ইসলাম শব্দের অর্থ কি | ইসলাম কি ও কেন

ইসলামের বর্ণনা


ইসলাম শব্দের অর্থ কি | ইসলাম কি ও কেন


ইসলাম শব্দের অর্থ ঃ

ইসলাম শব্দের অর্থ হলো- শান্তি, নিরাপত্তা, সমর্পণ। শরিয়তের পরিভাষায় ইসলামের অর্থ হলো, মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট আত্মসমর্পণ করে তাঁর সমস্ত হুকুম-আহকাম ও বিধি-বিধান মেনে চলা।


ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার মনোনীত একমাত্র দীন বা জীবন বিধান। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ কিভাবে জীবন যাপন করবে এতে তারই বিধি-বিধান রয়েছে। যেমন, আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন—


ان الدين عند الله الإسلام .


উচ্চারণ ঃ ইন্নাদ্দীনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম।


অর্থঃ “নিশ্চয়ই ইসলাম ধর্মই আল্লাহ তা'আলার মনোনীত (পছন্দনীয়) ধর্ম।" 



আল্লাহ ডা'আলার মনোনীত ইসলাম ধর্ম তাঁর প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানুষের মাঝে প্রচার করেন। এ ইসলাম ধর্মের প্রতি যারা বিশ্বাসী এবং অনুরাগী তাদেরকেই মুসলমান বলা হয়। 


আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়াকে সৃষ্টি করে বেহেশতে বসবাস করতে আদেশ দিয়েছেন। তারপর দুনিয়া সৃষ্টির মানসে তাদেরকে দুনিয়ায় অবতীর্ণ করলেন । এবং আল্লাহ্ তা'আলার আদেশে হযরত জিবরাঈল (আ.) মানব জীবনের ক্রিয়াদি শিক্ষা দেন। 


হযরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.)-ই আমাদের আদি মাতাপিতা। সেই হতেই এ পৃথিবীতে যত পয়গম্বর অবতীর্ণ হয়েছেন সকলেই ছিলেন শান্তিকামী। যদিও সেই সমস্ত নবীদের ধর্ম-মতের নাম ইসলাম ছিল না তবুও আদর্শ এবং তাদের মতবাদ ছিল শান্তিপূর্ণ। 


এবং এ পৃথিবীতে যাতে শান্তি বিরাজ করে এ জন্য আল্লাহ তা'আলা যুগে যুগে নবী পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ প্রেরিত পুরুষ আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) আরব দেশে আবির্ভূত হলেন। তখন আরব নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল। আরবের লোকেরা খোদার শান্তির পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, তখন সেখানে শান্তি আনয়ন করার জন্য আল্লাহ নবী করীম (সা.)-কে প্রেরণ করেন।



ইসলামের সাম্যবাদের দৃষ্টান্ত দুনিয়ায় আর নেই। ইসলাম ধর্ম প্রচার অন্যান্য ধর্মের তুলনায় অল্প দিনের। তবুও মুসলমানের সংখ্যা ১০০ কোটির ওপরে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, চীন, জাপান, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভারত ও রাশিয়াসহ সমগ্র বিশ্বের মুসলমানগণ এক। 


এদের ভিতরে খানাপিনা, বিবাহ-শাদী ইত্যাদিতে কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ নেই। এ সাম্যের জোরেই ইসলাম এত অল্প সময়েই সমস্ত পৃথিবীতে ছড়াতে সমর্থ হয়েছে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় প্রবেশ করার আহবান করে কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন— 


أدخلوا في السلم كافة ولا تتبعوا خطوات الشيطن ج إنه لكم عدو مبین


উচ্চারণ ঃ উদ্ খুল ফিসিল্‌মি কাফ্ফাতান ওয়ালা তাত্তাবি'উ খুতুওয়া-তিশ শাইত্বান ; ইন্নাহু লাকুম তু’আদুউম্মুবীন।


অর্থঃ “(আল্লাহ তা'আলা মানুষদেরকে লক্ষ্য করে বলেন,) তোমরা ইসলাম ধর্মের ভিতরে পূর্ণভাবে দাখিল হও এবং শয়তানের অনুসরণ করো না। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।"



 আল্লাহ তা'আলার এ ধরাপৃষ্ঠের প্রতিটি ঘর-বাড়ি, প্রাসাদ ও অট্টালিকাসমূহ বিভিন্ন খুঁটি বা স্তম্ভের সাহায্যে বিদ্যমান রয়েছে। ঠিক অনুরূপভাবে ইসলাম ধর্মও পাঁচটি স্তম্ভের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত আছে। যেমন, ইসলাম সম্পর্কে হযরত জিব্রাঈল (আ.) হুযূর (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন—


الاسلام ان تشهد أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله وثيقة الصلوة وتؤتي الزكوة وتصوم رمضان وتحج البيت إن استطعت اليه سبيلا


উচ্চারণ ঃ আল-ইসলামু আন তাশহাদা আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহি ওয়া তুর্কীমাস্‌ সালাতা ওয়া তু’তিয্যাকাতা ওয়া তাসূমা রামাদ্বানা ওয়া তাহুজ্জাল বাইতা ইনিতাত্বা তা ইলাইহি সাবীলা।


অর্থ ঃ ইসলাম হচ্ছে এ ঘোষণা করা যে, আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর রাসূল এবং নামাজ কায়েম করা এবং জাকাত আদায় করা এবং রমজানের রোজা রাখা এবং আল্লাহর ঘরের হজ করা যদি তারা খরচ বহন করে সেখানে পৌঁছতে সক্ষম হয়।


অন্য এক হাদীসে ইসলামের ভিত্তি বা স্তম্ভ পাঁচটি সম্বন্ধে বলা হয়েছে—


بني الإسلام على خمس شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا عبده و رسوله وإقام الصلوة وإيتاء الزكوة والحج وصوم رمضان


উচ্চারণ ঃ বুনিয়াল ইসলামু 'আলা খামসিন শাহাদাতি আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু ওয়া ইকামিস্ সলাতি ওয়া ঈতাইয যাকাতি ওয়াল হাজ্জি ওয়া সাওমি রামাদ্বানা


অর্থঃ “ইসলাম ধর্ম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত –

(১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল এবং


 (২) নামাজ কায়েম করা এবং 


(৩) যাকাত আদায় করা এবং 


(৪) হজ আদায় করা এবং 


(৫) রমজানের রোজা রাখা।" 


উল্লিখিত পাঁচটি রোকনের কোনো একটিকে বাদ দিয়ে ইসলামের পরিপূর্ণতা কল্পনা করাও অসম্ভব। কোনো লোক যদি উক্ত পাঁচটি ভিত্তির মধ্য থেকে কোনো একটিকে তার বাস্তব জীবনে প্রতিফলন না ঘটিয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ মুসলমান বলে দাবি করে, তবে সেটা হবে তার জন্য অজ্ঞতা, মূর্খতা ও বোকামি।


অতএব ইসলাম ধর্মের সমস্ত মূলনীতি সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত হয়ে তদনুযায়ী আমল করা আমাদের সকলের জন্য অত্যাবশ্যক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন