রজব মাসের ফজিলত | রজব মাসের দোয়া

আরবী মাসের সপ্তম মাস রজব। মহান আল্লাহ পাক বছরের যে চারটি মাসের পবিত্রতা এবং তাদের মধ্যে কলহ-বিবাদ, মারামারি ও যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পবিত্র কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ করেছেন রজব মাস তার মধ্যে অন্যতম। সুতরাং মুহররম মাসের মত রজব মাসটিও অতি সম্মানিত মাস। পবিত্র হাদীস শরীফে এ মাসের অসীম ফযীলতের কথা বিভিন্নভাবে বর্ণিত আছে। এমন অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা এ মাসে ঘটেছে, যেগুলো এ মাসটির গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।


রজব মাসের ফজিলত | রজব মাসের দোয়া


হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে - 

হযরত আবু সাঈদ খুদরীয়ি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রজব আল্লাহর (প্রিয়) মাস। যে ব্যক্তি আল্লাহর এ মাসটির সম্মান করে, আল্লাহ পাক তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত করবেন।


তোহফায়ে ইয়ামানী কিতাবে বর্ণিত আছে, যিয়াদ ইবনে ইমরান হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রজব মাসের চাঁদ দেখতেন তখন পবিত্র হস্তদ্বয় উত্তোলন করে নিম্নের দোয়া পাঠ করতেন -



* اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا إلى شهر رمضان


উচ্চারণ : আল্লহুম্মা বারিকলানা ফী রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরি রামাযান।


 অর্থ ঃ হে আল্লাহ ! আমাদেরকে রজব ও শাবান মাসে বরকত দান কর এবং আমাদেরকে রমযান মাস পর্যন্ত পৌঁছাও।


খোলাসাতুল আখবার কিতাবে বর্ণিত আছে :


من أدرك شهر رجب فغسل في أوله وأوسطه وأخـره خـرج مـن انـويـه


كيوم ولدته أم


যে ব্যক্তি রজব মাস পেয়ে তার প্রথম তারিখ, পনের তারিখ এবং শেষ তারিখে ইবাদতের নিয়তে গোসল করবে, সে ব্যক্তি গোনাহ হতে সদ্য ভূমিষ্ট শিশু সন্তানের মত বিমুক্ত হয়ে যাবে। রজব মাসের পাঁচটি রাত ইবাদতের জন্য অতি উত্তম। সে রাতগুলো হচ্ছে ১ম তারিখ, ১৫ তারিখ, ২৮ তারিখ, ২৯ তারিখ ও ৩০ তারিখের রাত।


রজব মাসের নামায


১ম তারিখ রাতে মাগরিব নামাযের পর প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা এখলাস তিন বার করে পাঠ করবে। এরূপভাবে মোট বিশ রাকআত নফল নামায আদায় করলে দুনিয়া ও আখেরাতে অশেষ কল্যাণ সাধিত হয়।


গুনিয়াতুত তালিবীন কিতাবে এবং রেছালায়ে ফাজায়েলৃশ শুহুর গ্রন্থে বর্ণিত আছে, রজব মাসের প্রতি শুক্রবার জুমার নামায ও আসরের ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময়ে চার রাকআত করে নিয়ত করে মোট চার রাকআত নফল নামায আদায় করবে। প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর সাতবার আয়াতুল কুরসী ও পাঁচবার সূরা এখলাছ পাঠ করবে। 



রজব মাসের দোয়া


নামায শেষ করে নিম্নের দোয়া পাঁচশত বার পাঠ করবে।


لاحول ولا قوة الابالله العلي العظيم


উচ্চারণ ঃ লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম


অতঃপর তওবা ইস্তিগফার একশত বার পাঠ করবে।


* غفار الذنوب وأتوب استغفر الله الذي لا إله إلا هو الحي القيوم *


উচ্চারণ ঃ আসতাগফিরুল্লাহাল্লাযী লা-ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু গাফ্ফারুযযুনুবি ওয়া আতুবু ইলাইহি। 


অতঃপর একশত বার যে কোন দরূদ শরীফ পাঠ করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে দোয়া করবে। ইনশাআল্লাহ দোয়া কবুল হবে।


একদা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করলেন যে, হে আমার সাহাবীগণ । জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমাকে নিম্নের নামায সম্পর্কে বলেছেন যে, এ নামায মুমীন ব্যতীত অন্য কারো ভাগ্যে মিলে না এবং মুশরিক ছাড়া অন্য কেউ এ নামায ত্যাগ করে না।


মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ কথা শ্রবণ করে হযরত সালমান ফারসী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে এ নামায আদায় করার


নিয়ম-কানুন বলে দিন। উত্তরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, রজব মাসের প্রথম রাতে দুই দুই রাকআতের নিয়ত করে দশ রাকআত নফল নামায আদায় করবে এবং প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর তিনবার সূরা কাফিন এবং তিনবার সূরা ইখলাছ পাঠ করবে। নামায শেষ করে নিম্নের দোয়া তিনবার পাঠ করবে।


لا إله إلا الله وحده لاشريك له ، له الملك وله الحمد وهو حي لا يموت بيده الخير وهو على كل شي قدير اللهم لا مانع لما أعطيت . ولا معطي لما منعت وما ينفع ذالـجـد مثل الجد


উচ্চারণ : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুওয়া হাইয়্যুল লা-ইয়ামৃত বিইয়াদিহিল খাইরি ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। আল্লাহুম্মা লা-মানিয়া লিমা আ'ত্বাইতা ওয়ালা মু'ত্বিইয়া লিমা মানাতা ওয়ামা ইয়ানফাউ যাল জদ্দি মিনকাল যাদ্দু


তারপর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শাহী দরবারে যে উদ্দেশ্য নিয়ে দোয়া করবে ইনশাআল্লাহ তিনি তা কবুল করবেন এবং নামাযী ব্যক্তির আমলনামায় অনেক নেকী প্রদান করবেন।


মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও এরশাদ করেছেন, রজব মাসের পনের তারিখ রাতে দশ রাকআত নফল নামায আদায় করবে। এ নামাযও দুই দুই রাকআত করে মোট দশ রাকআত আদায় করবে। প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার পর তিনবার সূরা ফাফেরূন এবং তিনবার সূরা এখলাস পাঠ করবে। নামায শেষে নিনোর দোয়া করবে।


لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد يحي ويميت وهم خي لايموت بيده الخير وهو على كل شئ قدير إلها واحدا صمدا فردا

وترا لم يتخذ صاحبة ولا ولدا ،


উচ্চারণ ঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু ওয়া হুওয়া হাইয়্যুল লা ইয়ামৃত বিইয়াদিহিল খাইরি ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। ইলাহাও ওয়াহিদান ছামাদান ফারদান বিরাল্লাম ইয়াত্তাখি ছাহিবাতাও ওয়ালা ওয়ালাদান ।


মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, উক্ত দোয়া করে মহান আল্লাহর শাহী দরবারে যা কামনা করবে আল্লাহ তায়ালা সে দোয়া কবুল করবেন। অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রজব মাসের ত্রিশ তারিখ রাতে দুই রাকআতের নিয়তে মোট দশ রাকআত নফল নামায আদায় করবে। প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার পর তিনবার সূরা কাফেরন এবং সূরা ইখলাস পাঠ করবে। নামায শেষে নিম্নের দোয়া করবে।


لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد يحي ويميت وهو حي لا يموت بيده الخير وهو على كل شئ قدير * وصلى الله على سيدنا محمد اله الطاهرين ولاحول ولاقوة إلا بالله العلي العظيم


উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউহয়ী শুয়া ইউমীতু ওয়া হুওয়া হাইয়াল লা-ইয়ামৃত বিইয়াদিহিল খাইরি ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাশীর। ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আলিহীত্ব ত্বাহিরানা ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়িল আযীম


মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, উক্ত দোয়া করে মহান আল্লাহর শাহী দরবারে যা প্রার্থনা করবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করবেন। উপরোক্ত নামায়। ও দোয়াসমূহ আদায়কারীর এবং দোযখের মাঝখানে কিয়ামতের দূরত্ব নুন্যতম ৭০ খন্দকের থাকবে। অর্থাৎ এর প্রশস্ততা পাঁচশত বছরের রাস্তার সমান। ইহা ব্যতীত উল্লিখিত নামাযের এক রাকআতের বিনিময়ে মহান আল্লাহ হাজার রাকআতের সওয়াব দান করবেন। এ হাদীসটি শ্রবণ করার পর হযরত সালমান ফারসী রাদ্বিয়াল্লাহু আর কোন দিন এ নামায তরক করেন নি


হযরত ওয়ায়েস করনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে রজব মাসের ৩, ৪, ৫, ১৪, ১৫, ১৬, ২৩, ২৪ এবং ২৫ তারিখে রোযা রেখে সকালে সূর্যোদয়ের কিছু পরে গোসল করে নিম্নের নিয়মে ১২ রাকআত নফল নামায আদায় করে উল্লেখিত দোয়াসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তার প্রয়োজন পূর্ণ করে দিবেন।


এ নামায চার রাকআতের নিয়তে আদায় করবে। নামায আদায় করার কিছুক্ষণ পূর্ব হতে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা বন্ধ রাখবে। এ নামাযের প্রথম চার রাকআতর প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে তিনবার সূরা কদর পাঠ করবে। নামায শেষ করে সালাম ফিরায়ে ৭০ বার নিন্মের দোয়া পাঠ করবে।


لا إله إلا الله الملك الحق المبين : *


উচ্চারণ ঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল মালিকুল হাককুল মুবীন ।


অতঃপর দ্বিতীয় চার রাকআতের প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে তিনবার করে সূরা নাসর পাঠ করবে এবং সালাম ফিরায়ে ৭০ বার নিম্নের দোয়া পাঠ করবে।


انك قوى معين واحدي دليل بحق إياك نعبد وإياك نستعين * উচ্চারণ ঃ ইন্নাকা কাবিইয়ুম মুঈনুও ওয়াহিদিয়্যুন দালীলুন বিহাকুকি ইয়্যাকা না'বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতায়ীন।


অতঃপর শেষের চার রাকআতের প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে উভয় রাকআতে সূরা ইখলাস তিন বার করে পাঠ করবে। নামায শেষ করে ৭০ বার সূরা আলাম নাশরাহ লাকা পাঠ করবে।

h

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন