মদিনা সনদ ও মদিনা সনদের তাৎপর্য

মদিনা সনদের গুরুত্ব
মদিনা সনদ 

মদিনা সনদ ও মদিনা সনদের তাৎপর্য

মদীনা সনদ কি

মদীনা সনদ রাসুল করীম (সাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের পর একদিকে যেমন ইসলামতিষ্ঠিক মুসলিম উম্মাহ গঠিত হয় অন্যদিকে তেমনি ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি প্রতিষ্ঠ পায়।


 রাসূল (সা:)-এর মদীনায় গমনের অব্যবহিত পরেই মুআধাত-এর ক্রমধারার তাঁর কিতাব বা মদিনা সনদ জারী করা হয়। 


মদিনা সনদের গুরুত্ব 

প্রথম লিখিত সনদ

প্রথম লিখিত সনদ হচ্ছে মদিনা সনদ।এটি ইতিহাসের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে স্বীকৃত। দুআঘাতে মুসলিম ভাতৃত্বের প্রকাশ স্পষ্ট আর মদীনা সনদে ইসলামী বা মুসলিম উম্মাহর ভিত্তি প্রকাশিত। 


কিন্তু মদীনা সনদে সেই সঙ্গে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে জনগণকে মদীনার নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। 


মদীনা সনদের গুরুত্ব


মদীনা সনদের ভিত্তি আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাসুলুল্লাহ (সা:)-এর নেতৃত্ব ও প্রাধান্য এবং ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকার কাঠামোর স্বীকৃতি নির্ভর মদীনা সনদের গুরুত্ব মদীনা সনদে খুবই পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে- পরম করুণাময় আল্লাহর নামে ।


 মদিনা সনদের প্রণেতা

মদিনা সনদ আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা:) কর্তৃক প্রণীত।তিনি এই মদনা সনদের প্রণেতা।মদিনা সনদের এর আওতাধীন হচ্ছে কুরাইশ মুসলিম ইয়াসরীবের সকল বিশ্বাসী ও মুসলিম এবং যাঁরা তাঁদের অনুসারী এবং এ ভাবে যাঁরা তাঁদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং যাঁরা তাঁদের সঙ্গে জিহাদে অংশ নেয় (দ্রষ্টব্য, ইন ইসহাক, সীরাত রাসূলুল্লাহ (সা:)। 

মদিনা সনদ কত সালে লেখা হয়

মদিনার সনদ  হলো ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে (অথবা ১লা হিজরি সালে) মক্কা থেকে মদিনায় গমনের (হিজরত) পর নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রণয়নকৃত শান্তিস্থাপনের একটি প্রাথমিক সংবিধান

এ সনদের দলীলে উল্লেখিত মুহাজির ও আনসারগণকে বাকি লোকদের থেকে পৃথক করে এক ঐক্যবদ্ধ 'উম্মাহ্ আল্লাহ' বা আল্লাহর সমাজ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। 


এ উম্মতের এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক রাসুলুল্লাহ (সাঃ)। এ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং এটিকে শাসনের অধিকার আল্লাহর এবং তাঁর নামে রিসালতের বাহক।


মদিনা সনদের গুরুত্বপূর্ণ ধারা সমুহ


 খিলাফতুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মদীনা সনদের ১, ১৫, ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ থেকে স্পষ্ট যে, একমাত্র মুসলমানরাই এ সনদের সদস্য কেননা ইসলামী বন্ধনই উন্মর ভিত্তি।


 মুহাম্মদ ফুয়াদ আল বাকীর মতে, আল কুরআনের পরিভাষা উম্মাহ্ শব্দটি ঐ মহা গ্রন্থে ৫১ বার এসেছে এবং এর বহুবচন উমাম শব্দটি ১৩ বার এসেছে। এ উম্মাহ্ শব্দটি ৩০৩টি হাদীসে লক্ষনীয়। 


ওয়াট তাঁর “আইডিয়েল ফ্যাক্টরস অব দি অরিজিন অব ইসলাম এ স্বীকার করেছেন যে, যারা রাসূল (সা:) এবং তাঁর বাণীকে গ্রহণ করেছে তাঁদের নিয়েই এ সমাজ গঠিত হয়েছিল। 


মদিনা সনদের গুরুত্ব

মদিনা সনদের ৪৭ ধারা


যে সব গবেষক বলেন যে, মদীনার মুসলিম, ইহুদী ও পৌত্তলিকরা উম্মাহ্র ভিতর ছিল, তারা কেবল মদীনা সনদেরই বিরোধী নয়, বরং ইসলামভিত্তিক উম্মাহর ধারণাকেই বিকৃত করেন) মদীনা সনদের অনুচ্ছেদে


 আনসার ও মুহাজিরগণকেই কেবল "উম্মাহ ওয়াহিদাহ" বা এক সমাজ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। ইবন হিশাসের “সীরা" গ্রন্থ (রাসুলুল্লাহ সা:-এর জীবনী),


 রিউবেন লেভীর “দি স্যোশাল স্ট্রাকচার অব ইসলাম” এবং ডব্লিটি, মন্টোগোমারী ওয়াটের "মুহাম্মদ এ্যাট মদীনা” গ্রন্থে এ কথার স্বীকৃতি রয়েছে ।


মদীনা সনদের ১ অনুচ্ছেদে মুসলিমদের পার্থক্য নির্দেশকরতঃ 


এক উম্মাহর ঘোষণার অনুকূলে ১৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, বিশ্বাসীরা একে অন্যের বন্ধু (মাওয়ালী) । এক বচন মাওলার বহু বচন মাওয়ালী । মদীনা সনদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের আওতাধীন অবস্থায়


 স্বীকৃতি দেয়া হলেও, নিরাপত্তা অধিকার-মর্যাদা-স্বাধীনতা দেয়া হলেও বিশ্বাসী মুসলিমরা ছাড়া অন্যরা যে এর বাইরে তা ২৫ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে ইবন হিশামের টেক্সর (২য় খণ্ড) পৃষ্ঠা ৫০১-৫০৪ থেকে


 দেখা যায় যে, সেখানে আছে "উম্মাতুন মা'আ আল-মুমিনিন", "উম্মাতুন মিন আল-মুমিন নয়। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, বনু আওয়ের ইহুদীরা মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েও বিশ্বাসীদের তথ্য মুসলিমদের


মদিনা সনদের গুরুত্ব


 বাইরে এক আলাদা সম্প্রদায়। আরবি ভাষার পণ্ডিতগণ মা'আ এবং মিন-এর তফাৎ বুঝেছেন বলে শুদ্ধ উদ্ধৃতি ইউরোপীয় ও প্রচাদেশীয়রা উম্মাহ' ধারণাটির ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন আরবীর ভ্রাপ্ত অর্থ করার কারনে ।



মদীনা সনদ অনুযায়ী ইহুদীদের নিকট ইহুদীদের ধর্ম এবং মুসলিমদের নিকট তাদের ধর্ম ইসলাম। তাদের মাওয়াগী ও তাদের প্রতিও এটি প্রযোজ্য ছিল। গভীর ব্যাখ্যা থেকে দেখা যায়, মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের


 মুসলমানগণ এককভাবে মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভূক্ত ছিল। আর সকল অমুসলিম পৌঞ্চলিক, ইহুদি, খ্রিস্টানরা হালীফের মর্যাদা পেয়েছিল। তারা নিরাপত্তা ও সম অধিকারসম্পন্ন নাগরিকের মর্যাদা লাভ করেছিল। 


মদীনা সনদের ১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ইহুদীদের মধ্যে যে বা যারা আমাদের অনুসরণ করে তাদের জন্য আমাদের সাহায্য সমর্থন রয়েছে। তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না কিংবা তাদের শত্রুদেরও সাহায্য করা হবে না। 


২৫ অনুচ্ছেদে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদত্ত হয়েছে। আবার ২৪, ২৭, ৩৮ অনুচ্ছেদে সর্ব ব্যাপারে মুসলিমদের সঙ্গে তাদের সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।


মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রে ক্রিয়াশীল মদীনা সনদে ইসলামী উম্মাহর সঙ্গে অনুসলিমগণের সংশ্লিষ্টতার প্রধান কারণ ছিল, তারা মদীনার রাষ্ট্রীয় তৃথরের অধিবাসী ছিল এবং এ জন্যে


 তাদেরকে ইসলামী রাষ্ট্রে আত্মত্মীকৃত করা হয়েছিল। সংবিধান হিসেবে মদীনা সনদ মুসলিম উম্মাহ সকল সদস্য ও সহযোগী সম্প্রদায়গুলিকে এক ঐক্যবদ্ধ অধিকার ভোগ ও দায়-দায়িত্বে সংযুক্ত


মদিনা সনদের গুরুত্ব


 করেছিল। সাংবিধানিক অধিকার ও স্বাধীনতার স্বীকৃতি যেমন ছিল সবার জন্য, তেমনি লেনদেন পরিশোধ, মদীনা রাষ্ট্রের অধিবাসীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাইরের আক্রমণ থেকে প্রতিরক্ষা এবং


 আল্লাহর রাসূল (সা:)-এর আদেশ নিষেধ মান্য করা বাধ্যতামূলক ছিল। “দি লাইফ অব মুহাম্মদ (সা:) গ্রন্থে মুহাম্মদ হুয় হায়কল বলেন, ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মদ (সা:) কর্তৃক রচিত রাজনৈতিক দলিলটি


 ধর্মবিশ্বাস ও বাক স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্র, মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান ও অপরাধ দমে প্রশ্নে রাজনৈতিক জীবনে এক নয়া দিগন্তের উনেষ ঘটিয়েছিল।


মদীনা সনদ থেকে স্পষ্ট যে, উম্মাহ ও ইসলামী রাষ্ট্রের সংগঠনের মধ্যে একটা পার্থক্য ছিল। উম্মাহ ছিল কেবল ইসলামের ভিত্তিতে সামাজিক সংগঠন। আর ইসলামী রাষ্ট্র ইসলামী আদর্শ ও জীবন ব্যবস্থা


 বাস্তবায়নের সাথে সাথে রাজনৈতিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় রেখেছিল । উম্মাহ্ তাই কেবল মুসলিমদেরই অন্তর্ভুক্ত করেছিল। অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেয়ায় মুসলিমদের সঙ্গে নিরাপত্তা ও শান্তিতে থাকার শর্তে অমুসলিমরাও মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।


 মদীনা সনদের ৪৭ টি ধারা


মদীনা সনদের ১ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়ে নিশ্চয়তা সৃষ্টির প্রয়াস ছিল। এ সনদের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা:) নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক সরকার প্রধান, আইনের ব্যাখ্যা, শাসক, সেনাপতি, ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক এবং সমাজ কাঠামোর নিয়ন্ত্রক


 হিসেবে চূড়ান্ত স্বীকৃতি পান। সকল বিষয়ে আল্লাহর বিধানানুযায়ী ফয়সালার কর্তৃত্ব লাভ করেন তিনি। সনদের মুখবন্ধ এবং ১৩৪৭ অনুচ্ছেদ থেকে এর ইসলামী চরিত্র ও রাসুলুল্লাহ (সা:) কর্তৃত্বের বিষয় স্পষ্ট হয় ।

অবশ্যই পড়ুন,

ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন