শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায়

শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায়

শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায়

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঠিকমতো না হলে তা স্মৃতিশক্তি সেভাবে গড়ে ওঠে না। দুর্বল স্মৃতিশক্তির শিশুকে স্কুলে, খেলার মাঠে, ঘরে মোটকথা সব জায়গাতেই অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এতে তার আত্মবিশ্বাস দিন দিন কমতে থাকে।


তবে এমন কিছু উপায় আছে যার মাধ্যমে শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। যদি শিশুটির বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকে তবে এই টিপসগুলো তার স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্ককে আরও তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করবে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পুরো ব্যাপারটি। চলুন দেখে নিই।


মেমরি-বুস্টিং গেম


শিশুর স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানবৃদ্ধির মজার ও চ্যালেঞ্জিং উপায় হলো মেমরি গেম খেলা। এগুলো নিজেদের তৈরি গেম হতে পারে এবং যেকোনো জায়গায় খেলা যেতে পারে। যেমন- বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বোর্ড গেম বা একা অথবা বন্ধুদের সঙ্গে অনলাইন গেমও হতে পারে।

তবে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে, আপনার সন্তান কোন ধরনের গেম খেলছে। প্রয়োজনে আপনি তাকে কিছু গেম নির্বাচনে সহায়তা করুন। এগুলো খেললে তার মস্তিষ্ক আরও সাড়া দেবে এবং যেকোনো তথ্য সঠিকভাবে মনে রাখার ক্ষমতা বাড়াবে।


চাপ ছাড়াই শেখা


এটি বিশেষ করে স্কুলে শেখার জন্য প্রযোজ্য। প্রতিটি শিশুরই শেখার নিজস্ব পদ্ধতি থাকতে পারে। তাই অভিভাবকদের উচিত পাঠ্যবইগুলো বুঝে ওঠার জন্য তাকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া এবং নতুন কিছু শেখার সময় কোনো ধরনের চাপ না দেয়া। না পারলেও তাকে চাপ দিতে যাবেন না। এতে সে হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারে। এর পরিবর্তে তার কৌতূহলকে বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। তাকে উৎসাহিত করতে হবে। তার সামনে নতুন নতুন জিনিস শেখার আগ্রহ তৈরি করতে হবে।


পর্যাপ্ত ঘুম


স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য দরকার পর্যাপ্ত ঘুম। শিশু যেন প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা গভীর ঘুম দিতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। শিশুর জন্য ঘুমের সময়সূচি রাখা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, সে যেন সময়মতো বিছানায় যায়। তাহলে পরের দিন স্কুলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারবে। প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে দেখা কার্টুনগুলো মনে রাখতে বিকেলের ঘুম শিশুদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ অবদান রাখে।


সবুজ শাক-সবজি


শিশুর খাদ্যতালিকায় ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, খনিজ ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। এগুলো শিশুর পুষ্টির উৎস। এ, বি, সি, ই এবং কে ভিটামিন একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সবজির মধ্যে পালং শাক, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা,সরিষার পাতা, লেটুস, বিটরুট পাতা ইত্যাদি রাখতে পারেন। এগুলো যেন সে খায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।


বাদাম ও বীজ


সারা দিন উদ্যমী থাকার জন্য শিশুর পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ডায়েটে বাদাম এবং বিভিন্ন ধরনের বীজ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এগুলো শক্তি সরবরাহ করে এবং মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে। আখরোটে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২৮ দিন নির্দিষ্ট সময়ে বাদাম খেলে যেকোনো ঘটনা মনে রাখতে উল্লেখযোগ্যভাবে ভূমিকা রাখে। অন্যান্য স্বাস্থ্যকর বাদামের মধ্যে আছে- চিনাবাদাম, পেস্তা ও কাজু, যা পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিতে ভরপুর। কুমড়োর বীজ, চিয়া বীজ, তিল, সূর্যমুখী বীজ এবং ফ্ল্যাক্সসিডের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান শিশুদের জ্ঞান বিকাশকে উন্নত করে। এগুলো সরাসরি খাওয়া যেতে পারে বা কেক, মিল্কশেক, ক্ষীর ইত্যাদিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।


মাছ ও ডিম


আমাদের মস্তিষ্ক ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ডিএইচএর মতো চর্বি দিয়ে গঠিত, যা বেশির ভাগই ডিমের কুসুম এবং স্যামনের মতো মাছে পাওয়া যায়। এই সুপারফুডগুলো মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু কোষগুলো সক্রিয় রাখে। পাশাপাশি শেখার শক্তি এবং স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তোলে। শিশু যদি নিরামিষ খাবার খায়- তবে এগুলো তাদের নিয়মিত ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন