স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার গল্প |ইসলামে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

 Husband wife love


স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার গল্প |ইসলামে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা
স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা

স্বামী-স্ত্রীর প্রেম-ভালবাসার রূপরেখা 

স্বামী-স্ত্রীর প্রেম-ই পবিত্র প্রেম। বিয়ের পূর্বে বেগানা ছেলে-মেয়ের মাঝে যে অবৈধ প্রেম হয়, তা শুধু কৃত্রিম ও রঙ্গীন ফানুস বৈ ছাড়া আর কিছু নয়। সামান্য কিছুতেই সেই প্রেমের মোহ টুটে যায়। 


সেই প্রেম অপবিত্র ও নিষিদ্ধ। বরং বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর প্রেমই হচ্ছে আসল প্রেম ও পবিত্র প্রেম। স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে তাদের এ পবিত্র প্রেমের বন্ধন দৃঢ় ও মজবুত করা, একে অপরের জন্য হৃদয় উজার করে দেয়া।


তাই নববধুর কর্তব্য হচ্ছে, নিজের সমস্ত প্রেম-ভালবাসা উপার করে স্বামীর জন্য উৎসর্গ করবে। স্ত্রী যদি স্বামীর সহিত অকৃত্রিম প্রেম ভালবাসা মাখা আচরণ করে, স্বামীর আনুগত্য করে, প্রতিটি কাজে স্বামীর পরামর্শ গ্রহণ করে, স্বামীর প্রতিটি আদেশ যথাযথ পালন করে, তাহলে ঐ স্ত্রী আপন স্বামীকে দেওয়ানা বানিয়া নিতে পারে। 

এভাবে স্ত্রী স্বীয় স্বামীকে গোলাম এবং মনিব উভয়টাই বানিয়ে নিতে পারে। স্ত্রী যদি স্বামীর সেবিকা হয়ে যায়, তাহলে স্বামী ও স্ত্রীর সেবক হতে বাধ্য। কিন্তু প্রথম প্রথম নববধুকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, অনেক ধৈর্য-সহ্য ইখতিয়ার করতে হবে, অনেক কষ্ট মেনে নিতে হবে, অনেক স্বার্থ বিসর্জন দিতে হবে। আগে ভাগ স্বীকার করলে, পরবর্তীতে অবশ্যই ভোগের পালা আসবে।



স্বামীর জন্য স্ত্রীর অকৃত্রিম প্রেমের নিদর্শন রাসূলুল্লাহর (সাঃ) তনয়া আদরের দুলালী হযরত যাইনাব (রাঃ)। হযরত যাইনাব (রাঃ) স্বীয় মা-জননী নবীপত্নী নবীপত্নী হযরত খাদীজা (রাঃ) থেকে ঐ সমস্ত গুণাগুণ ও আদর্শ শিক্ষা লাভ করিছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি আপন স্বামীকে সাচ্চা বন্ধুরূপে, সুখ-দুঃখের সাথীরূপে, বিপদাপদের সাহায্যকারীরূপে, সহমর্মী জীবন সঙ্গীরূপে বানিয়ে নিয়েছিলেন।


 যদ্দরুণ আরবের কুরাইশরা যখন তার স্বামী (তখনও কাফের ছিল) আবুল 'আসকে বলিছিল-“তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দাও। তাহলে কুরাইশদের মধ্য থেকে যে তরুণীকে তুমি বিয়ে করতে পছন্দ করবে, তার সাথেই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা আমরা করব। 


তবুও (নাউযুবিল্লাহ) মুহাম্মদের (সাঃ) কন্যাকে নিজ গৃহে রেখোনা।" কিন্তু আবুল আস (তখনও মুসলমান হয়নি) বলল, “কখনও নয়, আল্লাহ তা'আলার শপথ! আমি নবীর (সাঃ) কন্যাকে ত্যাগ করতে পারিনা এবং আমি এটা পছন্দ করিনা যে, আমার স্ত্রীর (যাইনবের) বিনিময়ে অন্য কোন কুরাইশ নারীকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করি।”



Husband wife love 


লক্ষণীয় বিষয় যে, সেই মহিয়সী স্ত্রী স্বামীর আনুগত্য করে, প্রেম-ভালবাসা দিয়ে স্বামীর অন্তরে কেমন শক্ত মজবুত স্থান তৈরী করে নিয়েছেন যে, কুরাইশ গোত্রের অর্থাৎ স্বগোত্রের লোকেরা স্ত্রীকে তালাক দেয়ার জন্য শত পীড়াপীড়ি ও চাপ প্রয়োগ সত্ত্বেও ইবং স্বগোত্রের সুন্দরী তরুণীকে বিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখানো সত্ত্বেও আবুল আস উত্তরে বলছে-“যাইনাব বিনে অন্য নারী না-মঞ্জুর। 


যাইনাবের সাথে অন্য নালীর তুলনাই হতে পারেনা। আমি যাইনাবের বিনিময়ে অন্য কোন নারী গ্রহণ করতে প্রস্তুত নই।” এতে বুদ্ধিমতি বন্ধুদের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে।


নবী উযরাহ গোত্রের এক গ্রাম্য যুবকের সাথে জনৈকা পরমা সুন্দরী এক যুবতীর বিয়ে হয়। যখন ঐ গ্রাম্য যুবকের নিকট ধন-দৌলত ফুরিয়ে এল, তখন কন্যার পিতা জোর করে কন্যাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল। তখন স্বামী বেচারা শাসক মাওয়ানের নিকট ন্যায় বিচারের জন্য গেল।


 মারওয়ান মেয়েটি ও তার পিতাকে ডেকে পাঠাল। মেয়ে ও তার পিতাকে ডেকে পাঠাল। মেয়ে ও মেয়ের পিতা দরবারে উপস্থিত হল। মেয়েটি মারওয়ানে দৃষ্টিতে এতই পছন্দ হল যে, সে মেয়ের পিতাকে রাজি-খুশি করে কিছু ধন-দৌলত দিয়ে স্বামী থেকে তালাক নিয়ে ইদ্দতের পর মেয়েকে বিয়ে করে নিল।


Husband wife love 


স্বামী বেচারা স্ত্রীর দেওয়ানা ছিল। সে ন্যায় বিচারের জন্য প্রধান বিচারকের নিকট গেল। বিচারক মেয়েকে এবং মারওয়ানকে ডেকে পাঠালেন এবং মারওয়ানকে খুব তিরস্কার ও গালমন্দ করলেন।


 মারওয়ান বিচারকের দরবারে উপস্থিত হয়ে স্বীয় দুর্বলতা প্রকাশ করে বলল, মেয়েটি এতই সুন্দরী যে, তার রূপের ঝলকে আমি তার প্রতি দুর্বল হতে বাধ্য হয়ে গিয়েছিলাম।


 বিচারক মেয়েটির পূর্বের স্বামীর সম্মুখে মেয়েটিকে উপস্থিত করে বিচারকার্য পরিচালনা করতে মনস্থ করলেন। মেয়েটি বিচারকের দরবারে উপস্থিত হল।


 প্রথম দর্শনেই বিচারকও মাওয়ানের মতই কুপোকাত হয়ে গেল। মেয়েটির রূপ-লাবণ্যে হতর্কিত ও বিমোহিত হয়ে বিচারক নিজেই তাকে বিয়ে করার নিমিত্ত দেওয়ানা হয়ে গেলেন। 


মেয়েটিকে বিয়ে করার জন্য তার সম্মতি আদায়ের লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। বিচারক সর্ব প্রথম তার স্বামীকে প্রশ্ন করলেন, আমি যদি তাকে বিয়ে করি, তাহলে তোমার কোন আপত্তি আছে কি?


 স্বামী সরাসরি সেই বিবাহে সম্মতি জানাতে অস্বীকার করল এবং দুম্বটি ছন্দে খিদমত গুজার প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রেম-ভালবাসার স্মৃতি উল্লেখ করে বলল, “শপথ মহান সৃষ্টিকর্তার। 


আমি (স্ত্রীর) প্রেম-ভালবাসার স্মৃতি কস্মিনকালেও বিস্তৃত হতে পারব না-কবরের গভীরে প্রবেশ করা পর্যন্ত এবং আমার দেহাবয়ব মৃত্রিকায় পরিণত হওয়া পর্যন্ত। প্রাণ প্রিয়া স্ত্রীর বিচ্ছেদ ব্যথায় আমি কিরূপে নিজেকে সান্ত্বনা দেব?


 অথচ আমার অন্তরে রয়েছে গচ্ছিত তার প্রেমের যন্ত্রণা গচ্ছিত। আর হৃদয় বীনায় বাজে সদা তার বিরহের মূর্ছনা। আমি এখন কেবল মহান প্রভুর করুণা ভিক্ষা চাই।


অতঃপর বিচারক স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ ব্যাপারে তোমার কি মতামত? তুমি কি আমার বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাও? বিনিময়ে তুমি পাবে ইজ্জ-সম্মান-মর্যাদা, বিশাল বিশাল সবুজ অট্টালিকা, মনোরম শয়নকক্ষ, পুষ্পেভরা কানন, ফলে ভরা বাগান, শিশিরস্নাত দুর্বাঘাস, অবয়ব শীতলকারীণী নির্ঝরণী। 


আর পাবে সোনা-গহনাসহ অঢেল ধন-সম্পদ। না-কি তুমি মারওয়ানের নিকট যেতে চাও-যে ব্যক্তি তোমার পিতার সাথে সুগভীর চক্রান্তের মাধ্যমে তোমার পূর্বের স্বামীর উপর জুলুম করেছে? কিংবা সেই পূর্বের গ্রাম্য স্বামীর নিকট যেতে চাও-যে দুঃখ-কষ্ট, দৈন্যদশা, দরিদ্রতা তোমাকে দিয়েছে। 


অনাহারে, অর্ধাহারে যার কুঁড়ে ঘরে তোমাকে কালাতিপাত করতে হয়েছে, পুনরায় তারই নিকট ফিরে যাবে, না আমাদের কারো নিকট? বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে মেয়েটি বলল, “আমি আমার প্রাণাধিক্য গ্রাম্য স্বামীকে স্বীয় জীবনাপেক্ষা অধিক ভালবাসি। 


আমি শুধু তাকেই চাই। যদিওবা সে দুরিদ্র, নিঃস্ব এবং কুঁড়ে ঘরে বসবাস করে, কিন্তু সে আমাকে এত আদর-সোহাগ ও ভালবাসা দিয়েছে এবং এমন অমায়িক ব্যবহার উপহার দিয়েছে যে, আমার দৃষ্টিতে সকল আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন, সখী-বান্ধবীর তুলনায় সর্বাপেক্ষা প্রিয় ব্যক্তিত্ব এই গ্রাম্য লোকটিই। 


<

রইল বিচারক ও মারওয়ানের কথা। তাদের কেউ হয়ত আমাকে স্বর্ণ দিয়ে ভরে দেবে, আর কেউ হয়ত রৌপ্য দিয়ে ভরে দেবে, কিন্তু এই গ্রাম্য লোকটির নিকট থেকে যে প্রেম-ভালবাসা, আদর-সোহাগ, মায়া-মমতা পেয়েছি এবং সে সাহায্য-সহযোগিতা, সহানুভূতি সহমর্মিতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সান্ত্বনা, সহ্য-ধৈর্য ও স্ত্রীর মনোরঞ্জনের যে অনুপম দৃষ্টান্ত পেয়েছে, তা অন্য কারো দ্বারা অসম্ভব প্রায়।


 আপনি যদি আমাকে পূর্বের স্বামীর নিকট ফিরিয়ে দেন, তাহলে এটাকে আপনার অনুগ্রহ মনে করব।" প্রিয় পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ। সুন্দরী মেয়েটির আবেগমাখা উত্তরটি হয়ত আপনাদের ভাল লেগেছে।


 আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যেন এমন গভীর মুহাববত ভালবাসা, এমন দৃঢ় উলফত দান করেন এবং একে অপরের জন্য জীবন উৎসর্গকারী, একে অপরের জন্য নিবেদিত প্রাণ বানিয়ে দেন। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রেম-ভালবাসার এমন অবিচ্ছেদ্য বন্ধনই থাকা উচিত।


আরো পড়ুন, 

ইসলামিক দৃষ্টিতে বিয়ের ফযীলত


স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার গল্প |ইসলামে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা
স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা

إرسال تعليق

أحدث أقدم