খিলাফত ও খুলাফায়ে রাশেদীন

খোলাফায়ে রাশেদীন কারা


খিলাফত ও খুলাফায়ে রাশেদীন | খোলাফায়ে রাশেদীন কাকে বলে
খিলাফত

খিলাফত ও খুলাফায়ে রাশেদীন

খিলাফত কি:

খিলাফত হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা ইসলাম ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। যে কোন পদ্ধতি থেকে এটি এক ভিন্ন ধরণের সরকার পদ্ধতি। এটি ছিল এক প্রকার শাসন পদ্ধতি।

 প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিক ইবনে খালদুন এর মতে, খিলাফত এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা হযরত মুহাম্মদ (স) এর মিশনের প্রতিনিধিত্ব করে বা স্থলাভিষিক্ত করে।

 তিনি আরও বলেন যে হযরত মুহাম্মদ (স) এর মৃত্যুর পরে যাঁরা তাঁর আদর্শ প্রচারণার দায়িত্ব পালন করেন তাঁদেরকে খলিফা বলা হয়। সুতরাং খলিফা হচ্ছেন মহানবীর প্রতিনিধি । 

একাধারে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের নেতা অন্য দিকে ইমাম ঐতিহাসিক পি.কে. হিটির মতে, এটি এমন একটি যুগ ছিল যে, যুগে হযরত মুহাম্মদ (স) এর জীবনাদর্শ, খলিফাদের চিন্তাধারা ও কর্মের উপর

 জ্যোতিময় আলোক প্রভাব বিস্তার করা থেকে বিরত হয় নি। তারা তিরিশ বছর কাল মুসলিম জাহানের খেলাফতের পদ অলংকৃত করেছিলেন।


খোলাফায়ে রাশেদীন কাকে বলে

খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ:

 রাজনীতির ক্ষেত্রে খলিফাদের আচরণ নিয়ন্ত্রিত হতো পবিত্র কুরআনের কালেমার রাজনৈতিক বিধি বিধান ও আদর্শের দ্বারা। আইনের শাসন তাঁদের কঠোরভাবে মেনে চলতে হতো।

 জনস্বার্থ কিংবা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কথা বলে তাঁরা আইনের শাসন থেকে অব্যাহতি পেতেন না। ইসলামী অনুশাসনের পরিমণ্ডলে জনসাধারণ রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনার পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতেন। ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবুবকর ছিদ্দিক (রা) নির্বাচিত হয়ে জনগণের কাছে বললেন, আমি যতক্ষণ আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মেনে চলবো ততক্ষণ আমি আপনাদের আনুগত্যের অধিকারী। আমি ঠিক পথে চললে আপনারা আমাকে অনুসরণ করবেন। আমি ভুল করলে আপনারা আমার ভুল সংশোধন করে দিবেন।


খোলাফায়ে রাশেদীন কারা


দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা) ঘোষণা করেছিলেন, উম্মাহর সমর্থন না থাকা সত্ত্বেও যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে তাঁদের এবং তাঁদের সমর্থকদের হত্যা করা উচিত।

 হযরত উমর (রা) তাঁর খিলাফতকালে সাম্য ও স্বাধীনতার মহৎ আদর্শ স্থাপন করেছিলেন। সপ্তম শতাব্দীর ইসলামী রাষ্ট্র দরিদ্র ও বঞ্চিতদের সর্বপ্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল হযরত উমর (রা)। 

হযরত উমর (রা) বলেছিলেন যদি ফোরাত নদীর তীরে একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায় বিচারের দিনে তার জন্য উমরকেই জবাবদিহি করতে হবে। খলিফাগণ রাতের অন্ধকারে খুঁজে বেড়াতেন কারা অভাব অনটনে আছে ।

খোলাফায়ে রাশেদীন কারা

খোলাফায়ে রাশেদীন কাকে বলে

খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে উচ্চ ও নিম্ন কর্মচারীদের মধ্যে বেতনের আকাশ পাতাল তারতম্য ছিল না। ইসলামের স্বর্ণযুগের খলিফা এবং রাষ্ট্রের সর্বনিম্ন কর্মচারীদের জীবন মানের মধ্যে তেমন

 পার্থক্য ছিল না। সরল জীবনযাত্রা ও কষ্টসাধন ছিল তাঁদের জীবনের বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণের অর্থে ধনী হওয়ার প্রবণতা তাঁদের ছিল না। খলিফাগণ অতি

 সাধারণ জীবনযাত্রার আদর্শ তুণে ধরেছিলেন ইসলামী রাষ্ট্রনীতির একটি মৌলিক দিক হল যে,

প্রশাসকদের জীবনযাত্রার মান কিছুতেই জনগণের জীবনযাত্রার মান থেকে উন্নত হবে না। জনগণ হল মনিব, আর শাসক হল ভৃত্য। খলিফা উমর (রা) জোতদারীর মূলে কুঠারাঘাত করেছিলেন। 

তাঁর খিলাফতকালে সাহাবিরা জমি কিনতে পারতেন না। অলিফাগণ বিশ্বাস করতেন যে, প্রত্যেক অভাবগ্রস্ত তারা তাদের সম্পদের এক একজন অংশীদার। 

পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদের মালিক আল্লাহ। তাঁরা প্রতিবেশীর অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতেন এবং প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করার ব্যবস্থা করতেন।

 সমাজ থেকে অত্যাচার ও অনাহার নির্মূল করে সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ছিল তাঁদের প্রধান কাজ।


ইসলামী রাষ্ট্রদর্শন মতে, রাষ্ট্র, সরকার এবং ধর্ম আলাদা নয়, বরং একই সূত্রে আবদ্ধ। ইসলাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলতে বলে সুবিচার করে না ইসলাম তা সমর্থন করে না।

 সপ্তম শতাব্দীর প্রথমভাবে হযরত মুহম্মদ (স:) মদিনায় এক সফল রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানুষের সার্বিক কল্যাণ উচ্ছেদ করা হয়েছিল


 বর্ণগত, গোৱগত, জাতিগত ও অঞ্চলগত প্রভেদ জগনভাবে শাসনকর্তাদের সমালোচনা করতে পারতেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসন পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত ছিল। 

তাঁরা জনগণের ইচ্ছাকে সরকার ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কঠোরভাবে মেনে চলতেন। উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষমতা গ্রহনের নীতি তারা * অপছন্দ করতেন। 

বিশ্বাস করা হতো যে, প্রতিটি নাগরিকই আইনের চোখে সমান। কেউ শরীয়তের উর্ধ্বে নয়। ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলে মনে করা হয়।

আরও পড়ুন, 

ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ

ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশ্ব নবীর ভুমিকা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন