ক্যান্সার কত প্রকার ও কি কি? ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
ক্যান্সার কি?
পৃথিবীর সমস্য প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায়ক্যান্সার কত প্রকার ও কি কি?
কারসিনোমা-
সারকোমা-
লিম্ফোমা-
লিউকেমিয়া-
রক্ত কোষের ক্যান্সারকেই লিউকেমিয়া বলে। এই রক্তকোষগুলো হাড়ের মজ্জা থেকে জন্ম নেয়।
ক্যান্সারের লক্ষণ
ক্যান্সারের লক্ষণ
দীর্ঘদিন ক্লান্তি -
আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে ক্লান্তিবোধ করেন অথবা অবসাদে ভোগেন তবে সেটা অনেক রোগেরই কারণ হতে পারে, হতে পারে ক্যান্সারও। মলাশয়ের ক্যান্সার বা রক্তে ক্যান্সার হলে সাধারণত এমন উপসর্গ দেখা যায়।
তাই, আপনি যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ক্লান্তিবোধ করেন অথবা দীর্ঘদিন ধরে ক্লান্ত থাকেন, অবিলম্বে চিকিৎসা নিন।ক্যান্সারের লক্ষণ
আকস্মিক ওজন হ্রাস-
কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই দ্রুতগতিতে যদি ওজন হারাতে থাকেন, তবে ভাবনার কারণ আছে। অনেক ক্যান্সারই সাধারণত হুট করে ওজন কমিয়ে ফেলে। তাই শরীরের ওজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে সবসময়।ক্যান্সারের লক্ষণ
> দীর্ঘদিনের ব্যথা -
দৃশ্যত কোনো কারণ ছাড়া যদি - আপনি দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোনো স্থানে ব্যথায় ভোগেন, তবে তাতে ওষুধও কাজ না করলে এ নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। শরীরের কোন জায়গায় ব্যথা করছে তার ওপর নির্ভর করছে ক্যান্সারে আক্রান্ত কিনা।ক্যান্সারের লক্ষণ
> অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড -
শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক কোনো মাংসপিণ্ড দেখতে পান অথবা মাংস জমাট হতে দেখেন কিংবা এ ধরনের পরিবর্তন বুঝতে পারেন, তবে এটা তেমন কিছুরই লক্ষণ, যা আপনার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। এমনকি আপনার শরীরে কোনো পরিবর্তন স্বাভাবিক মনে হলেও পর্যবেক্ষণ করুন, এরপর অন্তত চিকিৎসককে জানান।ক্যান্সারের লক্ষণ
→ ঘন ঘন হালকা জ্বর -
ক্যান্সার শরীরে জেঁকে বসলে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এতে ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয়। দুর্ভাবনার ব্যাপার হলো, কিছু ক্যান্সারের শেষ পর্যায়েরই উপসর্গ ঘন ঘন জ্বর।
ত্বকে পরিবর্তন -
অনেকেই ত্বকের ক্যান্সারের ব্যাপারে সচেতন নন। ত্বকে অস্বাভাবিক পরিবর্তনই শনাক্ত করার সহজ উপায় - যদি এর রং, আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান । ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, ফস্কুড়ি পড়ে যাওয়া এবং রক্তক্ষরণও ক্যান্সারের উপসর্গ।
দীর্ঘস্থায়ী কাঁশি -
আপনি যদি দেখেন যে ওষুধ সেবনের পরও কাশি সারছেই না। আর এই কাশির কারণে যদি আপনার বুক, পিঠ বা কাঁধে ব্যথা করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মল-মূত্রত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন -
যদি মল বা মূত্রত্যাগ ঘন ঘন হয়, তবে এখানে ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যও মলাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ।
অকারণে রক্তক্ষরণ -
যদি কাশির সময় রক্তক্ষরণ হয়, তবে এটা ক্যান্সারের বড় লক্ষণ। এছাড়া স্ত্রী অঙ্গ (ভ্যাজিনা) বা মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণসহ এ ধরনের অন্যান্য অস্বাভাবিকতাও ক্যান্সারের উপসর্গ।
> খাবার গ্রহণে সমস্যা -
কেউ খাবার খেলেই যদি নিয়মিত বদহজমে ভোগেন, তবে পেট, গলার ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। অবশ্য সাধারণত এসব উপসর্গকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। তবু অসুস্থতাকে কখনো এড়িয়ে যেতে নেই।
→ অন্যান্য উপসর্গ -
তবে এর বাইরেও অনেক লক্ষণ আছে ক্যান্সারের। এগুলোর মধ্যে আছে পা ফুলে যাওয়া, শরীরের আকারে বা অনুভূতিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ইত্যাদি।
> তিল বা আঁচিল -
শরীরে নানা রঙের তিল থাকে কিন্তু হঠাৎ যদি পরিবর্তন ঘটে গেছে, যেমন—আকারে দ্রুত বড় হয়েছে, রং পরিবর্তন হয়েছে, খসখসে হয়ে গেছে, ভেতর থেকে রক্ত বা কষ বের হচ্ছে—এমন উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে এবং চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এসব ক্যান্সারের লক্ষণ।
> ক্ষতস্থান না শুকালে -
আপনার শরীরে কোনো ক্ষত যদি তিন সপ্তাহেও না শুকায়, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ থাকতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
মানবদেহে যেভাবে ক্যান্সার প্রবেশ করে -
> ননস্টিক কুকওয়্যার-
ননস্টিক কুকওয়্যারের উপরের অংশে যে কোটিং থাকে সেটি স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ভাল নয়। রান্নার সময় পাত্রটি যখন গরম হয়ে যায় তখন এই কোটিং থেকে ফ্লুওরাইড ভিত্তিক কিছু গ্যাস এবং রাসায়নিক নির্গত হয় যেগুলি কার্সিনোজেনিক, অর্থাৎ ক্যানসারের বীজ হিসেবে কাজ করে।
→ ঘর পরিস্কার করার উপাদান -
ঘরকে পরিস্কার রাখতে আমরা অনেকেই বাজার থেকে নানা রকমের বোতলবন্দি সাবান জাতীয় জিনিস কিনে আনি। এগুলিতে বিসফেনল-এ, ট্রাইক্লোসান, প্যারাবেন-এর মতো কিছু অত্যন্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। যখন এগুলি ঘর মোছার কাজে ব্যবহৃত হয়, তখন শরীরেও তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার পাশাপাশি ক্যানসারেরও সম্ভাবনা দেখা দেয় এগুলি ব্যবহারের ফলে।
> প্লাস্টিকের বোতল ও খাবার রাখার পাত্র -
এই ধরনের জিনিস তৈরির সময় বিসফেনল-এ নামের একটি উপাদান ব্যবহার করা হয় যা প্লাস্টিককে শক্ত করার কাজে লাগে। প্লাস্টিকের বোতল ও টিফিন কেরিয়ারে যখন জল বা খাবার রাখা হয় তখন সেগুলিও এই উপাদানের সংস্পর্শে বিষময় হয়ে ওঠে। এই ধরনের পাত্রে রাখা খাবার বা জল শরীরে গেলে ক্যানসারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
উপরোক্ত জিনিসগুলি ব্যবহার করলেই ক্যানসার হবে, এমন কোনও কথা নেই। তবে সুস্থ থাকতে চাইলে এগুলির ব্যবহার যথাসম্ভব কমানোই উচিত।
ক্যান্সারের কারণ
বয়স -
পারিবারিক ইতিহাস -
. দেরিতে প্রথম সন্তান -
. স্থূলতা বা চর্বি জাতীয় খাদ্যাভ্যাস -
অধিক ওজন এবং চর্বি জাতীয় খাবার, অ্যালকোহল ইত্যাদি এবং কায়িক পরিশ্রম না করা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। স্তনে বা বগল তলায় শক্ত চাকা হওয়া যা সাধারণত ব্যথাবিহীন হয়।স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন হওয়া।
ক্যান্সার প্রতিরোধ -
গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত কিছু ব্যাপার মেনে চললে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকখানি কমানো যায়। যেমন:
ব্যায়াম এবং ক্যান্সার-
প্রত্যেকদিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা যেমন-দৌড়ানো, সাইকেল চালনো, নাচ করা, হাঁটা।সপ্তাহে কমপক্ষে ২দিন ভারী ব্যায়াম করতে হবে।
খাদ্যভ্যাস ও ক্যান্সার-
ধূমপান বা মদ্যপান ছেড়ে দেয়া বা পরিমাণ কমিয়ে আনা। পান-সুপারি জর্দা, তামাকপাতা খাওয়া বন্ধ করা। চর্বিজাতীয় পদার্থ কম খাওয়া। সম্ভব হলে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেয়া বা কমিয়ে দেয়া। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফলমূল এবং আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন