নিজেকে ভালো রাখার উপায়

 নিজেকে ভালো রাখার উপায়! মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য যে কাজগুলো করবেন?

নিজেকে ভালো রাখার উপায়

১)অন্যের প্রতি সহযোগিতা


অনেকেই পাশের মানুষের ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকেন। কিন্তু ভেবে দেখার চেষ্টা করুন, সেই মানুষটি কেন এমন করেছেন। সমানুভূতি থেকেই এমনটি করা সম্ভব। তাই সব সময় নিজের ব্যাপারগুলো না দেখে অন্যদের সমস্যাগুলোও বোঝার চেষ্টা করুন।

2)নিজের উপর আস্থা রাখুন

যত যাই হোক, নিজেকে বোঝার ক্ষমতা আপনারই আছে। সব নেতিবাচকতা এড়িয়ে নিজেকে অভয় দিন, ‘দিন শেষে আমিই জয়ী!’

৩)ইতিবাচক থাকুন

আপনি কাজটা যেভাবে করবেন, তার ফলটাও সে রকমই হবে। এটা মাথায় রেখেই কাজে লেগে পড়ুন। শেষ বিকেলে কী হবে তার জন্য চিন্তা না করে নিজেকে আশ্বাস দিন। প্রতিটি ঘটনারই দুটি দিক থাকে—ইতিবাচক ও নেতিবাচক। চেষ্টা করুন সব সময় ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে বের করার। এর ভালো দিকটা আপনি নিজেই দেখতে পাবেন।

৪)উৎফুল্ল এবং প্রাণবন্ত থাকার চেষ্টা করুন

উৎফুল্ল এবং প্রাণবন্ত থাকার জন্যে শুধুমাত্র যে মেডিটেশন কিংবা ইয়োগা করতে হবে এমন কোন কথা নেই। ইয়োগা করার সময়ে অথবা মেডিটেশন করার সময়ে কেউ উৎফুল্ল থাকতে পারেন অথবা মানসিকভাবে অনেক শান্তিতে থাকতে পারেন সেটা কিন্তু নয়। সাঁতার কাটার সময়েও কেউ চাইলে অনেক প্রাণবন্ত থাকতে পারেন।

 এই ব্যাপারটি সম্পূর্ণই নির্ভর করে নিজের উপরে। যে কোন কাজ অনেক আনন্দের সাথে, উৎফুল্লতার সাথে করতে পারলে এবং সেই সময়টুকুতে নিজের সবটুকু মনোযোগ শুধুমাত্র সেই কাজের মধ্যে দিয়ে দিলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অনেক বেশী প্রাণবন্ত থাকা যায়।তাই যখন কেউ সাঁতার কাটবে তখন তার মনে শুধুমাত্র সেই সাঁতার নিয়েই ভাবতে হবে, সেদিকেই মনোযোগ দিতে হবে। 

জেসন হুইলার বলেন, "ভালোভাবে সাঁতার কাটার জন্যে, আমি যেটা করছি সেটাতেই আমাকে মনোযোগ দিতে হবে এবং আমি সাঁতারের প্রতিটা স্ট্রোকে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে মাঝে বেঁচে থাকে এটা নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে।"  

৫)কেনাকেটা করুন


কেনাকাটা নিশ্চয়ই আপনার অনেক পছন্দের। তাহলে দেরি কেন? সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে চলে যেতে পারেন পছন্দের কোনো শপিংমলে। দোকান ঘুরে ঘুরে কিনতে পারেন পছন্দের কোনো পোশাক। কেনাকাটাই করতে হবে এমন নয়, ঘোরাঘুরি করলেও দেখবেন মনে ফুর্তি আসবে।

৬)পুষ্টিকর খাবার খান

আপনার ডায়েটে থাকা উচিত সবজি, ফলমূল, টার্কি ও মুরগির মতো চর্বিহীন মাংস এবং পরিমিত পরিমাণ ভাত, রুটি বা অন্যান্য খাদ্যশস্য। মসলাযুক্ত খাবার ও চর্বিযুক্ত মাংস একদম এড়িয়ে চলুন।

৭)গান গাইতে পারেন

দ্রুত মন ভালো করতে গেয়ে উঠতে পারেন পছন্দের কোনো গান। নয়তো নানা ধরনের পছন্দের গান শুনতে পারেন। এটা মন ভালো করার সবচেয়ে ভালো উপায়।

৮)জীবনে সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন


অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ছুটির দিন পাওয়ার জন্যে অথবা কোন উপহার পাওয়ার জন্যেই নয়- নিজের জীবনের ছোটখাটো সবকিছুর জন্যে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। প্রতিদিনের জীবনের সবকিছুর জন্যে, সবকিছুর প্রতিই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে নিজের মাঝে।গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, ছোটখাটো থেকে বড়- সকল বিষয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার অভ্যাস গড়ে তুললে নিজের মাঝে হতাশা তৈরি হয় না এবং রাতে ঘুম খুব ভালো হয়। 

আপনি যদি অনেক বেশী হতাশ বোধ করে, মন যদি খুব বেশী খারাপ হয়ে থাকে তবে নিজের জীবনের কী কী বিষয়ের প্রতি আপনি কৃতজ্ঞ তার একটা লিষ্ট করে ফেলতে পারেন। এতে করে, নেতিবাচক সকল বিষয়ের উপর থেকে আপনার দৃষ্টি ইতিবাচক দিকে ঘুরে যাবে। নিজের জীবনের সকল ভালো কিছুকে বুঝতে পারা এবং তার জন্যে নিজের মধ্যে কৃতজ্ঞতা বোধ তৈরি করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই উপকারি।

৯)কৃতজ্ঞ থাকুন


দিন শেষে যখন নীড়ে ফিরবেন, তখন চিন্তা করুন আপনি কতটা সফল। অনেকেই আছেন, ঠিক আপনার জীবনটাই পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।

১০)ঠিকমতো খাবার ও ঘুম


শরীর ও মন একটি আরেকটির ওপর নির্ভরশীল। তাই একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী চলার চেষ্টা করুন। যেমন পরিমিত পরিমাণে খাবার ও ঘুম। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় শারীরিক ব্যায়াম বা ইয়োগা করতে পারেন। এতে দুশ্চিন্তা অনেকটাই লাঘব হয়।

১১)নতুন কিছু করুন


নেতিবাচক ভাবনা থেকে বেরিয়ে যান। নতুন কিছু করুন। জিমে ভর্তি হোন বা খেলাধুলা কিংবা রান্নার ক্লাসে ভর্তি হতে পারেন। এতে আপনার মন ভালো রাখার জন্য দারুণ কাজে দিবে। আগামীকাল সকালে উঠে নতুন কী করবেন তাঁর পরিকল্পনা করুন।

১২)নতুন শখ পূরণ করুন


অরিগামি(কাগজ দিয়ে বানানো চমৎকার সব জিনিস), নিজের হাতে মজাদার চকোলেট কেক বানানো, গিটার বাজানো পারেন। অথবা আপনার মনের মধ্যে লুকানো দীর্ঘদিনের সুপ্ত ইচ্ছা পূরণ করতে পারেন। পছন্দের শখটি পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিতে পারেন। চাইলে নতুন কোনো শিল্পকর্মও শিখতে পারেন। এতে আপনার চমৎকার সময় কাটবে এবং মনে ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করবে। নতুন কোনো রান্না শিখতে পারেন। তারপর বন্ধুদের আমন্ত্রণ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। 

১৩)নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা না করা


‘ওর ওটা আছে, আমার নেই কেন’—এ ধরনের চিন্তা আপনার নিজ মানসিক শক্তিকেই কমিয়ে দেয়। এমনকি দীর্ঘ মেয়াদে আপনার মধ্যে হতাশা কাজ করবে। তাই মনে রাখুন, সবার প্রতিভা এক নয়। কারও হয়তো পড়াশোনায় মেধা আছে, আবার কারও খেলাধুলায়। তাই চেষ্টা করুন নিজের প্রতিভাকে বিকশিত করার।

১৪)নিজেকে ফিট রাখুন

শীত এলেই চারদিকে ছুটির আমেজ। পিকনিক, বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন আরও কত রকমের আয়োজন। এ আয়োজনে থাকে নানারকম মজাদার খাবার। লোভনীয় বলে সব সময় না খেয়ে আর কতটা নিজেকে কষ্ট দেয়া যায়? এমন ভাবনা আমাদের সবার। 

কিন্তু যারা শরীর নিয়ে একটু ভাবনার মধ্যে আছেন অর্থাৎ যারা মুটিয়ে গেছেন তাদের অবশ্যই খাবারের পরিমাণ এবং ক্যালরির দিকে নজর দেয়া উচিত। আমরা যারা স্বাভাবিক কাজ কর্মের মধ্যে থাকি তারা সব সময় ব্যায়ামের দিকে খুব একটা নজর দেই না। 

কিন্তু শরীরটা তো ঠিক রাখা চাই। তাই নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম একজন সুস্থ মানুষের খুবি জরুরি। শরীরে বাড়তি মেদ ঝরাতে আপনার সিদ্ধান্তই আসল। আপনি চাইলেই আপনার ওজন নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। শরীরে জমে থাকা বাড়তি মেদ ঝরাতে আপনাকে কী করতে হবে? পোড়াতে হবে ক্যালোরি। 

যত ক্যালোরি বাড়তি খাচ্ছেন প্রতিদিন, ততখানি ঝরিয়ে ফেলতে পারলেই বাড়বে না ওজন। আর একটু বেশি ঝরাতে পারলেই ওজন কমতে শুরু করবে। ওজন কমানো মানেই জিমে গিয়ে ব্যায়াম করা নয়, বরং নিজের দৈনন্দিন জীবনের ফাঁকেই একটু বুদ্ধি করলে ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন বাড়তি মেদ। আসুন একটু চোখ বুলিয়ে নেই কীভাবে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রিত করতে পারি।


১। সকালে ২০ মিনিট মর্নিংওয়াক করুন।


২। দৈনিক ১৫ মিনিট বাইসাইকেল চালানোর অভ্যাস করুন।


৩। লিফটকে ‘না’ বলে সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে উঠুন।


৪। ফোনে কথা বলুন হেঁটে হেঁটে।


৫। গান ছেড়ে মন খুলে নাচুন মিনিট পনেরো।


৬। বসে থাকার অভ্যাসটা বাদ দিয়ে দিন।


৭। দৈনিক পান করুন কমপক্ষে দুই কাপ গ্রিন-টি।


৮। নিজের কাজগুলো নিজেই করুন রোজ। যেমন কাপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যাদি।


৯। একটু স্পাইসি খাবার খান। মসলা মেটাবোলিজম বাড়ায় ও ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে।


১০। ফ্যাট বা তেলযুক্ত যে কোনো খাবার খাওয়ার পরই বরফ শীতল পানি বা পানীয় পান করবেন না। ঠাণ্ডা কিছু খেতেই হলে ৩০ মিনিট পর খান।


১১। খাবার খান সময় নিয়ে, ভালোমতো চিবিয়ে খান।


১২। কোমল পানীয় পান করা একেবারেই বাদ দিন।


১৩। ভালোমতো ঘুমান।


১৪। দৈনিক মিনিট দশেক দড়ি দিয়ে ব্যায়াম করুন অর্থাৎ স্কিপিং করুন।


১৫। ব্যায়াম করতে ভালো লাগে না? পিং পং বল খেলাটা কিন্তু ভালো ব্যায়াম।


১৬। চিনি খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে দিন।


১৭। প্রতি বেলায় খাবারের সঙ্গে সালাদ খান।


১৮। মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।


১৯। স্ট্রেসমুক্ত জীবনযাপন করুন।


২০। মন খুলে হাসুন, আনন্দ করুন। কেবল হেসেই মিনিটে ১.৩ ক্যালোরি পোড়ানো যায়। মনে রাখবেন, বিষণœতা মানুষকে দ্রুত মোটা বানিয়ে ফেলে।


এভাবেই চলুক আগামী কিছুদিন তারপর নিজেই দেখবেন আপনার এনার্জি লেভেল কত বেড়েছে। আপনি কতটা ঝরঝরে অনুভব করছেন। আমাদের অন্তরের বিশ্বাসই আমাদের লক্ষ্য অর্জনের মূল হাতিয়ার। তাই বিশ্বাস করুন নিজেকে আর ভালোবাসুন নিজের কাজকে।

১৫)নিজেকে ভালোবাসুন

সবার আগে নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন। সময় বরাদ্দ রাখুন কিছুটা নিজেরও জন্য। আপনার প্রিয় মানুষটি কাছে নেই? আপনি নিজেই ব্যস্ত হয়ে পড়ুন না! ঘুরে আসুন কোথাও কিংবা শখের বিষয়গুলো চর্চা করুন। কিংবা পরিবারের সবার জন্য কিছু একটা রান্না করে ফেলুন ঝটপট।

১৬)নেতিবাচক চিন্তা আর নয়

আগামীকাল পরীক্ষা আর আজ রাতে আপনার মনে ভিড় করল হাজারো দুশ্চিন্তা, যার অধিকাংশই নেতিবাচক। খুব সহজ ভাষায় এ ধরনের চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। শুধু এমন চিন্তাই নয়, নেতিবাচক মানুষ এবং আলোচনা থেকেও সরে আসুন। কেননা, আপনার পরিধি নিজেই বুঝবেন, অন্যের কথায় সহজেই প্রভাবিত হওয়ার কিছু নেই।

১৭)পরিবার ও বন্ধুর সঙ্গে সময় উপভোগ করুন


বন্ধুমহল কিংবা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন। এতে দুই পক্ষই খুশি হবে। এমন অনেক ব্যাপার থাকে, যা আমরা প্রিয় মানুষটির চেয়ে বন্ধুটির কাছে প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাই কিছুটা সময় বন্ধু মানুষটির সঙ্গে বেড়িয়ে আসুন।

১৮)ভ্রমণে যেতে পারেন


ভ্রমণে নবজীবন লাভ করা যায় এটা প্রমাণিত। দেশ অথবা বিদেশে আপনার পছন্দের যেকোনো জায়গায় ঘুরে আসতে পারেন। অফিস থেকে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে নিন। তারপর কাউকে না বলে দূরে কোথাও পছন্দের জায়গা চলে যান। তখন দেখবেন ভীষণ এক ভালোলাগা কাজ করবে আপনার মধ্যে।

১৯)সমাজসেবামূলক কাজ করুন


কথায় বলে ‘ভোগে সুখ নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’। কথাটি সত্যি কিনা আজই প্রমাণ করে দেখতে পারেন। ছিন্নমূল কোনো একটি শিশুকে নতুন কাপড় বা রেস্টুরেন্টে এক বেলা খাবার খাইয়ে দেখুন। কথা দিচ্ছি, আপনি মানসিক তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন। তাই সামাজিক কোনো কাজে নিজেকে জড়িত রাখতে পারেন। আত্মতৃপ্তি পাবেন। 

২০)সাহায্য করুন


অন্যকে সাহায্য করুন। পরিবারের সদস্যদের কাজে সাহায্য করুন বা বন্ধুদের কাজে সাহায্য করুন। এতে আপনার সময় যেমন কাটবে তেমনি মন ঝটপট ভালো করে ফেলার কিছু মজার খোরাগও পেয়ে যাবেন। যা আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।


1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন