কসর নামাজের নিয়ম | কসর নামাজের বিধান

সফর অবস্থায় দু’সালাত জমা করে আদায় করার মাসআলাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করে থাকে; অনেকেই আবার এর অনেক মাসআলা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে না, অথচ বিষয়টির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তাই এখানে এ বিষয়ে কিছু মাসআলার অবতারণা করার প্রয়াস পাবো।আজকে আমরা জানবো

কসর নামাজের নিয়ম | কসর নামাজের বিধান


প্রথমেই এটা জানা দরকার যে, মহান আল্লাহর রহমত, তিনি মুসাফিরের জন্য সালাত জমা তথা একত্র করা বিধিবদ্ধ করেছেন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও ছাড়। কারণ মুসাফির এমন কিছু অবস্থা ও পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন যাতে প্রতিটি সালাতকে তার নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে।


আলেমগণ এ ব্যাপারে ইজমা‘ বা ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে আরাফার দিন যোহর ও আসরকে এগিয়ে নিয়ে যোহরের সময়ে জমা করে আদায় করা শরী‘আতসম্মত। অনুরূপভাবে তারা এ ব্যাপারেও একমত পোষণ করেছেন যে, আরাফার দিন সূর্য ডুবার পর নাহরের রাতে মুযদালিফায় মাগরিব এবং ‘ইশা একত্র করে ইশার সময়ে পড়া শরী‘আতসম্মত। [দেখুন, আল-ইজমা‘ ইবনুল মুনযির, পৃ. ৩৮; মারাতিবুল ইজমা‘ পৃ. ৪৫]


তবে এর বাইরে অন্য সময়ে সালাত একত্রে আদায় করার ব্যাপারে আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।



আলেমগণ সফরের কারণে দু’সালাত একত্রে আদায় করার ব্যাপারে মতভেদ করেছেন:


১. অধিকাংশ আলেম যেমন মালেকী, শাফেয়ী, হাম্বলীগণ এ মত পোষণ করেছেন যে, সফরের কারণে যোহর এবং আসর অনুরূপভাবে মাগরিব ও ইশার সালাতকে একত্রে আদায় করা জায়েয। [আশ-শারহুল কাবীর, ১/৩৬৮; মুগনিল মুহতাজ, ১/৫২৯, কাশশাফুল কিনা‘, ২/৫]


২. হানাফী আলেমগণ বলেন, আরাফা ও মুযদালিফা ব্যতীত দু’ ফরয সালাতকে একত্র করে আদায় করা যাবে না। তবে আকৃতিগতভাবে একত্রিত করা যাবে, আর তা হচ্ছে যোহরকে তার শেষ সময় পর্যন্ত দেরী করে আদায় করা তারপর আসরকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। [আদ-দুররুল মুখতার ওয়া হাশিয়া ইবন আবেদীন, ১/৩৮১]


সালাত একত্রে আদায় করা রুখসত বা ছাড় তবে তা স্থায়ী নিয়ম নয়

ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম বলেন, জমা তথা সালাতকে একত্রিত করে আদায় করা সাধারণ নিয়মের পর্যায়ে নয় যেমনটি অনেক মুসাফির মনে করে থাকে যে সফরের নিয়ম হচ্ছে একত্রিত করা, ওযর থাকুক বা না থাকুক। বরং সফরে জমা তথা একত্র করে আদায় করা হচ্ছে রুখসত বা ছাড়। আর সফরে কসর করা হচ্ছে স্থায়ী নিয়ম-নীতি। সুতরাং সে হিসেবে বলা যায় যে, মুসাফিরের জন্য স্থায়ী নিয়ম হচ্ছে চার রাকা‘আত সালাতকে দু’রাকা‘আত আদায় করা, সেখানে ওযর থাকুক বা না থাকুক। পক্ষান্তরে দু নামাযকে একত্রিত করে আদায় করার বিধান প্রয়োজনের তাগিদে এবং রুখসত বা ছাড় হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এটা এক ধরনের অপরটি অন্য ধরনের। [আল-ওয়াবিলুস সাইয়্যেব, পৃ. ১৪]


আর এজন্য মালেকী মাযহাবের লোকদের মতে সফরে দু’ সালাত একত্রে আদায় করা উত্তমের বিপরীত; কারণ প্রত্যেক সালাতকে তার নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত করাই হচ্ছে উত্তম। তাই উত্তম হচ্ছে তা না করা। যদি তা করা মাকরূহ নয়। মালেকী মাযহাবের লোকগণ এটাকে ‘জাওয়ায মুস্তাওয়ীত ত্বারফাইন’ বা এমন জায়েয যার উভয় দিক সমান, এ নামে নামকরণ করে থাকে। [মিনাহুল জালীল, ১/৪১৬; শারহুল খুরাশী, ২/৬৭]



পক্ষান্তরে হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণের মতে, জমা করা মুস্তাহাব নয়, বরং ত্যাগ করাই উত্তম।


কত দূরত্বের সফর করলে কেউ মুসাফির বলে গণ্য হবে এবং সফরের রুখসত পেতে পারে?


মানুষের দৃষ্টিতে যদি উদ্দেশ্যকৃত স্থানটি সফর হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে তাই তাকে মুসাফির বানাবে। আর তখনই সফরের চারটি রুখসত বা ছাড়ের অধিকারী হবে। সে চারটি বস্তু হচ্ছে:


কসর তথা চার রাকা‘আত বিশিষ্ট সালাতকে কসর করে দু’ রাকা‘আত পড়া


জমা তথা দুই সালাতকে এগিয়ে নিয়ে অথবা পিছিয়ে নিয়ে যে কোনো এক ওয়াক্তে আদায় করা।


মোজার উপর মাসেহ করা, তিন-দিন তিন-রাত্রি পর্যন্ত।


রমযানের দিনের বেলায় সাওম ভঙ্গ করা।


আর যদি স্থানটি সফরের দূরত্ব কী না এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গীগত পার্থক্য দেখা দেয়, অথবা  সন্দেহ হয়, তখন দূরত্বের দিকে খেয়াল করতে হবে। তাই দেখতে হবে যদি তোমাদের যাওয়ার স্থানটি তোমাদের সহর থেকে আশি (৮০) কিলোমিটারের অধিক হয়, তাহলে তোমরা মুসাফির বলে বিবেচিত হবে; আর তখন তোমরা উপরোক্ত চারটি রুখসতের অধিকারী হবে। অর্থাৎ দুই সালাতকে জমা করার সুযোগ, চার রাকা‘আত বিশিষ্ট সালাতকে দু’ রাকা‘আতে কসর করার সুযোগ, মোজার উপর তিন-দিন তিন রাত মাসেহ করার সুযোগ এবং রমযানের দিনের বেলায় সাওম ভঙ্গ করার সুযোগ।


আর সফর অবস্থায় কোথাও অবতরণ করলেও তোমরা জমা করা এবং কসর করার সুযোগ পাবে, যদিও তোমরা ভ্রমণরত না থাক। কারণ তোমরা তখনও মুসাফির হিসেবেই খ্যাত থাক, সুতরাং তোমরা সফরের চারটি রুখসত ও ছাড়ের সুযোগ লাভের অধিকারী হবে, যদিও কোথাও সাময়িকভাবে অবস্থান করে থাক। যখন তোমরা জামাআতের সাথে তা আদায় করবে।


এর মধ্যে একটি পার্থক্য এই যে, কসর করা তোমাদের জন্য উত্তম হবে, আর জমা না করা তোমাদের জন্য উত্তম হবে, যদি জমা না করার কারণে কষ্ট অনুভূত না হয়। তবে কষ্ট না থাকলেও জমা করতে দোষ নেই; কারণ তোমাদেরকে তখনও মুসাফিরই বলা হয়ে থাকে।


আরও পড়ুন 

রজব মাসের ফজিলত | রজব মাসের দোয়া

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন