ওযুর ফরজ কয়টি | ওযুর ফরজ ও সুন্নত

ওযুর ফরজ কয়টি | ওযুর ফরজ ও সুন্নত


পবিত্র কুরআনে ওযুর বিধান


মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

হে মুমিনগণ ! যখন তোমরা নামায আদায় করার জন্য প্রস্তুত হও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল, তোমাদের হস্তদ্বয় কনুইসহ ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসেহ কর আর (ধৌত কর) তোমাদের পা সমূহ টাখনুসহ। (মায়িদাহ : ৬)


ওযুর গুরুত্ব সম্পর্কিত হাদীস


হযরত রাসূলে আকরাম (সঃ) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যখন হাদাস অবস্থায় থাকে (যার কারণে ওযু ভঙ্গের কারণ হয়, গোসল ওয়াজিব হয়) তখন আল্লাহ তা'আলা তার নামায কবুল করেন না যে পর্যন্ত সে ওযূ না করে (বুখারী)


সর্বদা ওযুর সাথে থাকার ফযীলত


ওযূ ব্যতীত নামায ও পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা জায়েয নেই। যে ব্যক্তি সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকে সে ব্যক্তি আখেরাতে সাওয়াবের অধিকারী হবে এবং উঁচু মর্যাদা লাভ করবে।


হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেছেন ঃ হে বৎস, তুমি যদি সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকতে পার তাহলে তাই কর। কেননা, মালাকুল মওত বা মওতের ফেরেশতা যখন বান্দাহর রুহ কবজ করে আর সে সময় বান্দা ওযুর সাথে থাকে, তখন তার জন্য শাহাদাতের মর্যাদা লিখা হয়। (বায়হাকী)


ওযুর ফযীলত সম্পর্কিত হাদীস


হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) এরশাদ করেছেন যখন কোন মুমিন বান্দা ওযু করে এবং চেহারা ধৌত করে তখন, তার চেহারা হতে পানির সহিত অথবা পানির শেষ বিন্দুর সহিত সে সমস্ত গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়, যার দিকে তার দুই চক্ষু দৃষ্টি করেছিল । 



যখন সে হাত ধৌত করে তখন পানির সাহিত অথবা পানির শেষ বিন্দুর সহিত তার হাত হতে সে সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যা তার দুই হাত সম্পাদন করেছিল। এরূপে যখন সে পা ধৌত করে তখন পা হতে সে সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যে সব গুনাহ করতে তার পা অগ্রসর হয়েছিল । ফলে সে (ওযুর স্থান) ত্যাগ করে সমস্ত গুনাহ হতে মুক্ত হয়ে। (মুসলিম)


যে কারণে ওযু করা ফরয


মুহদিস (অপবিত্র ব্যক্তির) উপর চারটি কারণের যে কোন একটি কারণে ওযূ ফরয হয়। যথাঃ


 ১. নামায আদায় করার জন্য, চাই নামায ফরয হোক বা নফল হোক।


২. জানাযার নামায আদায় করার জন্য।


৩. তেলাওয়াতে সিজদার জন্য ।


৪. কুরআন পাক স্পর্শ করার জন্য ।


অনুরূপভাবে ওযূ করা ফরয যখন মুহদিস ব্যক্তি দেয়ালে, খাতায় অথবা অন্য কোথাও লিখিত আয়াত স্পর্শ করতে চায়।ওযুর ফরয কয়টি

ওযুর ফরজ সমূহ


ওযুর ফরজ কয়টি। ওজুর মধ্যে চারটি কাজ ফরজ। উহার কোনটি বাদ পড়লে ওজু শুদ্ধ হইবে না, আর ওজু শুদ্ধ না হইলে নামাজও শুদ্ধ হইবে না। সেই চারটি কাজ হইতেছে—


১. কপালের উপরিভাগে চুল গজাইবার স্থান হইতে থুতনীর নীচ পর্যন্ত এবং পার্শ্বের দিকে দুই কানের লতি পর্যন্ত পুরা মুখমণ্ডল ধৌত করা।


২. দুই হাত কনুইসহ ধৌত করা।


৩. মাথার চারভাগের একভাগ মাসেহ করা।


৪. উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা ।


ওজুর সুন্নসমূহ


১। ওজুর নিয়ত করা। নিয়ত এই—


উচ্চারণ— নাওয়াইতু আন্ আতাওয়াদ্দায়া লিরাফ্‌ল্ হাদাসি ওয়াইস্তি- বাহাতাল লিচ্ ছালাতি ওয়া তাকারোবান্ ইলাল্লাহি তায়ালা ।


অর্থাৎ, আমি নাপাকী দূর করিবার, শুদ্ধরূপে নামাজ পড়িবার ও আল্লাহ্ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ওজু করিতেছি।


২. ওজু আরম্ভ করিবার সময় 'বিস্মিল্লাহ্' পড়া।


৩. দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।


৪. মেসওয়াক বা দাঁতন দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করা।


৫. প্রত্যেক বারে নূতন পানি লইয়া তিনবার কুলি করা।


৬. রোজাদার না ইলে কুলিতে গড়গড়া করা ।


৭. প্রত্যেক বারে নূতন পানি লইয়া তিনবার নাক পরিষ্কার করা।


ওযুর মাসয়ালা


১. মুখমন্ডল ধোয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনিপর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন- ধোয়া হয়।দুই হাতেরসাহায্যে ভালোভাবে মুখমন্ডল ধুতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে যেন দুই ভ্রুর পশমেরগোড়া পর্যন্ত পানি পৌছে।যদি মুখ এবং চোখ এরকম জোর করে বন্ধ করে রাখা হয়যাতে চোখের পাতা অথবা ঠোটের কিছু অংশ শুকনা থাকে তবে অজু হবেনা।


২. পুরুষগন মুখ মন্ডল ধোয়ার পর ভিজা হাতের আঙ্গুলি দিয়ে দাড়ি খেলাল করবে তবেতিনবারের বেশী খেলাল করবেনা।


৩. অজুর মধ্যে থুতুনি ধোয়া ফরজ।থুতুনিতে দাড়ি থাকুক বা না থাকুক।অর্থাৎ ইহামুখমন্ডল ধোয়ার আওতায় পরে।


৪. মুখ বন্ধ করলে ঠোটের যে অংশ স্বাভাবিক ভাবে দেখা যায় সে অংশ ধোয়া ফরজ।


৫. হাতে আংটি থাকলে,মেয়েদের চুড়ি থাকলে এর নীচে পারি পৌছাতে হবে।নাকেরনথের নীচের চামড়াতেও পানি পৌছাতে হবে।


৬. নখের ভিতর আটা বা চুন ঢুকে শক্ত হয়ে থাকার কারনে যদি নখের ভিতরে পানি নাযায় তবে আটা বা চুন বের করে সেখানে পানি পৌছাতে হবে।


৭. এক অঙ্গ ধোয়ার পর আর এক অঙ্গ ধুতে এত দেরী করা ঠিক হবেনা যাতে ইতিমধ্যেপ্রথম অঙ্গ শুকিয়ে যায়।


৮. প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় ভাল করে ঘষে মেজে ধোয়া জরুরী।


৯. হাতের পায়ের নখে পালিশ থাকলে তা প্রথমে তুলে ফেলে ওযু করতে হবে।


১০. ওযু করার পর যদি দেখা যায় হাতের বা পায়ের কোন অংশ শুকনা রয়ে গেছেতাহলে সেখানে পানি প্রবাহিত করে দিতে হবে।শুধু ভিজা হাতে মুছলে হবে না।


১১. ওযু করার সময় দুনিয়ার কথাবার্তা বলা,নাপাক স'ানে বসে ওযু করা মাকরুহ।


১৩. হযরত বুরায়দা(রাঃ) থেকে বর্নিত,নবী(সঃ) মক্কা বিজয়ের দিবসের সময় একওযুতে কয়েক ওয়াক্তের নামায আদায় করেছিলেণ।*মুসলীম*।


মাসয়ালাঃ- এক ওযুতে একের অধিক নামায পড়া জায়েজ।


১৪. হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) বলেন,রাসুল(সঃ) একদা ফজরের নামাযের পর হযরতবেলাল(রাঃ) থেকে জিজ্ঞাসা করলেন,হে বেলাল!ইসলাম গ্রহন ব্যতিত কোন নফলআমলের উপর তোমার বড় আশা হয় যে,তোমায় ক্ষমা করে দেওয়া হবে?কেননা আমিজান্নাতে আগে আগে তোমার চলার আওয়াজ শুনেছি।হযরত বেলাল(রাঃ)বললেন,আমি এর চেয়ে বেশী আশান্বিত কোন আমল করিনি যে,দিবা রাত্র যখনই ওযুকরি তখন যা তৌফিক হয় নামায  পড়ি।*বোখারী ও মুসলিম*।


১৫. হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব(রাঃ) বলেন,রাসুল(সঃ) এরশাদ করেছেন,যে ব্যক্তিপুর্নভাবে ওযু করে এই দোয়া পড়বে“আশহাদু আল্লাই লাহা ইল্লাল লাহু ওয়েদাহুলাশরিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু” সেই ব্যক্তির জন্যজান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে যেটা ইচ্ছা হয় প্রবেশ করতে পারবে।*মুসলিম.আবু দাউদ ও তিরমিজি*।


১৬. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর(রাঃ) হইতে বর্নিত,নবী(সঃ) বলেছেন,যে ব্যক্তি ওযুথাকা অবস্থায় নতুন ওযু করে নেয় তার জন্যে দশটি নেকী লিখা হয়।-*তিরমিজি*


১৭. রাসুল(সঃ) বলেছেন,যখন কোন মুসলমান অযু করে এতে তার চেহারা ধৌত কওেতখন পানির সাথে তার চেহারা থেকে সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যা তার চোখের দৃষ্টিদ্বারা সংঘঠিত হয়েছিল।যখন হাত ধৌত করে তখন হাতের সকল গুনাহ পানির সাথেবের হয়ে যায় যা তার হাতের দ্বারা হয়েছিল।যখন পা ধৌত করে তখন পায়ের দ্বারা যেসব গুনাহ করা হয়েছে তা বের হয়ে যায়।সে অযু থেকে ফারেগ হওয়ার সাথে সাথেসকল গুনাহ(ছগিরা)থেকে পাক ছাফ হয়ে যায়--মুসলীম শরীফ।


১৮. নবী (সঃ) বলেছেন,আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় বলব না,যাদ্ধারা আল্লাহতায়ালা গোনাহ মার্জনা এবং মর্যাদা উঁচু করেন?তা হল,মনে চায়না এমন সময়েপূর্নরূপে ওযু করা,মসজিদের দিকে পা বাড়ানো এবং এক নামাযের পর আরেকনামাযের জন্য অপেক্ষা করা।এটা যেন আল্লাহর পথে জেহাদ করার জন্যে ঘোড়া প্রস্তুতরাখা---এহইয়াউ উলুমিদ্দিন।

আরও পড়ুন 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন