বাংলাদেশের সংবিধান ইতিহাস | ১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের সংবিধান ইতিহাস | ১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের সংবিধান

বাংলাদেশের সংবিধান একটি 

১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য


 রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এ নবীন রাষ্ট্রের জন্য একটি সংবিধানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।


 রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সগৌরবে দেশে ফিরে পরদিন ১১ জানুয়ারিতে তিনি একটি অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ জারি করেন। 


এ আদেশের বলে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে একটি গণপরিষদ গঠিত হয়। 


উক্ত গণপরিষদ বাংলাদেশের সংবিধান রচনার জন্য ডঃ কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। 


এই সংবিধান রচনা কমিটি সাত মাসে ৭১টি বৈঠকের মাধ্যমে সংবিধানের খসড়া তৈরি করে গণপরিষদে পেশ করেন।


১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

সংবিধান কি

 গণপরিষদ সামান্য পরিবর্তন করে এ খসড়া সংবিধানকে ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করেন। যা বাংলাদেশ সংবিধান নামে পরিচিত। এটাই লাখো শহীদের রক্তের অক্ষরে লেখা বাঙ্গালী জাতির স্বাধীন সত্তার অভিব্যক্তি। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর হতে বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকরী হয়।১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য


১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য


বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে বর্ণিত হলো : 


(১) রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শ ও মূলনীতি : 


বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শ ও মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা-এ চারটি নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে সমাজতন্ত্রের স্থানে “অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার” এবং ধর্মনিরপেক্ষতার স্থানে “সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” প্রবর্তন করা হয়।


(২) মৌলিক অধিকার:


 বাংলাদেশ সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো জনগণের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি। সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে।


১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য


(৩) লিখিত সংবিধান :


বাংলাদেশ সংবিধান লিখিত সংবিধান। ৮২ পৃষ্ঠায় লিখিত বাংলাদেশ সংবিধানে ১টি প্রস্তাবনা, ৪টি তফশিল, ১১টি অংশ, ১৫৩টি ধারা এবং অসংখ্যা উপধারা লিখিত রয়েছে। তাছাড়াও শাসন ব্যবস্থার কাঠামো, নির্বাচন পদ্ধতি, শপথ গ্রহণ, রাষ্ট্রভাষা জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা প্রভৃতি স্পষ্ট ও নির্দিষ্টভাবে সংবিধানে লিখিত রয়েছে।


(8) দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান :


বাংলাদেশের সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয়। ইচ্ছা করলেই একে পরিবর্তন ও সংশোধন করা যায় না। তবে প্রয়োজনে বিশেষ পদ্ধতির ব্যবস্থা রয়েছে। যথা- জাতীয় সংসদ সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনে কোনো সংশোধনী আনা যায়।


১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য


(৫) সর্বোচ্চ আইন:


 বাংলাদেশের সংবিধান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন বা ক্ষমতা। জনগণ এমনি সর্বোচ্চ ক্ষমতার মালিক এবং জনগণের পক্ষে ঐ ক্ষমতা শুধু সংবিধানের অধীনে ও কর্তৃত্বে পরিচালিত হবে। 

(৬) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা:


 এ সংবিধানে বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ এবং আইন বিভাগ হতে পৃথক রাখা হয়েছে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। 


(৭) এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা : 


সংবিধানে বাংলাদেশের জন্য এককেন্দ্রিক সরকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য


(৮) এক-কক্ষবিশিষ্ট আইন সভা :


 এ সংবিধানে বাংলাদেশের জন্য এক কক্ষবিশিষ্ট আইন সভার ব্যবস্থা করা হয়েছে।


 (৯) মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার:


 এ সংবিধানে বাংলাদেশের জন্য মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বা সংসদীয় পদ্ধতির ব্যবস্থা রয়েছে। এতে শাসন বিভাগকে আইন সভার নিকট দায়ী করা হয়। 


(১০) নামসর্বস্ব রাষ্ট্রপতি : 


বাংলাদেশের সংবিধানে একজন নামে মাত্র রাষ্ট্রপতি পদের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি সংসদ সদস্য কর্তৃক পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন।


(১১) সার্বজনীন ভোটাধিকার এ সংবিধান:


 জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল আঠারো বছর বয়স্ক নাগরিককেই ভোটাধিকারের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।


(১২) ন্যায়পাল পদের প্রবর্তন:


 বাংলাদেশের সংবিধানে সরকারি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ শ্রবণ ও তদন্ত করার, জন্য ন্যায়পাল পদের সৃষ্টি করেছে।


পরিশেষে বলা যায়, উত্তম সংবিধানের প্রায় সবগুলো বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের সংবিধানে বিদ্যমান। তাই যে কোনো বিচারে বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের একটি অন্যতম উত্তম সংবিধান

 কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংশোধনীর মাধ্যমে একে ক্ষত বিক্ষত করা হয়েছে। ঐ সব সংশোধনীর মধ্যে অধিকাংশ সংশোধনীতে জনমতের কোনো প্রতিফলন নেই।

 কারণে-অকারণে সংশোধন করে একটি উত্তম সংবিধানকে জর্জরিত করা হয়েছে। এসব সংশোধনীর ফলে বাংলাদেশের দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান সুপরিবর্তনীয় সংবিধানে পরিণত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন