নামাজে বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নিন

পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত অনন্য এক নিয়ামত। কোরআন তেলাওয়াতকারী মূলত আল্লাহতায়ালার সঙ্গেই কথা বলে থাকেন। নামাজে কোরআন তেলাওয়াত অপরিহার্য বা ফরজ। সুতরাং বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করাও অত্যাবশ্যক।

নামাজে বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নিন
কুরআন 


কেরাত সম্পর্কীয় মাসায়েল অবগত হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের অপরিহার্য দায়িত্ব। ফিকাহ তথা মাসয়ালার কিতাবে নামাজে বিশুদ্ধ কেরাত সম্পর্কিত মাসায়েল নিম্নরূপ বর্ণনা করা হয়েছে।

 ১. আরবি অক্ষরগুলো বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে হবে। বিভিন্ন অক্ষরের উচ্চারণের পার্থক্য নিরূপণ করে যেটি যেভাবে উচ্চারণ করতে হয় ঠিক সেভাবেই উচ্চারণ করতে হবে।

যথার্থ এবং বিশুদ্ধ উচ্চারণের জন্য সব সময় প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ভুল পড়লে গুনাহগার হবে। এমনকি নামাজ নষ্টও হয়ে যেতে পারে।


২. ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতেহার পর কোরআনের যে কোনো সুরা অথবা বড় এক আয়াত বা ছোট তিনটি আয়াত পড়া ওয়াজিব।

তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়তে হবে। বিতর, সুন্নত ও নফল নামাজের সব রাকাতেই সুরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মিলিয়ে পড়তে হবে। 

৩. নামাজের রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মিলানো ওয়াজিব। এক্ষেত্রে কেউ প্রথমে সুরা বা আয়াত পড়ার পর সুরা ফাতিহা পড়লে ওয়াজিব আদায় হবে না।

 ৪. ফজর, মাগরিব, এশা, জুমা ও দুই ঈদের নামাজে কেরাত উচ্চৈঃস্বরে পড়তে হবে, ইমাম ভুলে আওয়াজ না করে কিরাত পড়লে সিজদা সাহু করতে হবে।ইচ্ছাকৃত নীরবে নামাজ পড়লে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।

৫. জোহর ও আসর নামাজে ইমামকে নীরবে কেরাত পড়তে হয়। একাকী বিতর নামাজ আদায়কারীর জন্য নীরবে কেরাত পড়া ওয়াজিব।

৬. ফজর, মাগরিব ও এশার নামাজ কোনো কারণবশত একাকী আদায় করলেও উচ্চৈঃস্বরে কেরাত পড়া উত্তম। 

৭. জামাতের সঙ্গে ইমাম ফজর, মাগরিব ও এশার নামাজ কাজা আদায় করলেও উচ্চৈঃস্বরে কিরাত পড়া ওয়াজিব।

 ৮. একই সুরা প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে না পড়াই উত্তম। 

৯. আস্তে করে কেরাত পড়ার নামাজেও কেরাত মুখে উচ্চারণ করে পড়তে হয়। একেবারে মুখ বন্ধ করে শুধু মনে মনে পড়া জায়েজ নয়।


১০. নামাজে কেরাত শেষ হওয়ার আগেই রুকুতে ঝুঁকে গিয়ে সেখানেও কেরাত পড়তে থাকা মাকরুহ।

১১. ফরজ নামাজে ইচ্ছাকৃত কোরআনের ক্রমধারার বিপরীত কেরাত পড়াও মাকরুহ, তবে ভুলে পড়লে তা মাকরুহ হবে না।

 ১২. ফরজ নামাজে একই সুরার অনেক আয়াত একত্রে পড়ার পর মাঝখানে দুই আয়াতের কম ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয় রাকাতে সামনে থেকে পড়া মাকরুহ। এমনিভাবে দুই সুরা এভাবে পড়ে মাঝখানে তিন আয়াতসংবলিত সুরা ছেড়ে দিয়ে পরবর্তী সুরা পড়াও মাকরুহ। যেমন প্রথম রাকাতে সুরা মাউন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন পড়ে মাঝখানে সুরা কাউসার ছেড়ে দেয়, তাহলে মাকরুহ হবে। এ হুকুম ফরজ নামাজের জন্য, নফল নামাজের জন্য প্রযোজ্য নয়। 

১৩. ফরজ নামাজের এক রাকাতে মাঝখানে এক বা একাধিক আয়াত ছেড়ে দ্বিতীয় রাকাত পড়া মাকরুহ। নফল নামাজের ক্ষেত্রে এ হুকুম প্রযোজ্য নয়। 

১৪. কোনো ব্যক্তি নতুন মুসলমান হয়ে সবেমাত্র নামাজ আরম্ভ করেছে, কিন্তু কোরআনের কোনো সুরা বা আয়াত তার মুখস্থ নেই, এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে সুরা বা আয়াত মুখস্থ করতে হবে। মুখস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত নামাজে শুধু সুবহানাল্লাহ অথবা আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি পড়ে নামাজ আদায় করতে হবে। 

তবে কোরআনের সুরা বা আয়াত মুখস্থ করার ব্যাপারে অলসতা বা অবহেলা করলে গুনাহগার হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি পৃষ্ঠা ১৪৯ থেকে ১৫০) প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করবে, তার প্রতিটি অক্ষরে অজুবিহীন অবস্থায় ১০ নেকি, অজু অবস্থায় ২০ নেকি, নামাজে বসে পড়লে ২৫ নেকি এবং দাঁড়িয়ে পড়লে ৫০ নেকি প্রদান করা হবে।

 নামাজে বিশুদ্ধ কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা জরুরি। কেননা লাহনে জলি তথা মারাত্মক ভুল পড়ার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যায় এবং লাহনে খফি তথা অসুন্দর পড়ার দ্বারা নামাজ মাকরুহ হয়ে যায়। লাহনেজলি তথা মারাত্মক ভুল যেমন: ১. ভিন্ন মাখরাজের ভুল উচ্চারণ। যদিও শুনতে কাছাকাছি মনে হয়। ২. হরকত তথা জের, জবর ও পেশের পরিবর্তন।

যার দ্বারা অর্থের সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়, এমনকি কুফরিও হয়ে যায়। ৩. মাদের হরফকে টেনে না পড়া। লাহনে খফি তথা অসুন্দর পড়া। যেমন: গুন্নাহ, ঈদগাম, ইজহার, ইখফা ও ক্ললকলা ইত্যাদি যথাযথ নিয়মে আদায় না করা। এর দ্বারা অর্থ ঠিক থাকে কিন্তু তিলাওয়াত অসুন্দর হয়। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা কোরআন শরিফ বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত কর। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে নামাজের ভিতরে ও বাহিরে বিশুদ্ধভাবে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন