হযরত হাজের (আ.) এর জীবনী



হযরত হাজের (আ.) এর জীবনী
হযরত হাজের (আ.) এর জীবনী


হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর স্ত্রী বিবি হাজেরাঃ


হযরত হাজেরা (আ.) এর নাম আমরা অনেকেই শুনেছি। তিনি ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর স্ত্রী এবং হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর মাতা ।


হযরত ইসমাঈল যখন দুগ্ধপায়ী শিশু, তখন আল্লাহ তা'আলার মর্জি হল হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সন্তানদের মাধ্যমে মক্কা আবাদ করবেন । অথচ তখন মক্কা নগরী ছিল এক জনশূন্য প্রান্তর । 

হযরত ইবরাহীম (আ.) তখন স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈল সহ বর্তমান ফিলিস্তিনের খলীল শহরে বাস করতেন। আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আ.)কে আদেশ করলেন, হযরত হাজেরাকে তাঁর দুধের শিশুসহ মক্কায় রেখে এসো।

 আমিই তাঁদেরকে রক্ষা করব । আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইবরাহীম (আ.) সন্তান ও স্ত্রীকে সেই জনশূন্য প্রান্তরে রেখে এলেন। সম্বল হিসেবে রেখে এলেন এক মশক পানি আর এক থলে খেজুর ।

 হযরত ইবরাহীম (আ.) যখন হযরত হাজেরা (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) কে সেখানে রেখে শামদেশে চলে আসিতে ছিলেন, তখন হযরত হাজেরা (আ.) পিছে পিছে আসছিলেন আর বলছিলেন হযরত ইবরাহীম (আ.) কে, আপনি এখানে আমাদেরকে একাকী রেখে যাচ্ছেন?


 হযরত ইবরাহীম (আ.) কোন জবাব দিচ্ছিলেন না। অবশেষে হযরত হাজেরা (আ.) জিজ্ঞেস করলেন : আপনি কি আপনার প্রভুর নির্দেশে আমাদেরকে রেখে যাচ্ছেন? হযরত ইবরাহীম (আ.) বললেন : হ্যাঁ!

 তখন হযরত হাজেরা (আ.) বলে উঠলেন : তাহলে আমাদের আর কোন চিন্তা নেই । আল্লাহ নিজেই আমাদের অবস্থা দেখবেন ।


তারপর হযরত হাজেরা (আ.) আল্লাহর উপর ভরসা করে সেখানেই বসবাস করতে লাগলেন। ক্ষুধা পেলে খেজুর খেয়ে পানি পান করে নিতেন আর হযরত ইসমাঈল (আ.)কে দুধ পান করাতেন । 

ধীরে ধীরে যখন মশকের পানি ফুরিয়ে গেল, তখন মা পুত্র উভয়ের পিপাসা বাড়তে লাগল । শিশু ইসমাঈল পিপাসায় ছটফট করতে লাগল। মা হাজেরা সন্তানের এই দশা বরদাশত করতে পারলেন না। 

কোন মা-ই সন্তানের এই করুণ দশা সহ্য করতে পারে না। সন্তানের এই করুণ দশা দেখে মা হাজেরা পানির সন্ধানে নেমে পড়লেন । দৌড়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী 'সাফা' পাহাড়ে আরোহণ করলেন।

 চারদিকে দৃষ্টি মেলে দেখলেন কোথাও পানির সন্ধান পাওয়া যায় কিনা। সেখানে পানির সন্ধান না পেয়ে পার্শ্ববর্তী 'মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করলেন। দুই পাহাড়ের মাঝখানের সমতল ভূমির মাঝে কিছুটা স্থান নিচু আছে। 

যতক্ষণ পর্যন্ত সমতল ভূমিতে হাটতে ছিলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বাচ্চাকে দেখতে পাচ্ছিলেন এবং তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হেঁটে হেঁটে অগ্রসর হচ্ছিলেন! যখন ঐ নিচু স্থানে আসলেন, তখন আর বাচ্চাকে দেখা যাচ্ছিল না। 

তাই দৌড়ে ঐ নিচু স্থান পার হয়েছিলেন। মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে আবার চারদিকে দৃষ্টি মেলে দেখলেন কোথাও পানির সন্ধান পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু সেখানেও পানির কোন সন্ধান পেলেন না। 

আবার ছুটে গেলেন সাফা পাহাড়ে। এভাবে সাতবার পানির সন্ধানে উভয় পাহাড়ে চক্কর দিলেন এবং দুই পাহাড়ের মাঝখানের সেই নিচু স্থানটি প্রতিবারই দৌড়ে অতিক্রম করলেন । 

হযরত হাজেরা (আ.)-এর এই আমল আল্লাহ তাআলার কাছে খুব পছন্দ হল। সোহমতে তিনি এই সাফা-মারওয়ার ছোটাছুটিকে হাজীদের নিয়মিত আমলের তালিকাভুক্ত করে দিলেন। 

এখনও সকল হাজীকে সাফা মারওয়ার মাঝে সায়ী করার সময় মাঝখানের সেই নিচু স্থানটুকু দৌড়ে অগ্রসর হতে হয় ।


‘মা’ হাজেরা (আ.) যখন ছুটতে ছুটতে অবশেষে যখন মারওয়া পাহাড়ে এসে দাঁড়ান, তখন একটি আওয়াজ শুনতে পান। আওয়াজ শুনে তিনি থমকে দাঁড়ান। কিছুক্ষণ পর আবার সেই আওয়াজ শুনতে পান।

 কিন্তু কাউকে দেখতে পান না। হযরত হাজেরা আওয়াজ দিয়ে বললেন : আমি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি ! কেউ সাহায্য করার থাকলে সাহায্য করুন।

 ঠিক তখনই যমযম কূপের স্থানটিতে একজন ফেরেশতাকে দেখা গেল । ফেরেশতা সেখানে তার ডানা দ্বারা আঘাত করলেন । আর সেখান থেকে পানি উথলে উঠতে লাগল । 

হযরত হাজেরা (আ.) চারদিকে মাটির বাঁধ তৈরি করে পানি আঁটকাতে লাগলেন । পানি দিয়ে মশক ভরে নিলেন । শিশু ইসমাঈলকে পানি পান করালেন । নিজেও পান করলেন ।


ফেরেশতা বললেন : ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এখানে আল্লাহর ঘর রয়েছে । এই ছেলে এবং তার পিতা মিলে এই ঘর নির্মাণ করবে । এখানেও জনবসতি গড়ে উঠবে।

 তারপর দেখা গেল অল্পদিনের মধ্যেই সেখানে জনবসতি গড়ে উঠল। একসময় হযরত ইসমাঈল (আ.) বড় হলেন এবং বিবাহ করলেন । অতঃপর হযরত ইবরাহীম (আ.) আগমন করেন। 


পিতা পুত্র মিলে কা'বা ঘর নির্মাণ করেন। তখন যমযমের পানি মাটির নিচে চলে গিয়েছিল । কিছুদিন পর কূপের আকারে যমযম আত্মপ্রকাশ করে ।


হযরত হাজের (আ.) থেকে শিক্ষনীয় বিষয়ঃ

এখানে একটা লক্ষ করার বিষয় হল, হযরত হাজেরা (আ.) এর অন্তরে আল্লাহ তাআলার প্রতি কত গভীর ভরসা ছিল। 

তিনি যখন জানতে পারলেন, এই নির্জন মরুভূমিতে আল্লাহর নিদের্শেই তাঁকে রেখে যাওয়া হচ্ছে, তখন তিনি চিন্তামুক্ত হয়ে গেলেন এবং সম্পূর্ণ আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে সেখানে থাকতে লাগলেন। 

আর আল্লাহর উপর ভরসার কারণে এতসব বরকত লাভ করলেন। সত্যিই যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তাআলাই তার সবকিছু দেখেন। 

আমরা অনেকে একটু পেরেশানী এলেই ঘাবড়ে যাই, আল্লাহর উপর ভরসা করার কথা ভুলে যাই । অথচ আল্লাহর উপর ভরসা করাই পেরেশানী দূর করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা । একমাত্র তিনিই পারেন সব পেরেশানী দূর করতে। ।

আরো পড়ুন, 

মহীয়সী নারী বিবি রহমত






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন