হযরত সাফূরা (আ.) এর জীবনী



হযরত সাফূরা (আ.)

হযরত মূসা (আ.)-এর স্ত্রী বিবি সাফূরা


হযরত মূসা (আ.)-এর স্ত্রীর নাম ছিল সাফূরা। সাফূরা ছিলেন হযরত শুআইব (আ.)-এর বড় কন্যা। তিনি কীভাবে হযরত মূসা (আ.)-এর স্ত্রী হলেন, তার একটি প্রেক্ষাপট ছিল। 

হযরত মূসা (আ.) মিসরে বসবাস করতেন। মিসরে তখন ফেরআউনের রাজত্ব ছিল। একদিন ফেরআউনী গোত্রের এক লোক হযরত মূসা (আ.)-এর গোত্রের এক ব্যক্তির ওপর অন্যায়ভাবে আক্রমণ করল । 

মূসা (আ.)-এর গোত্রের লোকটা হযরত মূসা (আ.)-এর কাছে সাহায্য চাইল। হযরত মূসা (আ.) তার সাহায্যে এগিয়ে আসলেন এবং ফেরআউনী গোত্রের লোকটাকে শাসন-মূলক একটা থাপ্পড় দিলেন।


 ঘটনাক্রমে সেই থাপ্পড়ে লোকটা মারা গেল। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল । ফেরআউন হযরত মূসা (আ.)কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল । 

তখন হযরত মূসা (আ.) আত্মগোপন করে পালিয়ে মিসর থেকে বর্তমান সৌদী আরবের মাদইয়ান এলাকায় চলে গেলেন ।


হযরত মূসা (আ.) যখন মাদইয়ানের উপকণ্ঠে পৌছেন, তখন দেখেন অনেকগুলো রাখাল কূপ থেকে পানি তুলে নিজ নিজ ছাগল-বকরিগুলোকে পান করাচ্ছে । 

তিনি দেখলেন সেখানে দুইজন মেয়ে পানি পান করানোর জন্য তাদের ছাগলগুলো কূপের দিকে নিয়ে এসেছে এবং তারা সকলের পেছনে অপেক্ষা করছে । 

হযরত মূসা (আ.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা মেয়ে মানুষ হওয়া সত্ত্বেও নিজেরা কেন ছাগল চরাতে এসেছ এবং দূরে দাঁড়িয়ে আছ কেন?

 তারা জানাল, আমাদের বাড়িতে কাজ করার মতো কোন পুরুষ মানুষ নেই। তাই ছাগল চরাতে আমাদেরকেই আসতে হয়। 

কিন্তু আমরা মেয়ে মানুষ, তাই দূরে অপেক্ষা করছি। পুরুষরা চলে যাওয়ার পর আমরা আমাদের ছাগলকে পানি পান করাব। তাদের কথা শুনে হযরত মূসা (আ.) এর খুব মায়া হল।

 তিনি সঙ্গে সঙ্গে ভিড় ঠেলে নিজ হাতে পানি তুলে তাদের ছাগলগুলোকে পান করিয়ে দিলেন। মেয়ে দুটি বাড়িতে গিয়ে তাদের শ্রদ্ধেয় পিতা, বিশিষ্ট নবী হযরত শুআইব (আ.)-এর কাছে পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করল ।


ঘটনা শুনে হযরত শুআইব (আ.) বড় মেয়েকে এই বলে পাঠালেন যে, যাও আবার সেখানে গিয়ে লোকটিকে ডেকে নিয়ে এসো ! মেয়েটি এসে সলজ্জকণ্ঠে হযরত মূসা (আ.)কে জানাল যে,

 আমার পিতা হযরত শুআইব (আ.) আপনাকে যাওয়ার জন্য বলেছেন । হযরত মূসা (আ.) সঙ্গে সঙ্গে রওনা হলেন এবং হযরত শুআইব (আ.)-এর সাথে সাক্ষাত করলেন ।

 হযরত শুআইব (আ.) মূসা (আ.)-এর ঘটনা শুনে তাঁকে সর্বপ্রকার সান্ত্বনা দিয়ে বললেন : আমার ইচ্ছা আমার একটি মেয়ে তোমার কাছে বিবাহ দিব । তবে শর্ত হল ৮ বৎসর অথবা ১০ বৎসর আমার ছাগল চরাতে হবে । 

হযরত মূসা (আ.) শর্তে রাজি হয়ে গেলেন। একসময় বড় মেয়ের সাথে বিবাহ হয়ে গেল। এই মেয়েরই নাম ছিল সাফূরা। বিবাহের পরও হযরত মূসা (আ.) কিছুদিন সেখানেই অবস্থান করতে লাগলেন ।


এরপর একদিন হযরত মূসা (আ.) পুনরায় মিসরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন । পথে প্রচণ্ড শীত পড়ল । তূর পাহাড়ের কাছে এলে শীতের প্রচণ্ডতার কারণে আগুনের প্রয়োজন হল। 

আগুনের সন্ধানে তিনি এদিক সেদিক দৃষ্টি ফেরাতে থাকলেন । তূর পাহাড়ে আগুন দেখা গেল । তিনি আগুন আনতে গেলেন। গিয়ে দেখলেন সেতো

 আগুন নয়, আল্লাহর নূর এবং সেখানেই আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা (আ.)-এর সাথে কথা বললেন এবং তাঁকে নবুওয়াত দান করলেন।



লক্ষ করার বিষয় হল হযরত মূসা (আ.)-এর স্ত্রী হযরত সাফূরা ছিলেন নবীর মেয়ে । নবীর মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তিনি কত কষ্ট করে ঘরের কাজ করতেন । 

পুরুষ মানুষ না থাকায় অপারগ হয়ে বকরী পর্যন্ত চরাতেন। এসব কাজ করতে কোন লজ্জাবোধ করতেন না। কোন অহংকার করতেন না। 

অপারগ হয়ে যখন পরপুরুষের কাছে নিজের সমস্যার কথা বলেছেন তখনও অত্যন্ত লজ্জা ও বিনয়ের সাথে বলেছেন।

 সুতরাং ঘরের কাজের ক্ষেত্রে লজ্জা করা বা অলসতা করা ঠিক নয় । নিজের কাজ নিজেরই করা ভাল ।

আরো পড়ুন, 






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন