ইসলামের সাথে ইমানের সম্পর্ক
ইমান শব্দের অর্থঃ
'ঈমান' শব্দের অর্থ হলো- বিশ্বাস করা। আসমান ও জমিন এবং এতে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টি করেছেন। তিনিই এগুলোর পরিচালক ও প্রতিপালক। প্রাণীজগতের হায়াত ও মউত, রক্ষণাবেক্ষণ, লয়-প্রলয় একমাত্র তাঁরই ইচ্ছাধীন।
তিনি যখন যা ইচ্ছা করেন তখনই তা হয়ে যায়। এই বিশ্বচরাচরের তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। যুগে যুগে তাঁর সৃষ্ট মানবজাতির জন্য সত্যের সন্ধান ও অসত্যের অবসানকারী হিসেবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী মহামানবদেরকে পয়গম্বর বা রাসলূরূপে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।
আবার হযরত জিব্রাঈল ফেরেশতার মারফত তাঁদের নিকট ওহী বা মানুষের জীবন বিধান পাঠিয়েছেন। এই পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী; আল্লাহ প্রদত্ত নির্দিষ্ট সময় ফুরিয়ে গেলে সকলকেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে উপস্থিত হতে হবে।
ইমান কাকে বলে
মৃত্যুর পরে হযরত ইসরাফীল (আ.)-এর শিঙ্গার ফুৎকারে কিয়ামতের মাঠে হিসাব-নিকাশের জন্য পুনর্জীবিত হতে “হবে। দুনিয়ায় অবস্থান করে যা কিছু আমল করে গিয়েছে প্রত্যেকের আমল অনুসারে নেক বান্দাকে আল্লাহ তা'আলা বেহেশত দান করবেন আর বদকার পাপী বান্দারা দোজখে পতিত হবে। উল্লিখিত বিষয়াবলী এবং আরো কতিপয় আনুষঙ্গিক বিষয়ের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করার নামই 'ঈমান'।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন باتها الذين امنوا هل أدلكم على تجارة تنجيكم من مذاب اليم تؤمنون بالله و رسوله (الخ)
উচ্চারণঃ ইয়া আয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ হাল আদুল্লুকুম 'আলা তিজারাতিন্ তুনজীকুম্ মিন আযাবিন আলীম । তু'মিনূনা বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহী...।
অর্থঃ হে বিশ্বাসীগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি তিজারতের কথা শিক্ষা দেব না, যা দ্বারা তোমরা জাহান্নামের কঠিন আজাব হতে মুক্তি পাবে? তা এই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান (বিশ্বাস) আনা অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাঁদের হুকুম-আহকাম মান্য করে, তাঁর সাথে কোনো প্রকার শরিক না করে খাঁটি মু'মিন হওয়ার কথা কি আমি বলব না? নিশ্চয়ই বলে দেব।
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর প্রতি বিশ্বাস (ঈমান) স্থাপন করাকে ভিজারত নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ডিজারতের লাভ নির্ধারণ করা হয়েছে আখিরাতের আজাব হতে নাজাত বা মুক্তি।
প্রকৃতপক্ষে আখিরাতের নাজাতই সত্যিকারের নাজাত, আখিরাতের সফলতাই সত্যিকারের সফলতা, আর সেই সফলতা বা নাজাত লাভ করবে শুধুমাত্র ঈমানদারগণ। কুরআন মাজীদে আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন— "ঈমানদার বান্দাগণ অবশ্যই সফলতা লাভ করবে।"
কুরআন মাজীদের অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে---
الله عليه الجنة و من يشرك بالله فقد . حرم
উচ্চারণ ঃ ওয়া মাইইউশরিক বিল্লাহি ফাকাদ্ হাররামাল্লাহু আলাইহিল জান্নাতা। অর্থঃ আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সাথে শরিক করে, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তার ওপর বেহেশত হারাম করে দেবেন।
অন্য এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে—
من عمل صالحا من ذكر أو أنثى وهو مؤمن فأولئك يدخلون الجنة
উচ্চারণ ঃ মান 'আমিলা সালিহাম্ মিন যাকারিন আও ঊনছা ওয়া হুয়া মু'মিনুন ফাউলাইকা ইয়াদখুলুনাল জান্নাতা ।
অর্থ ঃ যারা সৎকাজ করবে সে পুরুষ হোক কিংবা নারী হোক যদি ঈমানদার হয়, তাহলে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।
কুরআন মাজীদে আরো ইরশাদ হয়েছে—
ان الله لايغفر أن يشرك به ويغفر ما دون ذلك لمن يشا
উচ্চারণ ঃ ইন্নাল্লাহা লা ইয়াগফিরু আঁইয়ুশনাকা বিহী ওয়া ইয়াফিরু মা-দূনা যালিকা লিমাইয়্যাশা-উ।
অর্থ ঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তাঁর সাথে শরিক করা মার্জনা করবেন না এবং এতদ্ব্যতীত যা হোক যার জন্য ইচ্ছা করেন, মার্জনা করবেন।
কুরআন মাজীদের অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে
الله ولي الذين أمنوا يخرجهم من الظلمات إلى النّور
উচ্চারণ : আল্লাহু ওলিয়্যুল্ লাযীনা আমানূ ইউখরিজুহুম্ মিনায় যুলুমাতি ইলান নূর। অর্থঃ আল্লাহ্ তা'আলা ঈমানদারগণের বন্ধু, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে বের করে। সত্যের আলোতে পৌঁছে দেন।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলে করীম (সা.) বলেছেন— لايدخل الجنة كافر ولا يدخل النار المؤمن উচ্চারণ : লা ইয়াদখুলুল জান্নাতা কাফিরুওঁ ওয়ালা ইয়াদখুলুন নারাল মু'মিনু।
অর্থ ঃ কোনো কাফির ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করবে না এবং কোনো মু'মিন বান্দা দোযখে যাবে না।
হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে— شيئا لقيته مغفرة A ومن لقيني بقراب الأرض خطيئة لايشرك بي -
উচ্চারণ : ওয়া মাল লাকিয়ানী বিকুরাবিল আরদ্বি খাড়ীআতাল লা ইউশরিক বী শাইয়াল লাকীতুত মাগফিরাতান।
অর্থ ঃ আর যে ব্যক্তি জমিন পরিমাণ শুনাহসহ আমার সাথে সাক্ষাৎ করে, যদি আমার সাথে কোনো বস্তু শরিক না করে, তবে তা মার্জনা করে তার সাথে সাক্ষাৎ করব।
আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজীদের অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন— أمنوا وعملوا الصلحت أولئك أصحب الجنة هم فيها خلدون والذين
উচ্চারণ : ওয়াল্লাযীনা আমানূ ওয়া 'আমিলুস সালিহাতি উলাহিকা আসহাবুল জান্নাতি হুম ফীহা খালিদূন।
অর্থ ঃ যারা ঈমান গ্রহণ করেছে ও নেক আমল (কাজ) করেছে, তারাই জান্নাতবাসী, তারা তার ভিতরে চিরকাল বসবাস করবে।