কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার


কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার


আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ কিডনি (Kidney)। কিডনির প্রতি অযত্ন বা অনিয়মের ফলে জীবন হুমকির মুখে পরতে পারে যে কোন বয়সে। কিডনি ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকবে। আমরা সবাই কম বেশি কিডনি রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানি। কিন্তু কিডনির রোগ সম্পর্কে হয়ত অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না।


 যেহেতু সুস্থ জীবনের জন্য কিডনির সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু বিভিন্ন ধরনের কিডনি রোগের কারণ, ঝুঁকি এবং কিডনি রোগ থেকে দূরে থাকার উপায়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানা জরুরী। আজকে আমরা এ সম্পর্কেই জানব। কিডনি দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনি রোগ খুব নীরবে শরীরের ক্ষতি করে। খুব জটিল অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত লক্ষণগুলো ভালোভাবে প্রকাশও পায় না।


 তাই কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো আগে থেকেই জেনে রাখা জরুরি। লক্ষণ বুঝতে না পারার জন্য ক্রনিক কিডনি রোগে ভুগছেন এমন অনেকেই জানেন না যে তার এই রোগটি আছে। কিডনি রোগের যেকোন স্টেজের জন্যই কিডনি রোগ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনই হচ্ছে এই রোগ নিরাময়ের মূল শক্তি। কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা থাকলে সেই অনুযায়ী নিরাময়ের ব্যবস্থা নেয়া সহজ হয়।


কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার


 আপনার অথবা আপনার পরিচিত কারো যদি কিডনি রোগের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হোন। কারণ কিডনি রোগের উপসর্গগুলোর সঙ্গে অন্য স্বাস্থ্য সমস্যার উপসর্গের মিল আছে।


 কিডনি রোগের কারণ: 


১. কিডনি রোগের অন্যতম প্রধাণ কারণ কিডনির প্রদাহ। কিডনির প্রদাহকে নেফ্রাইটিস বা Nephritic Syndrome বলে, যা কিডনির ছাঁকনি বা ফিল্টার মেমব্রেনকে ক্ষতবিক্ষত করে। এই রোগের কারণে শরীর থেকে অত্যাবশ্যক Protein বেরিয়ে যায়। 


২. উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) ও ডায়াবেটিস (Diabetes) নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও হতে পারে কিডনি রোগ। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগ নয়, তবু কিডনিকে আক্রান্ত করে কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করে। 


৩. যাদের রক্তচাপ অতিরিক্ত কম থাকে, তাদেরও হঠাৎ করে কিডনি খারাপ হতে পারে। 



কি কারণে কিডনি রোগ হয় : 


কিডনি রোগের জন্য সুনির্দিষ্ট কারণ বলা বেশ কঠিন। তবে শনাক্ত কারণে কিডনি রোগ হওয়ার আশংকা অনেক বেশি বারবার মূত্রনালির সংক্রমণ কিডনিতে প্রদাহ জন্মগত সমস্যা বিভিন্ন ধরনের ওষুধের/কেমিক্যালের পার্শপ্রতিক্রিয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী ব্যবস্থায় সমস্যা অনিয়ন্ত্রিত/ অকর্মণ্য জীবনযাপন ধূমপান/এলকোহল সেবন ডায়াবেটিস উচ্চরক্তচাপ প্রভৃতি।


কিডনি রোগের লক্ষণ সমূহঃ


কিডনি রোগের লক্ষণ 


 ১. ক্লান্ত, দুর্বল: আপনার কিডনি নিস্ক্রিয় থাকলে দূষিত রক্তকে ঠিকভাবে শোধন করতে পারে না। যে কারণে আপনি সবসময় ক্লান্ত এবং দুর্বল অনুভব করতে পারেন। 



২. ঘুমে সমস্যা: কিডনি যখন ঠিকঠাক ভাবে কাজ করে না তখন রক্ত ঠিকভাবে পরিশোধিত হয় না, যা আপনার ঘুমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। 



৩. ত্বক শুকনো এবং ফাটলের চিহ্ন: কিডনি যখন আপনার শরীরের মিনারেল এবং নিউট্রেশনকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না তখন আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং অনেকক্ষেত্রে ত্বকে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এরকম কোন লক্ষণ দেখলে আপনার উচিত কিডনি বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করা। 


কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার


৪. প্রসাবের অতিরিক্ত চাপ: আপনি যদি প্রসাবের অতিরিক্ত প্রসাবের চাপ অনুভব করেন এবং বিশেষ করে রাতে তবে এটা আপনার কিডনী রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। 



৫. প্রসাবে রক্ত: কিডনী যখন কার্যক্ষম থাকে তখন রক্ত পরিস্কারের সময় দূষিত পদার্থগুলোকে প্রসাবের সাথে বের করে দেয় এবং রক্তকে এর থেকে আলাদা করে। কিন্তু কিডনী যখন সঠিকভাবে কাজ করে না তখন ছাকনের সময় প্রসাবের সাথে রক্ত বের হয়ে যেতে পারে। 



৬. প্রসাবে ফেনা: ডিমকে ফেটানোর সময় উপরের দিকে যেরকম ফেনার সৃষ্টি হয় আপনার প্রসাবের সময় যদি এরকমটি হয় তবে আপনার চিকিৎসকের বশবর্তী হওয়া উচিত। 



৭. চোখের পাশে ফোলাভাব: আপনার চোখের পাশে যদি ফোলাভাব থাকে তবে আপনার কিডনী হয়তো প্রোটিনকে শরীরর জন্য ধরে রাখতে না পেরে প্রসাবের সাথে বের করে দিচ্ছে। শরীর থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন নি:সরনের ফলে আপনার চোখের পাশ ফুলে যেতে পারে, যা আপনার কিডনী রোগে আক্রান্ত হওয়াকে নির্দেশ করে। 



৮. পায়ের গোড়ালী এবং পাতা ফোলা: কিডনী ঠিক ভাবে কাজ না করলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমান বেড়ে যায় এবং এরফলে আপনার পায়ের গোড়ালী এবং পাতা ফুলে যেতে পারে। 



৯. ক্ষুধামন্দা: ক্ষুধামন্দা হওয়া কিডনী রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ। 



১০. পেশিতে ব্যাথা: শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি এবং ফসফরাসের নিয়ন্ত্রন ঠিকভাবে না হলে পেশিতে ব্যাথা অনুভূত হয়, যা কিডনী রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।



 এছাড়াও যে লক্ষনগুলো দেখা যায় 


ক) ব্যথা : 


সাধারণত খুব মৃদু ব্যথা পেটের পেছনে মেরুদণ্ডের দু'পাশে এবং পেটের মাঝখানে নাভির কাছে। কিডনি পাথরের বেলায় ব্যথা তীব্র হতে পারে। 



খ) প্রায়ই মাথা ব্যথা। 



গ) বমি-বমিভাব এবং বমি করা। 



ঘ) প্রস্রাব করতে ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া। 



ঙ) বারবার প্রস্রাব হওয়া। অথবা হঠাৎ প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া। 



চ) চুলকানি/খোস-পাঁচড়া। 



ছ) ক্ষুধা না পাওয়া ও ক্লান্তিবোধ করা। 



জ) মুখ, বিশেষত চোখের নিচে, হাত, পা অথবা সর্বশরীর ফুলে যাওয়া। 



ঝ) উচ্চ রক্তচাপ ও রক্ত শূন্যতা। 



যেহেতু কিডনি রোগ অনেক প্রকার, তাই লক্ষণও ভিন্ন ভিন্ন। প্রথমাবস্থায় কিডনি রোগে প্রায়ই কোনো লক্ষণ থাকে না বা সামান্য থাকে। কখনো কখনো কোনো লক্ষণ প্রকাশের আগেই রোগীর কিডনি ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষার দ্বারা কিডনির রুটিন চেকআপ জরুরি। প্রস্রাবের পরীক্ষা, রক্তের বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড এবং প্রয়োজনে বায়োপসি দ্বারা কিডনি রোগ নির্ণয় করা যায়। কিডনি রোগের জটিলতা : কিডনির রোগ মানে কিডনির কাজ ব্যাহত হওয়া। যার ফলে যে সব রোগ দেখা দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে : ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, নেফন্সাইটিস, সংক্রামণ, পাথর হওয়া, আঘাত প্রাপ্তি ইত্যাদি।


কিডনি রোগের চিকিৎসা


অ্যান্টিবায়োটিক : ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে ব্যাকটেরিয়ার ধরন নির্ণয়ে রক্ত/প্রস্রাব কালচার করার প্রয়োজন হয়।



নেফ্রোস্টোমি : এ বিশেষ পদ্ধতিতে চামড়ার নিচ দিয়ে একটি ক্যাথেটার কিডনিতে পৌঁছানো হয় যার মাধ্যমে বিকল্প পথে প্রস্রাব বের হয়ে আসতে পারে। 



লিথোট্রিপসি : উচ্চপ্রযুক্তির আল্ট্রাসনিক শক ব্যবহার করে কিডনির পাথরকে ছোট করে বিশেষ ব্যবস্থায় বের করে আনার চিকিৎসা পদ্ধতিকে লিথোট্রিপসি বলে। 



নেফ্ৰেকটোমি : শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি অপসারণকে নেফ্ৰেকটোমি বলে। কিডনিতে ক্যান্সার/ টিউমার হলে বা কোনো কিডনি পুরোপুরি বিকল হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করলে নেফ্রেকটোমি করা হয়ে থাকে। 



ডায়ালাইসিস : কৃত্রিম যন্ত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ত পরিশোধন ব্যবস্থার নাম ডায়ালাইসিস। ডায়ালাইসিস বিভিন্ন রকমের হতে পারে যেমন- হেমোডায়ালাইসিস, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস প্রভৃতি। এটি বেশ ব্যয় বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি।



 কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট : অকেজো কিডনি পরিবর্তন করে কোনো দাতার কিডনি সংযোজনকে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বলে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ব্যয় বহুল এবং এটি করার পর বাকি জীবন নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ খেয়ে যেতে হয়।


কিডনি রোগ কি ভালো হয়


কিডনি রোগ অবশ্যই ভালো হয়।তবে চিকিৎসার পাশাপাশি খাবারের প্রতি মনযোগ দিতে হবে।যেই সকল খাবার কিডনির কাজে বাধা প্রদান বা কিডনি কে অনেক পরিশ্রম করতে হয় সেই সকল খাবার পরিহার করতে হবে।তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে এবং যেই সকল খাবার কিডনি কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে সেই সকল খাবার খেতে হবে। যেমন-মাছ,বাধা কপি, ফুল কপি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। 


কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা 

কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা জানতে ক্লিক করুন এখানে

আরও পড়ুন, 

কিডনি ভালো রাখার উপায়




إرسال تعليق

أحدث أقدم