কিডনি ভালো রাখার উপায়

কিডনি ভালো রাখার উপায়

আমাদের শরীরে যে দুটো কিডনি আছে তাদের কাজ হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ১৭০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে শরীরকে সুস্থ রাখা। দুটো কিডনিতে প্রায় ২০-২৫ লাখ ছাঁকনি রয়েছে, যা অনবরত রক্তকে পরিশোধিত করে যাচ্ছে। কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে এবং দেহের অস্থিগুলোকে শক্তিশালী করে থাকে।


কিডনি ভালো রাখার উপায় | কিডনি সুস্থ রাখার উপায়



কিডনি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমাদের শরীরের তলপেটের বিপরীত দিকে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে মুষ্টি আকৃতির দুটি কিডনি থাকে। কিডনি, হার্ট, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, লিভার প্রভৃতি অঙ্গের কাজের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। কিডনির সব চেয়ে ক্ষুদ্র অংশ হল নেফ্রোন। প্রতিটি কিডনিতে প্রায় ১০ লাখ নেফ্রোন থাকে যার প্রতিটিই রক্ত পরিশোধনের ক্ষুদ্র ছাঁকুনি হিসেবে কাজ করে।


 শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের করে দেয়া, রক্ত পরিশোধন, পানি ও খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা, হরমোন উৎপাদন, এসিড এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কিডনির প্রধান কাজ। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, কিডনির সর্বোচ্চ শতকরা ৯০ ভাগ সঠিকভাবে কাজ না করলেও একজন মানুষ তেমন বড় কোনো সমস্যা ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে; তবে এ সংখ্যা সবার ক্ষেত্রে একই রকম নাও হতে পারে।



কিডনি ভালো রাখার উপায়


মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম। মানুষের শরীরে দুইটি কিডনি থাকে যেগুলো শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ছেঁকে ফেলে। কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিবছর অনেক মানুষ এই রোগে মৃত্যুবরণ করে। এই ধরণের রোগের চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নেয়া উচিত। তাই আজ জেনে নিন কিডনি ভালো রাখার উপায়। 


=> পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত। তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয়না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।


 => লবণ কম খান খাবারে অতিরিক্ত লবন খাওয়া কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র এক চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করার অভ্যাস করুন।


কিডনি ভালো রাখার উপায়

 

 => অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন না খাওয়া গরুর মাংস, শুকরের মাংস ইত্যাদি খেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এমনকি চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডুলস এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদামও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দূর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রাণীজ প্রোটিন এড়িয়ে মাছ বা ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখুন খাবার তালিকায়। 


=> রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখুন রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করুন। রক্তচাপ কমিয়ে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা ও লবণ কম খাওয়া জরুরি। 


=> ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান। সুগার বেশি থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। 


=> ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান কম বেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথা নাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য একেবারেই ভালো নয়। নিয়ম না জেনে নিজে নিজে ওষুধ কিনে খেলে আপনার অজান্তেই কিডনির বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই যে কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।


 => প্রয়োজনের বেশি ভিটামিন সি না মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি এর প্রয়োজন নেই। নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।


 => কোমল পানীয় ত্যাগ করুন অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিঙ্কস খেয়ে থাকেন। এ ধরণের পানীয়গুলো কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন এবং যখনই তৃষ্ণা পায় পানি খেয়ে নিন। 


=> ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে এবং এর ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। ফলে ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ী ব্যক্তি এক পর্যায়ে গিয়ে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়।


 => • কিডনীর পরীক্ষা করান উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারো কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের কিডনি রোগের ঝুকি আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।


 => কর্মঠ থাকুন আপনার শরীরকে কর্মঠ ও সতেজ রাখুন। এজন্য নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং করা বা সাঁতার কাটার মতো হাল্কা ব্যায়াম করুন। কর্মঠ ও সতেজ শরীরে কিডনি রোগ হবার ঝুঁকি খুব কম থাকে। 


=> পরিমিত আহার পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে কিডনি রোগ হবার ঝুঁকি কমে যায়। হোটেলের তেল-মশলা যুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে বিরত থাকুন। খাবারে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করুন। 


=> অতিরিক্ত ওজন কিডনির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তাই সুস্থ থাকতে ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসুন।


কিডনি সুস্থ রাখার খাবার


আমাদের দেহের সুস্থতায় কিডনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিডনি আমাদের দেহের বর্জ্য পদার্থ এবং দেহের বাড়তি পানি নিষ্কাশনে সাহায্য করে আমাদের দেহকে রাখে ক্ষতিকর টক্সিন মুক্ত। তাই কিডনির সুস্থতা আমাদের নিজেদের সুস্থ থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরী। কিডনির সমস্যায় ভুগে প্রতিবছর অনেক মানুষ মারা যান।



 আমরা নিজের অজান্তে আমাদের বাজে খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে যাচ্ছি আমাদের সুস্থতার কাজে নিয়োজিত এই অঙ্গটিকে। স্বাদের দিকে লক্ষ্য রাখতে গিয়ে আমরা খাচ্ছি আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর অনেক খাবার। যা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পাশাপাশি ক্ষতি করে চলেছে কিডনিরও। সুতরাং নিজের ভালোর জন্য আমাদের একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। জানা প্রয়োজন কোন কোন খাদ্য কিডনিকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন। 


কিডনি সুস্থ রাখার খাবার

=> বাঁধাকপি বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি৬, ফলিক অ্যাসিড এবং ফাইবার যা কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। এতে পটাশিয়ামের মাত্রা অনেক কম থাকে বলে কিডনির যে কোন রোগ প্রতিরোধের কাজে সহায়তা করে। এছাড়া কিডনি সহ দেহের অন্যান্য অংশের ক্যান্সার সেল দমনে বাঁধাকপি বেশ কার্যকরী।



 => ফুলকপি ভিটামিন সি, ফোলাইট, ফাইবার, ইনডোলস, গ্লুকোসিনোলেটস এবং থায়োসায়ানেটস উপাদান ভরপুর ফুলকপি দূর করে কিডনি এবং দেহের নানান ধরনের ক্ষতিকর টক্সিন যা সেল মেমব্রেন্স এবং ডিএনএ ড্যামেজ করতে সক্ষম। তাই খাদ্য তালিকায় ফুলকপি রাখার চেষ্টা করুন। এটি কিডনি ড্যামেজের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। 



=> রসুন গন্ধের জন্য রসুন অনেকেই পছন্দ করেন না। রান্নায় ব্যবহার হলেও অনেকে তা খান না। কিন্তু দিনে ২/৩ কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করলে কিডনি থাকবে পরিষ্কার। এবং কিডনির সমস্যা জনিত রোগের সম্ভাবনা কমে যায় প্রায় ৩০%। কাঁচা রসুন না খেতে চাইলে রান্নায় ব্যবহৃত রসুন ফেলে না দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। 



=> পেঁয়াজ বিভিন্ন ফ্লেভানয়েড, কুয়েরসেটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ পেঁয়াজ কিডনির পাথর এবং ব্লাডারের ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। রান্নায় ব্যবহারের পাশাপাশি কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার অভ্যাস কিডনির যে কোন সমস্যা থেকে দেহে মুক্ত রাখবে। 



=> আপেল হাই ফাইবার, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানে ভরপুর আপেল আমাদের দেহের নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করে, যেমন, কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রন, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর, হৃদপিণ্ডের সুস্থতা এবং ক্যান্সার সেল গঠন প্রতিরোধ। এছাড়াও আপেল কিডনির জন্য সব চাইতে ভালো একটি ফল হিসেবে পরিচিত। বলা হয়, দিনে ১ টি আপেল আপনাকে রাখবে নীরোগ এবং সুস্থ। সুতরাং আপেল খান। 



=> স্ট্রবেরি স্ট্রবেরিকে মোটামোটি সর্বগুণ সম্পন্ন ফল বলা যায়। দেহের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে স্ট্রবেরির অনেক ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু দেহের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় স্ট্রবেরি অনেক বেশি কার্যকরী। এটি আমাদের দেহের ভেতরের সেল গঠনে বড় ভূমিকা রাখে। এবং কিডনির অক্সিডেটিভ ড্যামেজ প্রতিরোধ করে। বর্তমানে স্ট্রবেরি বেশ সুলভ আমাদের দেশের বাজারে। তাই প্রতিদিন স্ট্রবেরি খাবার চেষ্টা করুন। 



=> ডিমের সাদা অংশ ডিমকে সবাই একটি সুপারফুড হিসেবেই জানি। দেহে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে ডিমের ভূমিকা অনেক বেশি। এছাড়াও এতে রয়েছে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড যা কিডনিতে পাথর জমতে বাধা প্রদান করে এবং কিডনি পরিস্কারে সহায়তা করে। তবে কিডনির উপকারের জন্য কুসুম এড়িয়ে চলাই ভালো। 



=> মাছ মাছ সব চাইতে ভালো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস, বিসেশ করে সামুদ্রিক মাছ। এই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ দেহে ক্যান্সারের সেল গঠন প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী। প্রতিদিন একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ ৪০ গ্রাম মাছ খেলে কিডনির সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে পারেন দেহকে। যদি প্রতিদিন খেতে না পারেন তবে সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন খাবার তালিকায় মাছ রাখার চেষ্টা করুন।


আরও পড়ুন 

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন