ইসলামি জীবন ব্যবস্থা ও বাংলাদেশের পরিবার ব্যবস্থা কিরুপ?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমতুল্লাহ।

পরিবার ব্যবস্থা 


সমাজ গঠনের প্রথম ভিত্তিই হচ্ছে পরিবার। তাই ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় পরিবারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পরিবার প্রথা ব্যতিত কেউ ইসলামী জীবন ব্যবস্থার কথা কল্পনাও করতে পারে না।  

ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় পরিবারের স্বরূপ সম্পর্কে  বলা থাকলেও সমাজভেদে বিভিন্ন ধরনের পরিবার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

ইসলামী জীবনব্যবস্থার ও বাংলাদেশে পরিবার ব্যবস্থার তুলনাঃ-

নিম্নে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার পরিবার ও বাংলাদেশের বর্তমান পরিবার ব্যবস্থার তুলনামূলক আলােচনা করা হলাে-

আদর্শ পরিবারের সংজ্ঞা : 

যে পরিবার ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবােধের
ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং ইসলামী বিধি-বিধানের বাস্তব প্রতিফলন ঘটায় এবং যে পরিবারের সকল সদস্যই মুসলমান হয় তখন তাকে ইসলামী পরিবার হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসলামী পরিবারের অপর নাম আদর্শ পরিবার। 

ইসলামী জীবনব্যবস্থার পরিবার : 

ইসলামী পরিবারের মূলকথা হচ্ছে - যে পরিবার
ইসলামী ভাবধারা, ইসলামী নীতিমালা ও ইসলামী বিধিবিধানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং
পরিচালিত হয়, তাকে ইসলামী পরিবার বলে। 
 ইসলামী পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে

মুসলিম হতে হবে। স্বামী বা স্ত্রীর কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ না করে তবে তা ইসলামী

পরিবার হবে না।




অথবা কেউ যদি ইসলাম ত্যাগ করে তবে সে ঐ পরিবারের সদস্য নয় অনুরূপভাবে, কোনাে সন্তান ইসলাম ত্যাগ করলে বা ইসলাম গ্রহণ না করেলে সেই
ঐ মুসলিম পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য হবে না। সহজ কথায়, ইসলামী পরিবারের

সকল সদস্যকে অবশ্যই মুসলিম ও সকর্মশীল হতে হবে।
অতি প্রাচীন কাল হতেই মুসলিম সমাজে একক পরিবার ও যৌথ পরিবার এই দুই

জাতীয় পরিবারের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাছাড়া ইসলামী ধারণা মতে এ দুটো পরিবার পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের কোনাে বিধান নেই।


কারণ, আল্লাহ তা'আলা কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে পুরুষকে নারীদের উপরে প্রাধান্য
দিয়েছেন। পুরুষ সাধারণত পরিবারের প্রধান হবে এটি তার মধ্যে একটি। ইসলামী

বিধান মতে একজন পুরুষ তার স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ও অন্যান্য নিকটাত্মীয় তথা পৰািরের সকলের ভরণ-পােষণের দায়িত্ব পালন করবে। এটি আল্লাহ তা'আলার দেওয়া বিধান


পরিবার। পরিজনদের ভরণ পােষণের জন্য রুজি রােযগার করাকে ইসলাম ইবাদাত
হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সুতরাং মুসলমান হিসেবে কারাে পক্ষে পরিবার সম্পর্কে অন্য
কোনাে ধারণা পােষণ করা বৈধ নয়।

বাংলাদেশের পরিবার ব্যবস্থা : নিয়ে বাংলাদেশের পরিবার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলােচনা করা হলো -

১) একক পরিবার ও যৌথ পরিবার : 

বাংলাদেশের সমাজে সাম্প্রতিককালে একক
পরিবার প্রাধান্য লাভ করলে ঐতিহ্যগতভাবে গ্রামীণ পরিবারগুলাে যৌথ পরিবারের আওতাভুক্ত। তবে
 
বর্তমানে শহরাঞ্চলেও অনেক পরিবার যৌথভাবে বসবাস করে আসছে। গ্রামাঞ্চলে মুসলিমদের তুলনায় হিন্দু পরিবারগুলাে অধিকহারে যৌথ পরিবারভূক্ত।

২) পিতৃপ্রধান পরিবার : 

বাংলাদেশে পরিবার কাঠামাে সাধারণত পিতৃপ্রধান হলেও মায়ের ভূমিকা এখানে একেবারে গৌণ নয়। বিশেষত শহরাঞ্চলের পরিবারের মায়ের
ভূমিকা উল্লেখযােগ্য বিবেচিত।

৩) এক ও একাধিক বিবাহভিত্তিক পরিবার :

 বর্তমানে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ
পরিবারই এক বিবাহভিত্তিক পরিবার। তবে একাধিক বিবাহভিত্তিক পরিবারও নজরে

পড়ে। শহরে তুলনায় গ্রামে এর প্রবণতা কিছুটা বেশি। অপরদিকে, মুসলিম সমাজে
বিধবা বিবাহের প্রচলন থাকলেও হিন্দু সমাজে তা এখনও বাধাগ্রস্ত।

,৪) পিতৃবাস ও নয়াবাস নীতিভিত্তিক পরিবার : বাংলাদেশের পরিবার সাধারণত

পিতৃবাস ভিত্তিকই নীতি অনুসরণ করে। অর্থাৎ বিবাহের পর স্থায়ী বসবাসের জন্য স্বামীর
পিতৃগৃহকেই বাছাই করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা এখনও সচল। এর উল্টো


নীতি অর্থাৎ মাতৃবাসভিত্তিক পরিবারের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। এ প্রথা উপজাতীয়দের
মধ্যে দেখা যায়। অবশ্য বর্তমান ব্যাপক নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণে নয়াবাসভিত্তিক

পরিবার প্রথা চালু হয়েছে। নয়াবাসভিত্তিক পরিবারে বসবাসের জন্য স্বামী বা স্ত্রী পিতা বা
মাতার গৃহ নয়, বরং নতুন একটি স্থান বেছে নিচ্ছে।
পরিবার : দ্বি-স্ত্রীয় নীতিভিত্তিক পরিবার হচ্ছে, পিতৃ এবং মাতৃ উভয় পক্ষের

আত্মীয় স্বজনদের মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রদান করা। তবে আমাদের দেশে পরিবার কাঠামাে
পিতৃপ্রধান হওয়ার কারণে নানা-নানির চেয়ে দাদা-দাদি, মামা-খালার চেয়ে চাচা ফুফুকে

অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। আবার বর্তমানে নয়াবাসভিত্তিক পরিবার সংখ্যা বেড়ে
যাওয়ার দ্বি-সূত্ৰীয় নীতিভিত্তিক পরিবার গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে অধিক পরিলক্ষিত হয়।

সুতরাং আদর্শ পরিবার গঠনে যেসব উপায় উপকরণ
প্রয়ােজন তার সবই ইসলামে বিদ্যমান। আর ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় পরিবার গঠনের
মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইহ- পরকালীন সাফল্য লাভ।

 পক্ষান্তরে, কাঠামােগত ভিন্নতা
থাকলেও বাংলাদেশের বর্তমান পরিবার ব্যবস্থা পিতৃপ্রধান যা ইসলামেও স্বীকৃত।



আরো পড়ুন,

ইসলামি পরিবার বা আদর্শ পরিবার






লেখকঃA.K


2 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন