এক মৃত ব্যক্তির আত্ম চিৎকার।


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমতুল্লাহ।

এক মৃত ব্যক্তির আত্ন চিৎকার।





আমার জন্ম হলো এক মধ্যবিত্ত  ফ্যামিলিতে। আমি জন্ম নেয়াতে আমার ফ্যামিলির সবাই খুসি।আমার বাবা মা আমাকে খুব আদর যত্ন করে বড় করলেন।আমার বয়স যখন ৫ বছর হলো, আমাকে আমার বাবা-মা স্কুলে ভর্তি করালেন,আর বললেন আমাকে অনেক ভালো মতো পড়াশোনা করতে হবে এবং ভালো রেজাল্ট করতে হবে।কারন ভালো রেজাল্ট না করলে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে না।

আমিতো মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলে তাই আমাকে নিয়ে স্বপ্ন অনেক আমার বাবা মার।আমিও আমার বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরন করার জন্য ভালো মতো পড়াশোনা করলাম।

আমার লাইফের আনন্দ, খেলাধুলা সব কিছু বিসর্জন দিলাম।ভেবেছিলাম যখন চাকরি করবো, টাকা ইনকাম করবো তখন নিজের লাইফের সব আশা ইচ্ছা পুরন করবো। অবশেষে ভালো একটা সরকারি  চাকরি পেলাম এবং ভালো টাকা উপার্জন  করতে লাগলাম।



কিন্তু চাকরি করার জন্য অবসর পেতাম না।টাকা উপার্জন করার পরেও নিজের আশা সখ ইচ্ছা পুরন করার সময় পেতাম না।পড়ে ভাবলাম এখন টাকা ইনকাম করতে থাকি,বিয়ের পর সব ইচ্ছা পুরন করবো। কিছু দিন পর বিয়েও করে ফেললাম।

কিছু দিন ফ্রি সময় কাটিয়ে আবার যোগ দিলাম অফিসে।অফিসে যোগদেয়ার পর আর ফ্রি সময় পেলাম না।এভাবেই জীবন অতিবাহিত হতে লাগলো। কিছু দিন পর আমার এক ছেলে সন্তান জন্ম হলো। আমার ছেলের বয়স যখন ৫ বছর হলো তখন তাকে স্কুলে ভর্তি করালাম।

আর বাবার মতো আমিও বললাম তোমাকে খুব মন দিয়ে পড়তে হবে ভালো রেজাল্ট করতে হবে।অফিস টু বাসা আর বাসা টু অফিস এভাবেই চলতে লাগলো আমার জীবন। আমার বয়স হয়ে আসলো, আর আমার অফিস থেকে রিটায়ার হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলো।

সেইদিন অবশেষে  চলে আসলো, আজকে আমার অফিসে লাস্ট দিন। অফিস শেষে বাসায় ফিরলাম,আজকে আমি খুব খুসি।রাতে খেয়ে দেয়ে বিসানায় গেলাম ঘুমাতে, আর ভাবলাম যাক অবশেষে ফ্রী সময় পাবো এখন থেকে। সারাজীবন শুধু কাজ কাজ করে কোন দিন আমার সৃষ্টি কর্তার ইবাদত পালন করা হয়নি।

ভাবলাম এখন যেহেতু আমার আর কোন কাজ নেই কাল থেকে আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকবো।এখন থেকে খাবোদাবো ঘুরবো আর ঘুমাবো আর আল্লাহর ইবাদাত করবো। এই ভেবে ঘুমালাম কিন্তু সকালে আর উঠলাম না।ঘুমিয়ে গেলাম চিরনিদ্রায়। সারাজীবন শুধু কাজ কাজ করে নিজের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবেছি, কিন্তু কখনো ভাবিনি পরকালের কথা।


সারাজীবন শুধু দুনিয়াবি বই পড়েছি কিন্তু,কখনো কুরআন শরীফ পড়িনি।সারাজীবন অনেক সময় ব্যয় করেছি কাজ কাজ করে,কিন্তু কোনদিন মহান আল্লাহর ইবাদাত করিনি।দুনিয়ায় কাজ করে অনেক সম্পদ জমিয়েছি কিন্তু এখন আর কোন কাজে আসবে না দুনিয়ার কোন সম্পদ।

আমার বাবা মা আমাকে কখনো শিখায়নি কুরআন, শুধু শিখিয়েছে কিভাবে ভালো রেজাল্ট করতে হয়।আমিও আমার সন্তানদের কুরআন শিখাইনি।শিখিয়েছি শুধু দুনিয়ায় কিভাবে চলতে হয়।কিন্তু দেখাইনি পরকালের জন্য মুক্তির পথ। আজ খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে বাবা দুনিয়া কিছুই নারে,সারাজীবন দুনিয়া নিয়ে পড়ে থাকিস না।

পরকালের কথা ভাবিস।পরকালের মুক্তির পথ ব্যবস্থা করে নিস।কিন্তু বলতে পারলাম না।আমাদের সমাজে ভালো রেজাল্ট, ভালো চাকরি করতে না পারলে সমাজের ভদ্রলোকেরা বলে তোমার জীবন ধংস।কিন্তু কেও নামাজ না পড়লে, আল্লাহর ইবাদাত না করলে বলে না তোমার জীবন ধংস। আমাদের সমাজে শিখানো হয় কিভাবে দুনিয়ায় চলা লাগে,কিন্তু শিখানো হয় না পরকালের মুক্তির।



আজ সব কিছু বুজেও কাওকে কিছু বলে যেতে পারলাম না।আমি এসেছিলাম শুন্য আর চলে যাচ্ছি শুন্য।কোন আমল সংগে করে নিয়ে যেতে পারলাম না।এখন যদি কেও দেখতে পেতো আমার করুন অবস্থা তাহলে কেও আর দুনিয়া নিয়ে পড়ে থাকতো না।এই সমাজ, ক্যারিয়ার, নিয়ে থাকতে থাকতে আমরা আমাদের আসল ঠিকানা ভুলে যাচ্ছি।

এই দুনিয়া আমাদের চিরকাল থাকার যায়গা না।আজ আমি সবাইকে সাবধান করতে চাচ্ছি কিন্তু আমার কথা কেও শুনতে পারছে না।মৃত্যুর যন্ত্রণা পৃথিবীর সব দুঃখ কস্টকে হার মানাবে।আজ আমি চলে যাচ্ছি, তবে একটা জিনিস শিখিয়ে যাচ্ছি সবাইকে এই দুনিয়া চিরস্থায়ি নয়,সবাই একদিন চলে যেতে হবে।তাই সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে।আল্লাহ ছাড় দেন তবে ছেড়ে দেন না।সকলের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। ধন্যবাদ। 


বিঃদ্র ভুল ক্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।


1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন