একজন নাগরিকের অধিকার

একজন নাগরিকের অধিকার
নাগরিকত্ব 


একজন নাগরিকের অধিকার 

কোনো রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে একজন নাগরিকের বিভিন্ন অধিকার রয়েছে। একজন নাগরিকের অধিকার নিচে আলোচনা করা হলো : মানুষের সামাজিক প্রকৃতি হতেই অধিকারের উদ্ভব হয়। সমাজের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হলো রাষ্ট্রে। একজন নাগরিক রাষ্ট্রের মধ্যে বেশ কিছু অধিকার ভোগ করে থাকে। অধিকারগুলো প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত। যেমন- 

(১) সামাজিক অধিকার 

(২) রাজনৈতিক অধিকার এবং

 (৩) অর্থনৈতিক অধিকার।


(১) সামাজিক অধিকার 

(ক) নাগরিকগণ সু-শৃঙ্খলভাবে সমাজে বসবাস করার জন্য রাষ্ট্রকর্তৃক যে সকল অধিকার ভোগ করে তাদেরকে সামাজিক অধিকার বা Civil rights বলে। সামাজিক অধিকার বিভিন্ন প্রকার। যেমন (ক) বেঁচে থাকার অধিকার বেঁচে থাকার অধিকার হচ্ছে সকল অধিকারের মূল। কারণ নাগরিকদের জীবনের নিশ্চয়তা না থাকলে অন্যান্য অধিকারের কোনো মূল্যই নেই। এজন্য সকল দেশের প্রত্যেক সরকারই নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করে।


(খ) সম্পত্তির অধিকার সম্পত্তির অধিকার বলতে কোনো নাগরিক তাঁর নিজ সম্পত্তি লাভের ও ভোগের স্বাধীনতাকে বোঝায়। অর্থাৎ সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের অধিকার নাগরিকের থাকবে।


(গ) অবাধে চলাফেরার অধিকার গতিবিধির অধিকার হলো প্রত্যেক নাগরিক রাষ্ট্রের সকল স্থানে অবাধে চলাফেরা করতে পারবে। গতিবিধির স্বাধীনতা যাতে খর্ব না হয় তার প্রতি সরকারের দৃষ্টি রাখা উচিত। 

(ঘ) সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার নাগরিকগণের সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার, সংঘ গঠনের এবং সভা-সমিতি করার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে যাতে তাঁরা বক্তৃতা করে নিজেদের আদর্শ প্রচার করতে পারে।


(ঙ) মত প্রকাশের স্বাধীনতা : এটাও একটি মৌলিক অধিকার। মানুষ কথা বলে, প্রবন্ধ লিখে, পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে এবং সভা-সমিতিতে বক্তৃতা ও বিবৃতির মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করতে পারে। এজন্য প্রত্যেক নাগরিককে পূর্ণ বাক স্বাধীনতা দিতে হবে।


(চ) সাংস্কৃতিক ও ভাষার অধিকার প্রত্যেক নাগরিককে নিজস্ব সাংস্কৃতি ও ভাষার স্বাতন্ত্র্য রক্ষার অধিকার দিতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সকলকে এ বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। (ছ) ধর্মের অধিকার : মানুষের ধর্মের অধিকার একটি প্রধান সামাজিক অধিকার। প্রত্যেক নাগরিক নিজ নিজ ধ্যান ধারণা অনুসারে যাতে নিজ ধর্ম পালন করতে পারে তার বন্দোবস্ত রাষ্ট্রকে করতে হবে। এছাড়াও পরিবার গঠনের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, শ্রমের অধিকার, চুক্তির অধিকার ও আইনের চোখে সমানাধিকার ইত্যাদি সামাজিক অধিকার নাগরিকগণ ভোগ করে থাকে।

(২)রাজনৈতিক অধিকার

রাষ্ট্র একটি বৃহৎ বাজনৈতিক সংগঠন। এ সংগঠনের বিভিন্ন কাজে স্বীয় ভূমিকা রাখার জন্য নাগরিকগণ যে অধিকার ভোগ করেনতাকে রাজনৈতিক অধিকার বলা হয়। রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কোনো রাষ্ট্রের একজন নাগরিক নিম্নলিখিত রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করে থাকে : 

(ক) নির্বাচনের অধিকার নির্বাচনে ভোটদান এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার সকল নাগরিকেরই থাকবে। নির্বাচনের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার।


(খ) সরকারি চাকরি লাভের অধিকার : সরকারি চাকরি লাভের অধিকারও একটি মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার। এব মাধ্যমে কোনো দেশের জনগণ শাসন কার্যে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। এ ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রত্যেক নাগরিকই এ অধিকার লাভ করতে পারবে।


(গ) আবেদন করার অধিকার সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে অথবা নাগরিকগণ প্রয়োজনবোধে স্বীয় অভাব ও অভিযোগের প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এককভাবে অথবা যৌথভাবে আবেদন করতে পারবে। 

(ঘ) বসবাস করার অধিকার রাষ্ট্রের যে কোনো স্থানে নাগরিকদেরকে বসবাস করার অধিকার দেয়া হয়। বিদেশিরা এরূপ অধিকার রাষ্ট্রের অনুমোদনের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের এটা একটি মৌলিক অধিকার।


(ঙ) বিদেশে নিরাপত্তার অধিকার : প্রত্যেক নাগরিককেই বিদেশে থাকাকালীন কোনো রূপ অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে ঐ সরকারের নিকট হতে সুবিচার না পেলে স্বীয় রাষ্ট্রের নিকট হতে সাহায্যের দাবি করার অধিকার রয়েছে।

 (চ) সরকারি কাজের সমালোচনা : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিকগণ সরকারি কাজের সমালোচনা করতে পারবে।


অবশ্যই পড়ুন, 

বাংলাদেশের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের তালিকা এবং উৎস অনুসারে সেগুলোর শ্রেণিবিভাগ

জাতি হিসেবে বাঙালির আবির্ভাব



(৩) অর্থনৈতিক অধিকার

কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকগণ নিজেদের অর্থনৈতিক চাহিদা বা অভাব পূরণের জন্য যে সব অধিকার ভোগ করে থাকে সেগুলোকে অর্থনৈতিক অধিকার বলে। নাগরিকদের অর্থনৈতিক অধিকারগুলো নিম্নরূপ : 

(ক) কর্মসংস্থানের অধিকার : জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রত্যেক নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা প্রত্যেক রাষ্ট্রের কর্তব্য। কর্ম লাভের মাধ্যমে নাগরিকগণ অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করে থাকে।


(খ) ন্যায্য পারিশ্রমিকের অধিকার : শুধু কর্মসংস্থান হলেই হয় না নাগরিকগণ যাতে ন্যায্য পারিশ্রমিক পায় সে ব্যবস্থাও রাষ্ট্রকে করতে হবে। পরিবার পালনের প্রয়োজনীয় পারিশ্রমিক লাভ নাগরিকের অর্থনৈতিক অধিকার।


(গ) অবকাশ যাপনের অধিকার কর্মরত নাগরিকদের জন্য অবকাশ ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। অবকাশ  যাপনের পর নাগরিকগণ নতুন উদ্দ্যেম-উদ্দীপনায় কর্ম সম্পাদন করে থাকে এবং অধিক দায়িত্বশীল ও নিষ্ঠাবান হয়। অবকাশ যাপনও নাগরিকদের অর্থনৈতিক অধিকার।


(ঘ) রাষ্ট্রের পোষ্য হওয়ার অধিকার : বেকার, বার্ধক্য ও পঙ্গু নাগরিকদেরকে রাষ্ট্র প্রতিপালন করবে। বেকারত্ব জাতির অভিশাপ। বার্ধক্য ও পঙ্গু জীবন দুর্বিসহ। এমনি ব্যক্তিগণ রাষ্ট্রের পোষ্য হবে। রাষ্ট্র তাদের প্রয়োজনীয় ভাতা দেবে। রাষ্ট্রের পোষ্য হওয়ার অধিকার নাগরিকদের অর্থনৈতিক অধিকার।

অবশ্যই পড়ুন, 

সমাজ গঠনের উপাদান

সামাজিক বিজ্ঞান

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের ভূমিকা


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন