জাহান্নামিদের শাস্তি এবং খাদ্য ও পানিয়

 

জাহান্নামিদের শাস্তি  এবং খাদ্য ও পানিয়
জাহান্নাম 

হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- জাহান্নামবাসীদের গায়ের রং কালো এবং চোখ দু'টি দৃষ্টিশক্তিহীন ও কুরঞ্জিত বর্ণের হবে। তাদের কোনো বুদ্ধি-বিবেক বলতে কিছুই থাকবে না। 

মাথা পর্বতের মত বিশাল হবে, দেহ হবে কর্মকারের হাপরের মতো। জাহান্নাম তার জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে থাকবে। তাদের দেহখানা ৭০টি চামড়া দিয়ে আবৃত থাকবে । 

প্রতি দু'টি চামড়ার মাঝখানে ৭০ স্তর আগুন থাকবে। ভয়ঙ্কর সাপ বিচ্ছু প্রভৃতি দিয়ে তাদের পেট ভরা থাকবে। তাদের গলার স্বর হবে হিংস্র প্রাণী এবং গাধার স্বরের মত। তারা শিকল ও বেড়ী দিয়ে শৃঙ্খলিত থাকবে। সাঁড়াশী দিয়ে তাদের দেহকে কাটা হবে। লোহার মুগুর দিয়ে তাদের শরীরে বেদমভাবে আঘাত করা হবে। অবশেষে টেনে হেচড়ে তাদেরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়া হবে।


রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন- জাহান্নামবাসীগণ আল্লাহকে আহ্বান করে বলবে- হে পাক পরওয়ারদেগার! জাহান্নামের আগুন আমাদেরকে চারদিকে থেকে ঘিরে রেখেছে। 

আমরা একটি সংকীর্ণ গণ্ডির ভিতর আবদ্ধ হয়ে পড়েছি। কিন্তু হাজার অনুনয় বিনয়েও তাদের শাস্তি কমানো হবে না। বরং যাতে তারা আর কথাবার্তা বলতে না পারে সেজন্য তাদের গলায় বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তারা চিৎকার করতে থাকবে এবং অধৈর্য হয়ে মরণ কামনা করতে থাকবে।


অতঃপর জাহান্নামের ভিতর তাদেরকে কঠিনভাবে জিঞ্জির আবদ্ধ করে রাখা হবে। সেখানে কঠোর আজাব ও সংকীর্ণ গণ্ডিতে অবস্থান করে বারবার আল্লাহ পাকের নিকট মিনতি জানাবে। এসময় তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ গলে পূঁজ পড়তে থাকবে তাদের চেহারা বিবর্ণ ও বিকৃত হয়ে যাবে।


জাহান্নামী পাপীগণ চিৎকার দিবে এবং নিবেদন করবে, হে আল্লাহ! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পাপ করতে বাধ্য করেছিল। আমরা বিভ্রান্ত ছিলাম। অন্ততঃ একটি দিনের জন্য হলেও আমাদের শাস্তিকে তুমি একটু কমাও। কেননা, আমরাতো মুমীন ও বিশ্বাসী হয়েছি।


রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ পাক জাহান্নামবাসীদের জন্য একটি পর্বত সৃষ্টি করে রেখেছেন। তারা যখন আল্লাহর আদেশ অনুসারে মাথা নীচু করে বসর কাল চলার পর পর্বতের শীর্ষে পৌঁছাবে, তখনই পর্বত বিকট আকারে প্রকম্পিত হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে আরোহীগণ ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তারা সকলে পর্বতের তলে পড়ে যাবে।


রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন- এতটুকু বৃষ্টির আশায় জাহান্নামবাসীগণ আল্লাহর নিকট এক হাজার বসর কাকুতি মিনতি করার পর গাঢ় কালো রঙ্গের একখন্ড মেষ জাহান্নামের ওপর এসে দাঁড়াবে। 

তা দেখে জাহান্নামবাসীদের মনে আশার সঞ্চার হবে যে, এই মেঘ বর্ষিত হলে আমাদের কষ্ট কিছুটা লাগব হবে, পিপাসা কমবে। কিন্তু মেঘ থেকে অসংখ্যা পাথর এবং কালো কালো বিষধর সাপ তাদের ওপর বর্ষিত হতে থাকবে। সেগুলো দংশন করলে তার বিষক্রিয়া হাজার হাজার বসর পর্যন্ত থাকবে। ভীষণ কষ্ট হবে সে দংশনে। আজাব সম্পর্কে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন-

زدنهم عذابا فوق العذاب بما كانوا يفسقون ۔

উচ্চারণ ঃ যিনাহুম্ আজাবান্ ফাওকাল্ আজাবি বিমা কানু ইয়ুফসিদুন্ ।

অর্থ ঃ তাদের ফেৎনা ফাসাদের কারণে তাদেরকে আমরা তাদের শাস্তিকে কঠোর থেকে কঠোরতর করে দিয়েছি। (সূরা নহল-৮৮) রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- জাহান্নামবাসীগণ কাকুতি


মিনতি করে ৭০ হাজার বসর পর্যন্ত মালিক ফিরিশতার নিকট নিবেদন জানাবে। কিন্তু ফিরিশতা মালিক কোনো রকমের উত্তর দিবে না। অতঃপর কোনো উপায় না দেখে আল্লাহর নিকট আরয করে বলবে- হে আল্লাহ! মালিক ফিরিশতা আমাদের কোনো কথা শুনছেনা। 

পুনরায় তারা মালিক ফিরিশতাকে ডেকে বলবে- হে মালিক! 'তাসনীম' নামক সরোবরের এক অঞ্জলি পানি অন্তত আমাদেরকে পান করতে দিন। জাহান্নামের আগুন আমাদের দেহকে একেবারে ছাই করে দিয়েছে।


অবশেষে ফিরিশতা মালিক (আঃ) জাহান্নাম থেকে তাদেরকে সকলকে এক অলি করে পানি পান করাবেন। সে পানি এতই বিষক্রিয়া যুক্ত হবে যে, তা হাতে নেয়ার সাথে সাথে আঙ্গুল খসে পড়ে যাবে। মুখের কাছে নেয়া সাথে সাথে মুখমন্ডল, দাঁত ও চোখ খসে পড়ে যাবে। পানি পেটে যাওয়ার সাথে সাথেই নাড়ি ভূড়ি সব বের হয়ে চলে আসবে।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন- জাহান্নামবাসীগণ খাদ্য প্রার্থনা করবেন, তখন তাদেরকে 'যাককুম' নামক এক ধরনের কাঁটাযুক্ত বিষাক্ত বৃক্ষ খেতে দেয়া হবে। 

তা খাওয়া মাত্রই পেটের ভিতরের সব কিছু উথলে উঠবে। মাথার মগজ টগবগ করে ফুটবে, দাঁতগুলো খসে পড়ে যাবে। মুখ দিয়ে আগুনের শিখা বের হতে থাকবে। নাড়ি ভূড়ি সবকিছু গুহ্য দ্বার দিয়ে বেহ হয়ে আসবে। সে যন্ত্রণা হবে ভয়াবহ।


রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন- জাহান্নামবাসীদেরকে আলকাতরা দিয়ে জড়ানো পোশাক পরানো হবে। সে পোশাক পরানো মাত্রই গায়ের সব চামড়া খসে পড়ে যাবে। দূর্ভাগ্য জাহান্নামবাসীগণ অন্ধ, বোবা ও বধির হয়ে যাবে। 

ফলে তারা সব দেখা বলা ও শোনা থেকে বঞ্চিত হবে। ক্ষুধার্ত মানুষ আহার করতে চায়। কিন্তু জাহান্নামবাসীগণ তাও চাবে না। মুমূর্খ লোক তার দীর্ঘ আয়ু কামনা করে কিন্তু জাহান্নাম বাসীগণ তা চাবে না, কিন্তু সে কামনা করবে মৃত্যু। তবে তার মৃত্যু হবে না।


Read


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন