ্ঠ অল্লাহর মনােনীত নবী-রাসূলগণের নিকট তাঁরই বাণী অবতীর্ণ করেছেন।
| আল্লহর এই বিশাল সৃষ্টিলােকের মধ্যে আর কাউকেই এ মর্যাদা দেয়া হয়নি। আল্লাহর বাণীর ধারক
হক এবং প্রচারকরূপে মানুষকেই মনােনীত করা হয়েছে।

১৫) মানুষ অনন্ত মহাজীবনের অভিযাত্রী : 

ইহ জীবনই মানুষের শেষ নয় এবং
মৃত্যুই মানুষের জীবনের যবনিকা টেনে দেয় না। মৃত্যুর পরে মানুষ অনন্ত মহাজীবনে প্রবেশ করবে। অন্যান্য সৃষ্টিলােক মৃত্যু ও কিয়ামতের পরই নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মানুষের রয়েছে বারযাখ জীবনের সুখ বা শাস্তি।

১৬) পবিত্র উপজীবিকা : 

আল্লাহতাআলা সৃষ্টিলােকের মধ্যে মানুষকেই কেবল
পবিত্র উপজীবিকা প্রদান করেছেন। তিনি অনিষ্টকর, অপবিত্র, নীচ ও হীনবস্তু আহার করা
| থেকে মানুষকে বিরত রেখেছেন। জীবন ধারণের জন্য উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করা,
জীবনােপকরণ আবিষ্কার ও তৈরি করতে কেবল মাত্র মানুষকেই শিখিয়েছেন।

পরিশেষে বলা যায়, এই মহাবিশ্বে মানুষ তুচ্ছ ও হীন নয়। নয় কোনাে
| দেহবিশিষ্ট ইতর প্রাণীর মত কোনাে জীব। মানুষ উন্নত-উচ্চতর আত্মা ও দেহধারী মেধা-
মননশিল বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন মহান আল্লাহর এক মহা মূল্যবান সৃষ্টি। যার অধীন সৃষ্টিলােকের সবকিছু।

আরো পড়ুন, 

মানব সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য কি?

কিভাবে মানব ধারা বিস্তার লাভ করেছে?

মানুষ কি বানরের বিবর্তনবাদের মাধ্যমে সৃষ্টি




লেখকঃA.K

2 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন