বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের তালিকা

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের তালিকা এবং উৎস অনুসারে সেগুলোর শ্রেণিবিভাগ
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের তালিকা এবং উৎস অনুসারে সেগুলোর শ্রেণিবিভাগ


(List of the Natural Resource of Bangladesh and Classify them According to Sources of Availability)


প্রাকৃতিক সম্পদ কাকে বলে (What is Natural Resources)ঃ


প্রাকৃতিক সম্পদ প্রকৃতির দান। সুতরাং প্রকৃতি প্রদত্ত সকল সম্পদকেই প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। আমাদের চারপাশে যা কিছু রয়েছে, যা আমরা প্রত্যক্ষ করি সবই প্রকৃতির দান। সবই মানুষের জন্য, সকল কিছুই মানুষের কাজে লাগে। 


প্রকৃতি স্ব্যবহৃত হস্তে এ সকল দ্রব্য মানুষকে দান করেছে। আর মানুষ তা আহরণ ও ভোগ করে চলেছে। অর্থাৎ মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহৃত প্রকৃতির দেওয়া সকল সম্পদকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলা হয়।


আরও পড়ুন 

জাতি হিসেবে বাঙালির আবির্ভাব 

বাংলাদেশের সংবিধান  

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের ভূমিকা 

সমাজ গঠনের উপাদান  

একজন নাগরিকের অধিকার 


বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ কম নয়। কিন্তু আমরা সকল প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করতে পারিনি । প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের উপর অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে। 


বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করতে হলে এ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। সুতরাং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা একান্ত দরকার। নিচে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের তালিকাসহ আলোচনা করা হলো :


(১) খনিজ সম্পদ : 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে খনিজ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশের খনিজ সম্পদগুলো হলো- গ্যাস, কয়লা, খনিজ তেল, আকরিক লৌহ, তামা, চুনাপাথর, নুড়িপাথর, চীনামাটি, সাদামাটি, কালোমাটি, সিলিকাবালু, খনিজবালু, কঠিন শিলা, গন্ধক ও লবণ।


(2) কৃষিজ সম্পদ : 

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি সম্পদ আমাদের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। কৃষিজাত দ্রব্য আমাদের খাদ্য যোগায় এবং রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। তাছাড়া শিল্পের জন্য কৃষিজাত দ্রব্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান কৃষিজাত দ্রব্যগুলো হলো ধান, পাট, চা, আলু, বাদাম, তামাক,আঁখ, সরিষা এবং বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য ও শাকসবজি। 


(3) বনজ সম্পদঃ

 কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি বনজ সম্পদের উপর নির্ভর করে। বৃক্ষ, লতাপাতা ও বন্য বনগ্ন সম্পদের অন্তর্ভূক্ত। দেশের যে সকল স্থানে অসংখ্য প্রকারের বৃদ্ধ মান এবং পাকে স্থানকে বনভূমি বলে। বাংলাদেশের পান গ্রাম, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, টাঙ্গাইলের মধুপুর, ঢাকার ভাওয়াল, দিনাজপুর ও রংপুরে বনভূমি রয়েছে। 


(8) পানি সম্পদঃ

 দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পানি সম্পদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সমুদ্র, নদী-নালা, খাল, বিল, পুকুর, মাটির নিচে এবং বৃষ্টি হতে আমরা পানি পেয়ে থাকি। এই পানি নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের কৃষি কাজে পানির খান শক্তি । পানি হতে পানিবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়।


(5) শক্তি সম্পদঃ

 কোনো দেশে শিল্পায়নের জন্য শক্তি সম্পদের একান্ত প্রয়োজন, শক্তি ছাড়া শিল্প চলতে পারে না। শিল্পকারখানা, মেশিন, ইঞ্জিন শক্তি দ্বারা চালিত হয়। শক্তি হলো অর্থনৈতিক উন্নতির চাবিকাঠি।


 মানুষের দৈহিক শক্তি ও গৃহপালিত পশু শক্তি ছাড়াও কয়লা, খনিজ তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বাষ্প, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি শক্তি সম্পদের অন্তর্গত। তবে প্রধানত কয়লা, খনিজ তেল বা গ্যাস এবং বিদ্যুতের সাহায্যে শক্তি সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশে শক্তি সম্পদ বলতে বিদ্যুৎ শক্তিকেই বোঝায়। 


পানির সাহায্যে উৎপাদিত বিদ্যুৎকে পানিবিদ্যুৎ বলে। কাব্বাইয়ের কর্ণফুলি নদীতে প্রধান পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অবস্থিত। কয়লা, তেল বা গ্যাসের সাহায্যে উৎপাদিত বিদ্যুৎকে তাপবিদ্যুৎ বলে। সিদ্ধিরগঞ্জ, আবঙ্গ, ঘোড়ামারা, গোয়ালপাড়া ও শাহজীবাজারে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত। 


যে বিদ্যুৎ অণুর সাহায্যে উৎপাদন করা হয় তাকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ বা আণবিক শক্তি বলা হয়। ঢাকায় একটি আণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পাবনা ও রংপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।


(৬) মৎস্য সম্পদ ঃ

মাছ বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় সম্পদ। বিদেশে মাছ রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়। তাই বাংলাদেশে ব্যাপক হারে মাছের চাষ করা দরকার।

 সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছের চাষ শুরু হয়েছে। চিংড়ি, ইলিশ, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতের মাছ এবং সামুদ্রিক মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হয়।

(৭) প্রাণিজ সম্পদ ঃ

প্রকৃতির দান গৃহপালিত প্রাণী এবং বন্য প্রাণী উভয়ই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি ও এদের খামার এবং বনের বাঘ, হরিণ, হাতি, সাপ, কীটপতঙ্গ ও বিভিন্ন পাখি প্রাণিজ সম্পদ হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নতিতে সহায়তা করে।

 (৮) উর্বর ভূমিঃ

 চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলের পার্বত্য এলাকা বাদে বাংলাদেশের প্রায় সকল এলাকাই নদীবাহিত পলিমাটি দ্বারা গঠিত উর্বর ভূমি।

 (৯) নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু : 

বাংলাদেশে জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য মৌসুমী বায়ু। আবহাওয়ার ২৫-৩০ বৎসরের গড় কলকে বলা হয় জলবায়ু। সমুদ্রের নৈকট্য এবং অত্যধিক বৃষ্টিপাতের ফলে বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বিরাজ করে। বাংলাদেশের জলবায়ু মোটামুটিভাবে উষ্ণ, আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন এবং বসবাসের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।


(১০) বৃষ্টিপাত : 

বাংলাদেশ মৌসুমী বায়ু প্রবাহের অন্তর্ভুক্ত। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় না। 


বাংলাদেশে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাংলাদেশে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় সিলেট জেলার লালখানে এবং সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত হয় নাটোর জেলার লালপুরে। 

এছাড়াও আবহাওয়া, জলবায়ু, নদ-নদী ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন